বিশেষ প্রতিবেদক :
১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়। এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ২২.৯৪ শতাংশ। জালভোট দেওয়ার অভিযোগ তিনজনকে আটক করা হয়।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এটা ঠিক চট্টগ্রামের সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে স্থানীয় সরকারের সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোটারদের সঙ্গে ইভিএমের পরিচিতি করার কাজ চলমান। ভোটগ্রহণের দুদিন আগে থেকে কেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত থাকবে। আমরা প্রত্যাশা করছি ইভিএমে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ হবে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটের হার কম হওয়ায় নির্বাচন কমিশন বলেছে, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হয়নি বলে উপস্থিতি কম; চট্টগ্রামে তো উভয় দল ছিল, সেখানে ভোটার উপস্থিতি কম কেন? আসলে আস্থাহীনতার কারণেই ভোটাররা কেন্দ্রে যান না। মানুষ মনে করেÑ ভোট দিলেও যা না দিলেও তাই। এ কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে যান না।
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএমের ওপর মানুষের আস্থা নেই। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার কাছে ভোটারের অনুপস্থিতিতে ভোট দেওয়া সুযোগ রয়েছে, জাতীয় নির্বাচনেও ছিল। মানুষ এটা জানেন। সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন ও ইভিএমের ওপর মানুষের আস্থাহীনতার কারণে কেন্দ্রে যেতে চান না। ঢাকা সিটি নির্বাচনেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।
গত ২৮ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, ত্রুটিমুক্ত নির্বাচন করার জন্য আমরা ঢাকার আসন্ন দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করব, যাতে মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে পুরোপুরি ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ঢাকা-৬ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩১৫ জন। ভোট দিয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৮৮৯। ঢাকা-১৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৫ জন। ভোট দিয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ৪৯৪ জন।
আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকার দুই নির্বাচনের সব কটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এবারই প্রথম রাজধানীর প্রায় ৫০ লাখ ভোটারের সবাই মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দেবেন। এর আগে আজ ১৪ জানুয়ারির মধ্যে ইভিএমগুলো দুই সিটির নির্ধারিত পয়েন্টে পৌঁছে দেওয়া হবে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রথমবারের মতো পুরো ঢাকা মহানগরে একসঙ্গে ইভিএমে ভোট করতে তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। দুই সিটিতে ২ হাজার চারশর বেশি কেন্দ্র রয়েছে। আর ১৪ হাজার ৬শর মতো ভোটকেন্দ্র থাকছে। তাই সব মিলিয়ে আমরা রিজার্ভসহ ৩০ হাজার ইভিএম রাখার পরিকল্পনা করেছি, যাতে করে কোথাও ফেল না করে। প্রতি কেন্দ্রে ব্যাকআপ হিসেবে একটি করে ইভিএম রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, দুই সিটিতে ইভিএমে ভোটের জন্য ১৯টি পয়েন্ট থেকে প্রশিক্ষণ, ডেমোনেস্ট্রেশন, মক ভোটিং ও ভোটকেন্দ্রে বিতরণের জন্য ইভিএম রাখা হবে। এর মধ্যে উত্তরের ইভিএম থাকবে ৮টি পয়েন্টে, আর দক্ষিণে ১১টি পয়েন্টে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটিং মেশিনে আঙুলের ছাপ না মেলা এক শতাংশ ভোটারকে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা পাবেন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। তবে আঙুলের ছাপ না মেলা ভোটারের সংখ্যা যদি বেশি হয়, তখন নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ওই ক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ১৮টি। মোট ভোটার ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ৩৪৯টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। মোট ভোটার ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ১২৪টি।