সোহেল রানা :
ঢাকার আশুলিয়ায় নকল স্যালাইন ও ভারতীয় ইনো তৈরীর কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। গোপালগঞ্জ জেলার বড় একটি প্রতারক চক্র দেশের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট আশুলিয়ার নবীনগর সংলগ্ন এলাকা ব্যাবহার করে দীর্ঘদিন যাবত সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির নাম ও লোগো ডিজাইন ব্যাবহার করে ওরস্যালাইন-এন ও ভারতীয় কোম্পানির ইনো তৈরি করে বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করে আসছিল। সেই কারখানায় অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা পর্যন্ত আশুলিয়ার নিরিবিলির ফাল্গুনী ইস্ট্রান হাউজিং এলাকায় কালাম মৃধার মালিকানাধীন বিজি ফ্রেস ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড নামের ওই নকল কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: আব্দুর রশিদ।
আটক ব্যাক্তির নাম মো: মিরাজুল ইসলাম। তিনি ওই কারখানার কথিত রসায়নবিদ এবং গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার টিহাটি গ্রামের মৃত মহির আলী মোল্লার ছেলে। পড়ালেখায় অষ্টম শ্রেণিতে অকৃতকার্য ।
পুলিশের অভিযানে আটক হওয়া মিরাজুল ইসলামের সাথে কথা হয় দৈনিক তৃতীয় মাত্রার। তিনি প্রতিবেদককে জানান, কারখানাটির মূল মালিক গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার লিপন গাজী (৪০) । এছাড়াও একটি অংশের ব্যাবসায়িক পার্টনার মিজানুর রহমান জাহিদ ও মোঃ সাদেক।
তারা দীর্ঘ দিন যাবৎ ক্ষতিকর রাসায়নিক, আটা, ময়দা, চিনি, বরিক এসিড, কাপড়ের রং,খাবার সোডা,লেবুর স্মেইল, মশা মারার এ্যরোসল ও লবণ মিশিয়ে এই কারখানায় স্যালাইন ও ইনো তৈরি করে দেশের উত্তরবঙ্গে ও দক্ষিণ বঙ্গের কয়েকটি জেলায় ডিলার নিয়োগ করে বিভিন্ন মুদি দোকান ও ফার্মেসিতে বাজারজাত করে আসছিল। শুধু তাই নয় রাজধানীসহ সাভার ও আশুলিয়ায় এই পণ্য সাপ্লাই করা হতো।
বিষয়টি টের পেয়ে যায় আসল কোম্পানি কতৃপক্ষ। পরে আমাদের ধরতে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। এ সময় তাকে রেখে আরেক অল্প শিক্ষিত কথিত রসায়নবিদ মুত্তাকিন(২৬), সুপার ভাইজার গিয়াস উদ্দিন (৩৮), একাউন্স ম্যানেজার সোহেল রানা (৩৫) কৌশলে পালিয়ে যায়। এখন তো আমি ধরা পড়ে গেছি।
মিরাজুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, এখানে ৮ জন নারী সহ ২৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করেন। তাদের সহ আমার ১৮ দিনের বেতনের কি হবে .? যারা এই কারখানা থেকে মাসিক চাঁদা নিত তারা তো আসলো না। তাদের সাথে কারখানা মালিকের বন্ধু একজন স্থানীয় চেয়ারম্যান, একজন ইউপি সদস্য ও একজন ভুয়া সাংবাদিক জড়িত আছে বলেও জানান তিনি। তবে চাকরির ভয় ও থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার আশা নিয়ে ওই মুহূর্তে নাম গুলো এড়িয়ে যান তিনি।
সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি) পশ্চিম জোনের সিনিয়র সেলস্ ম্যানেজার মোঃ গোলাম রিয়াজ জানান, আমরা গোপন সূত্রে জানতে পারি এখানে নকল ভাবে আমাদের কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে ওরস্যালাইন-এন তৈরি করা হচ্ছে।
পরে রবিবার সন্ধ্যার দিকে কারখানাটির সামনে এসে আমরা ভেতরে প্রবেশ করতেই বিপুল পরিমান স্যালাইন তৈরির কাঁচা মাল ও আমাদের কোম্পানির মোড়ক দেখতে পাই।
তারা শুধু স্যালাইন নয় ভারতীয় পন্য ইনোও নকল ভাবে মোড়ক জাত করে বাজারে বিক্রি করতো। পরে পুলিশকে আমরা খবর দেই। পুলিশ এসে একজনকে আটকসহ মালামাল জব্দ করে।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার স্মৃতিসৌধ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই আব্দুর সবুর খান বলেন, সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির কর্মকর্তাদের খবরে ফাল্গুনী ইস্ট্রান হাউজিং এলাকায় কালাম মৃধার মালিকানাধীন টিন সেডের বিজি ফ্রেস ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড নামের একটি নকল কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে একজনকে আটক করে সমস্ত মালামাল জব্দ করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।