জিএম জাহিদ হোসেন টিপু :
আল আকছা মসজিদ বা বাইতুল মোকাদ্দেস আমাদের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মসজিস এই কারনে যে এটি পৃথিবীতে নির্মিত ২য় মসজিদ যাহা মসজিদুল হারাম বা কাবা শরীফের পরে নির্মিত হয়। যাহা গুরুত্বের দিক থেকে ৩য় গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ। প্রথম গুরুত্বের দিগ থেকে ১ম কাবা শরীফ, ২য় মসজিদে নববী ,৩য় মসজিদে আল-আকসা।আল্লাহপাক সুরা বনী ইসরাইলে এর গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন।আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির পর ৬২০ খীঃ রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে প্রথমে জিব্রাইল ( আঃ) এর মাধ্যমে বোরাকে চড়ে পবিত্র কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বাইতুল মোকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন।এখানে তিনি নবীরাসুল ও ফেরেস্তাদের সাথে সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি বোরাকে চড়ে উর্ধ্বলোকে গমন করেন। উর্ধ্বভালোকে তিনি সিদ্রাতুল মুন্তাহায় আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। তখন আল্লাহপাক নবীজিকে তার উম্মতদের জন্য ৫০ ওয়াক্ত ফরজ সালাত নির্ধারণ করেদেন।পরে নবীজি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে উম্মতের জন্য ৫ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের হুকুম নিয়ে মিরাজ শেষে পুনরায় মসজিদুল আকসায় অবতরন করেন এবং প্রভাতের পুর্বে বোরাকে চড়ে মক্কায় ফিয়ে যান। হাদিস শরীফে নবীজি (সাঃ) এরশাদ করেন কোন ব্যাক্তি যদি ঘরে সালাত আদায় করে তবে ১টি নেকী পাবে আর ওয়াক্তিয়া মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করলে ২৫ গুন নেকী পাবে,জুম্মা মসজিদে আদায় করলে ৫০০ গুন, মসজিদুল আকসায় এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করলে ২৫ হাজার গুন, মসজিদে নববীতে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করলে ৫০ হাজার গুন এবং কাবা শরীফে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করলে ১ লক্ষ গুন নেকী পাওয়া যাবে ।ইসলামের প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসাকে ঘিরেই ছিলো পরবর্তীতে নবী (সঃ) এর হিজরতের পর পবিত্র কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ায় এর পরিবর্তে কাবা শরীফে কেবলা হিসাবে নির্ধারিত হয়।ধর্মীয় মর্যাদার দিক মসজিদুল আকসা কতটুকু গুরুত্বপুর্ণ তা সহজেই অনুমেয়। হযরত ইব্রাহিম( আঃ) কর্তৃক কাবা ঘর নির্মানের ৪০ বছর পর তাঁহার পুত্র হযরত ইসহাক( আঃ) এর পুত্র হযরত ইয়াকুব (আঃ) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে আল আকসা মসজিদ নির্মান করেন।খলিফা উমর রাঃ এর খেলাফত কালে ৬৩৮ খীঃ বাইতুল মোকাদ্দাস জেরুজালেম সহ ফিলিস্তিন সম্পুর্ন রুপে মোসলমানদের অধীনে আসে।১০৯৬সালে খৃষ্টান ক্রুসেডরা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করে নেন। আবার ১১৮৭ সালে মুসলীম বীর সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী (রাঃ) পুনরায় জেরুজালেম মুসলিমদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসেন। দীর্ঘ বহুবছর পর তুরুষ্কের শাসক সুলতান আঃ হামিদের কাছে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে বসবাসের অনুমতি চায় কিন্তু দুরদর্শি সুলতান ইহুদীদের দুরভিসন্ধি মুলক প্রস্তাবে রাজি হননি।১৯১৭ সালে বৃটিশরাা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে এবং ১৯২০ সালে পুনরায় পুর্নাঙ্গ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। অল্পসময়ের মধ্যেই ইহুদিরা আবার ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসবাস স্থাপন করেন। মুসলিমদের পবিত্র ভুমিতে ইহুদী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের সাথে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দাঙ্গা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিনত হয়।এ সময় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে ইজরাইল কে মুসলমান ও ইহুদীর মাঝে ভাগ করে দেয়। এর ফলে ১৯৪৮ সালে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে অবৈধ ইজরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে অদ্যবধী ইহুদীদারা মোসলমানদেরকে হত্যা ,গুম ,নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে ৷ সম্প্রতি পবিত্র রমযান মাসে মসজিদুল আকসায় ইবাদতরত মুসলিমদের উপর ইজরাইলী সন্যদের বর্বরোচিত হামলায় সমগ্র বিশ্বের মুসলিম সমাজ নিন্দা ও প্রতিবাদে ফেটে পড়লেও বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর নিরবতার হেতু বুঝা যাচ্ছে না। তাদের কাছে মসজিদুল আকসায় হামলার প্রতিবাদের চেয়ে মোদীর আগমন ঠেকানোকে বেশী ঈমানি দায়ীত্ব মনে করে ৷ তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইজরাইলের এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নির্যাতিত মোসলমানদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। বাতিসা ইউনিয়নের জনগনের পক্ষ থেকে আমি এই নির্যাতনের তীব্রনিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
আল্লাহ ফিলিস্তিনের সকল মুসলিমকে ইহুদী নির্যাতন থেকে রক্ষা করুক। আমীন