যদি ভুল না হয় তবে কচুপাতায় পানি আর কর্মক্ষেত্রে সাংবাদিকের একই দশা বললে বেশি হবেনা। কচুপাতার টলমলে পানি আর গণমাধ্যমের চাকরী একই চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত সাংবাদিক-কর্মচারী চাকরিচ্যুতের ঘটনা দেশের মিডিয়াঙ্গনে ডালভাতের মত। মিডিয়াঙ্গনে মানবিকতার যেন বালাই নেই। সম্পাদকীয় দপ্তরে থাকা ইটপাথরে গড়া মানুষগুলো সাংবাদিক-প্রতিনিধি ও কর্মচারীদের ওপর ষ্টীমরোলার চালাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
যার প্রমান গত ২৩ এপ্রিল আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার ২১ সাংবাদিক-কর্মচারীকে তাৎক্ষণিক নোটিশে ছাটাই দেশে গণমাধ্যমের চরম লঙ্ঘন। এদিকে এসএ টিভি, সারাবাংলাসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছাটাই চলছেই…।
চলমান করোনাকালে সরকারের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা কোথাও কোন প্রতিষ্ঠানে কোন কর্মচারী ছাটাই করা যাবেনা। এদিকে তথ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে ডিএফপি থেকে পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন পরিশোধের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে পত্রিকার মালিক-সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকরা মহামারী করোনায় কষ্ট না পান। সেখানেই আহছানিয়া মিশন পরিচালিত পত্রিকা আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকাটি ২ /৩ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রেখে ২১জনকে চাকরীচ্যুত। ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই ওইসকল রক্তচোষাদের।
একদিকে করোনা, মাহে রমযান পরবর্তী ঈদ। এই মূহুর্তে আরেকটি খবর আমাদেরকে কড়া নাড়ছে। খবরটি হলো জিটিভির হেড অব প্রডাকশন হাসিবুর রেজা কল্লোল, প্রডিউসার রাশেদ, প্রডিউসার জিয়া এবং নিউজরুমের দুইজন; বাকিরা ক্যামেরাপার্সন। মহামারী করোনা এবং চলমান রমযানের মধ্যে চাকরিচ্যুত করলেন মালিকপক্ষ। তবে কী কারনে চাকরিচ্যুত করা হলো তা জানা যায়নি। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে যেকোন মূহুর্তেই সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা যায়। যে পেশাটি কেবল মানুষের অধিকার ও মানবিকতার জন্য লড়াই করে। কিন্তু নিজ ঘরেই তারা নির্যাতিত, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় বারংবার।
গণমাধ্যমে কোন আপীল চলেনা। কচু পাতার পানি = সাংবাদিকতা এককথা।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল নামক জড়ো প্রতিষ্ঠানটি আজ অকম্যর্ন বুড়ো ঘোড়ায় পরিনত হয়েছে। এটির পরিচালনা পর্ষদেও রয়েছে কিছু মিডিয়া মোড়ল। এখানটিতে মফস্বলে থাকা বড় অংশের প্রতিনিধিদের পক্ষে কথা বলারমত কোন প্রতিনিধি নেই। যার ফলে ১৯৭৪ সাল থেকে জাতিরজনকের হাতেগড়া প্রতিষ্ঠানটি সাংবাদিকদের কোন কাজে আসছেনা। যেমনটি আইনজীবীদের জন্য বার কাউন্সিল একটি শক্তিশালী মহিরুহ প্রতিষ্ঠান। যেকোন আইনজীবীর বিরুদ্ধে বিচার বার কাউন্সিলেই হয়ে থাকে। সারাদেশের কোন আইনজীবীর বিরুদ্ধে কোন কোর্টে কিংবা থানায় মামলা নেই। কিন্তু একজন বিচারপতি ও সচিব পদমর্যাদা সর্বস্ব প্রেস কাউন্সিল থাকা সত্বেও হাজারো সাংবাদিক বিভিন্ন মামলার যাতাকলে আজ নিষ্পেষিত, ক্ষতবিক্ষত। অথচ প্রেস কাউন্সিলের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনা।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম সারাদেশের পেশাদার সাংবাদিকদের তালিকা, সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে যুগোপযোগী আইন প্রণয়নসহ ১৪ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে সাংবাদিকের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, পেটের ক্ষুধা নিভৃত হয়ে পেশার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। আসুন, বিএমএসএফ ঘোষিত ১৪ দফা বাস্তবায়নে সরকার ও গণমাধ্যমগুলোকে বাধ্য করি।
আগামি ১-৭ মে ৪র্থবারের মত বিএমএসএফ'র উদ্যোগে নিজস্ব গন্ডিতে উদযাপিত হবে জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহ ২০২০। বিগত ৩ বছর ধরে বিএমএসএফ'র ডাকে দেশব্যাপী জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
আসুন, জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে সরকারের কাছে গণদাবি তুলি। নিজেদের পেশাটিকে সমুন্নত রাখতে আমরা আন্তরিক হই। আমরা সচেতন হই। আমরা সাহসী হই। আমরা স্বোচ্চার হই।
সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালাটি প্রণীত হলে একজন সাংবাদিক তার কর্মস্থলে কচুপাতার ওপর পানি নয় বরং ইস্পাত কঠিন অবস্থান তৈরী হতো। আর তাই এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজন সাংবাদিকদের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা।
জিটিভির মালিক শোনা গেলো বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), এমপি।
তিনি গাজী গ্রুপের কর্ণধার এবং দেশের প্রথম কাতারের শিল্পপতিদের একজন। কোন বিচার কিংবা প্রতিকার কি পাইবে চাকরীচ্যুত সাংবাদিকরা!
আহমেদ আবু জাফর, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম-বিএমএসএফ, কেন্দ্রীয় কমিটি