এইচ এম বাবুল আক্তার :
বিদায় কথাটি বেদনা বিধুর, নয়নে অশ্রুঝরা, মন চাহে নাতো দিতে যে বিদায়, হৃদয়ে বেদনা ভরা, বিদায়ী সানাই বাজিতেছে দ্বারে, মানবিনা সেতো বাঁধা,মায়ার বাঁধনে বাঁধিয়া রাখিতে,বৃথাই অশ্রু সাধা। একজন সরকারি কর্মকর্তার বদলীতে মনিরামপুরের সাধারন মানুষের মাঝে যে ইতিবাচক অলোচনা শুরু হয়েছে ওনাকে ঘিরে,সচারচর অনেকের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। সাধারন মানুষের মাঝে তার এ জনপ্রিয়তার কারন খুজে বের করার চেষ্টা করেছি আজকের এ প্রতিবেদনে। যে মানুষটার বিদায়ে এত আলোচনা তিনি হলেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সদ্যবিদায়ী সহকারী কমিশনার(ভূমি)হরেকৃষ্ণ অধিকারী। তিনিবিগত২০২১সালের ১৯ জুলাই মণিরামপুর উপজেলায় সহকারী কমিশনার(ভূমি) হিসাবে যোগদান করেন। দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জনগণের অভাব-অভিযোগের শেষ নেই। তবে তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম এ কর্মকর্তা। যোগদানের পর নিজের সরকারি দপ্তরকে করে তুলেছেন জনবান্ধব এক প্রতিষ্ঠান। যেখানে ভূমি অফিস মানেই ভোগান্তি, টাকার ছড়াছড়ি; সাধারণ মানুষের হয়রানি আর অসহায়তার অভিযোগ। সেখানে ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতামূলক ও ঘুষবিহীন সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করে জনগণের আস্থা ও প্রিয় মানুষ হয়ে ওঠেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) হরেকৃষ্ণ অধিকারী। তার যোগদানের পর থেকেই বদলাতে থাকে ভূমি অফিসের দৃশ্যপট। সেবা প্রত্যাশীরা যেন দালালের কারণে হয়রানির শিকার না হন এজন্য নিজের কক্ষে জনসাধরণের যাতায়াত নির্বিঘœ করেন। যে কোনো প্রয়োজনে সরাসরি তার কাছে আসতে শুরু করেন সেবা প্রত্যাশীরা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে হতদরিদ্র গৃহহীন পরিবারের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ প্রকল্পে কঠোর নজরদারিতে প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে খাস জমি বন্দোবস্ত ব্যবস্থা করিয়েছেন। অফিস টাইম সকাল ৯টা হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত থাকলে তিনি রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করতেন। বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধার দায়িত্ব পালন করেছেন। মণিরামপুর উপজেলাতে জনগনের সেবা দিতে দিনরাত কাজ করে গিয়েছেন। বিশেষ করে মণিরামপুর উপজেলার সরকারি খাস জমি উদ্ধার, মিসকেস ,নামজারি জমাভাগ খারিজ সংক্রান্ত মামলা শুনানির মাধ্যমে খুব কম সময়ে সমস্যা নিষ্পত্তিকরণ, ভূমি নিয়ে স্থানীয় বিরোধের অবসান, স্বচ্ছতার সঙ্গে ভূমি সেবা প্রদান, সহজীকরণ, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ভেজালবিরোধী, সহ সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করে জমিসংক্রন্ত সব ধরনের সেবাগ্রহীতার অধিকার নিশ্চিত করে সবার কাছে ভূমি অফিসকে সহজ,স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। রেকর্ড পরিমাণ ভূমির নামজারি করেছেন তিনি। এমন অসংখ্য ভালো কাজ করে মণিরামপুরে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে সবার প্রিয় কর্মকর্তা হয়ে উঠেছিলেন। দীর্ঘকাল ধরে ভূমি অফিসের সীমানার পশ্চিম দিকে বসবাসরত স্থানীয় জনগন ভূমি অফিসের ভিতর দিয়ে চলাচল করতো। ৩০ বছর ধরে অনেক চেষ্টার পরও সে রাস্তা বন্ধ করা যায়নি। অবশেষে তাদের জন্য বিকল্প রাস্তা তৈরি করে, অফিসের সীমানা ওয়াল দেওয়া সম্ভব করিয়েছেন। একটা সময় ভুমি অফিসের ভিতর দিয়ে বিদ্যুতের মেইন লাইন যাওয়ায় অফিস চত্তরে তারের জট পাকানো ছিলো, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে অফিসের ভিতরের ৩টি খুটি অপসারন করে অফিস ক্যাম্পাসটা তারের জটমুক্ত করিয়েছেন।মণিরামপুর উপজেলা ভূমি অফিস জরাজীর্ণ অগোছালো চেহারা পাল্টে এখন মডেল দ্বিতল ভবনে রুপান্তরিত হয়েছে। এখন দুর থেকেই বুঝা যায় পরিপাটি সাজানো-গোছানো একটি ভুমি অফিস। অফিস ভবনের সামনে চোখে পড়বে নতুন নির্মিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, সেবাপ্রার্থীদের বসার গোলচত্বর সহ মনরোম পরিবেশ। প্রধান ফটক, বাউন্ডারি ওয়াল, সেবাপ্রার্থীদের বসার গোলঘর, গাড়ির গ্যারেজ, সংযোগ সড়ক নির্মানসহ আরো বেশ কিছু কাজ শেষ হয়েছে এ সময়ে । ২০২১-২২ অর্থবছরে এ দপ্তরে জমা পড়া নামজারির ৭ হাজারের বেশি আবেদনের সব কটি নিষ্পত্তি করেছেন তিনি। এ ছাড়া গত বছরের ঝুলে থাকা ৪ হাজার নামজারির আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন । শুধু নামজারি নয়, অনলাইনে খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে উপজেলার শতভাগ ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩৯ টি হোল্ডিং অনলাইনে আপলোড করেছেন তিনি। নিয়মিত তদারকি ব্যবস্থা এবং সরাসরি অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত সমস্যা সমাধান করতেন তিনি।
ভূমি অফিস এলাকার বাসিন্দা সেখ আবুতাহের বলেন, আমরা নবনির্মিত(ভূমি) অফিসের পিছনে দশটি পরিবার দির্ঘদিন যাবত বাস করে আসছি। আমার বয়স ৬৫ আমাদের এখানে যাতায়াতের রাস্তাটা নিয়ে অনেক সমস্যা ছিলো এই রাস্তা নিয়ে কোর্টের থেকেও রায় ছিলো। আমি এ রাস্তার ব্যাপারটা নিয়ে অনেকের সাথে কথা বলেছি কিন্তু সমাধান পায়নি। তবে বর্তমান স্যার আসার পর এ রাস্তার সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান করিয়েছেন। আমরা স্যারের কার্য্যক্রমে সন্তুষ্ঠ।ওনার মত ভদ্রলোক আমি আর কোথাও দেখিনি। মণিরামপুর ভূমি অফিসে সেবা নিতে আশা রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা বিগত সময়ে ভূমি অফিসে বিভিন্ন কাজে এসে সহজে কাজ পায়নি। বরং দালালদের মাধ্যমে কোন কাজ নিতে খরচ করতে ও ঘুরতে হয়েছে অনেক। এসিল্যান্ড হরেকৃষ্ণ অধিকারী স্যার যোগদানের পর থেকে ভূমি অফিস দালাল, ঘুষ ও দূর্নীতি মুক্ত হয়েছে । মণিরামপুরবাসির জন্য এসিল্যান্ড হরেকৃষ্ণ অধিকারী যে সততার নজীর স্থাপন করেছেন অতীতে তা কেউ পারেনি বলে অনেকেই মনে করেন। সবাই জানে ভূমি অফিস মানেই দুর্নীতির আখড়া, টাকা ছাড়া কাজ হয় না। টাকা না দিলি কতো ঘুরা-ঘুরি। কিন্তু তিনি যোগদানের পর এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছিল এই অফিসটি। এসিল্যান্ড স্যারের কাছে গেলেই বলতো কারো টাকা দিও না, সরকারি ফি দিয়ে ফরম জমা দিয়ে যান, কাজ হয়ে যাবে। ঠিক তাই হয়ে গেছে। এত কর্মট অফিসার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অত্র অফিসে যোগদানের পর থেকে অফিস কার্যক্রম চালাতেন একটা টিনশেড ঘরে বসে। সেখানে নথিপত্রের চাপে অফিস রুমে ছিলোনা বসার যায়গা। সেই জরাজীর্ণ পুরাতন টিনশেড ভবন হতে আজ নান্দনিক দ্বিতল ভবনে অফিসের কার্যক্রম চলছে।