Doinik Bangla Khobor

ওসি প্রদীপের পথেই হাঁটছেন ওসি ওসমান গণি আসামীদের নির্যাতনসহ থানায় অনিয়মের অভিযোগ

অনুসন্ধানী প্রতিবেদক :
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ঘটনা।মাত্র ৩৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তে দেখা যায়, একটি কক্ষের এক কোনায় মেঝেতে শুয়ে কাতরাচ্ছে কাপড় দিয়ে চোখ বাঁধা এক ব্যক্তি। পাশেই ভয়ে কাঁপছেন বসে আরও দুজন। তাঁদেরও চোখ কাপড়ে বাঁধা এবং হাতকড়া পরানো। যে কক্ষটির কথা বলা হচ্ছে সেটি কোনো টর্চার সেল নয়, তা হলো টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির অফিসকক্ষ।

উল্লেখ্য গত ২০২০ সালের জুলাই মাসে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর দেশব্যাপী তুমুল আলোচনায় সমালোচনার ঝড় উঠে টেকনাফ থানা পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। থানাটিতে মাঝে বছর খানেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কমে এলেও বর্তমান ওসি ওসমান গণি জয়েন্ট করার পর থেকে আবারও টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গণি ও থানার কর্মরত পুলিশের বিরুদ্ধে একটার পর একটা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। সরেজমিনে টেকনাফ এর স্থানীয় বিশেষ কয়েকটি সূত্র জানা যায়, বর্তমান সময়ে টেকনাফ থানায় পুলিশ হেফাজতে মারধর,মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় ঘুষ বানিজ্য সহ নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। বর্তমান ওসি ওসমান গনির কর্মকান্ডে বুঝা যায় তিনিও যেন ওসি প্রদীপের পথে হাঁটছেন।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে ৩৯ সেকেন্ডের ভিডিও চিত্রের বিষয়ে জানা যায় চলতি বছরের ২২ এপ্রিল রাত আনুমানিক ২টায় তিন ব্যাক্তিকে চোখ বেঁধে টেকনাফ থানায় ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। ঐ দিন ওসি ওসমান গণির নির্দেশে থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। পরদিন সকালে ওসির কক্ষে এনে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চোখ বেঁধে ফেলে রাখা হয় তাদের।  পরে এক মাস আগের একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয় তাঁদের। ওই তিন ব্যক্তির দুজন হলেন মো. আব্দুর রহিম (১৯) ও আব্দুল আমিন (১৬)। সম্পর্কে তাঁরা আপন ভাই। অন্যজন ওমর ফারুক (২৪)। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁদের প্রথমে কক্সবাজার আদালতে তোলা হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় কারাগারে।

ঐ তিন আসামীর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এপ্রিলে আটককৃত তিন জনের মধ্যে একজন হলো ওমর ফারুক,তার বাড়ি টেকনাফের অলিয়াবাদ এলাকায়। সরেজমিনে অনুসন্ধানে আরো জানা ওমর ফারুক কক্সবাজার সদরের নাজিরারটেক এলাকায় থাকতেন। ওমর ফারুক, আব্দুল আমিন,আব্দুল রহিম এই তিনজনকে  টমটম চালক মোস্তাক আহমেদ হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন টেকনাফ থানা পুলিশ। গত ৬ মার্চ-২০২৪ ইং তারিখে টেকনাফের অলিয়াবাদে খুন হয়েছিলেন টমটম চালক মোস্তাক।

টমটম চালক মোস্তাক হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের স্বজনরা জানান, যেদিন রাতে পুলিশ এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়। পরের দিন রাতে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। টাকা না দেওয়ায় তাদের তিনজনকে বেধড়ক মারধর করা হয় এবং রাতভর হাত পা চোখ বেঁধে ওসির কক্ষেই ফেলে রাখা হয়।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়,টেকনাফ থানার পাশে ডিএসবি অফিস। এর পাশে একতলা একটি ভবন। সেখানে একটি কক্ষে থাকেন থানার উপ-পরিদর্শক মো. সোহেল। তাঁর কক্ষের পাশে আছে একটি টর্চাল সেল। অভিযোগ আছে, ওসির নির্দেশে সেখানে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করেন উপ-পরিদর্শক সোহেলসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে নিরপরাধ ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি মাদককারবারি,অপরাধীরাও আছেন। আরো জানা যায়, ওসি ওসমান গনি টেকনাফ থানায় যোগ দেওয়ার পর থেকে এই টর্চার সেলের সন্ধান ও মানুষকে ধরে এনে জিঙ্গাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হয় বলে স্হানীয় প্রত্যেক্ষদর্শী ও ভোক্তভোগীরা জানান।

এছাড়াও স্হানীয় লোকদের ইয়াবা কারবারি সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দিবে বলে হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায়। মাদককারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়। থানায় সেবা নিতে আসা মানুষদের হয়রানি। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ দিতে হয়রানির শেষ নেই। সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলেও টাকা ছাড়া কোন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয় না। এবং পিসিপিআর এ মামলা আছে এমন আসামীদেরকেও মালমা নিস্পত্তি ছাড়া মোটা অংকের টাকা রফার বিনিময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ সনদ দেওয়া হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির সাথে দেখা করতে গেলে  তাকে তার অফিসে পাওয়া যায়নি। পরোক্ষনে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টি গুরুত্বই দেননি।

টেকনাফ থানার ওসি ওসমান গনির বর্তমান কর্মকান্ড নিয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে পরের সংখ্যায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে।