মতিন খন্দকার টিটু :
কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় বগুড়াতে শুরু থেকে জেলা পুলিশের কর্মকান্ড দেশব্যাপী নজর কেড়েছে সকলের। অদৃশ্য এক মহামারী করোনা মোকাবেলায় বগুড়াতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার পাশাপাশি সকল ধরণের মানবিক কাজে সম্মুখসারিতে রয়েছে জেলা পুলিশের সদস্যরা আর সেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে বগুড়া সদরে করোনা মোকাবেলায় নিজেদের দৃশ্যমান ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা যা প্রশংসীত হচ্ছে সর্বমহলে।
ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে প্রথম দিকে সাধারণ মানুষের মাঝে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে রাস্তায় রাস্তায় প্রচার মাইক নিয়ে ছুটে চলা, প্রবাসী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ফেরত সকলের হোম কোয়ারান্টাইন নিশ্চিত করা, সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাঘুরি বন্ধ করাসহ নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি ও ত্যাগ দিয়ে কাজ করেছে এই ফাঁড়ির সদস্যরা। পরবর্তীতে বগুড়া যখন করোনার মারাত্মক ঝুঁকিতে পরে গেল এবং জেলা প্রশাসন থেকে পুরো জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয় তখন থেকে শুরু হয় নতুন আরেক পথচলা।
করোনা দুর্যোগে সদরে সম্মুখসারিতে থেকেই নুন্যতম কিছু স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিয়ে সাধারণ মানুষকে ঘরমুখী করতে মাঠে নামে তারা। শুধু তাই নয় নিজেদের অর্থ এবং বিভিন্ন মাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করে অসহায় ও কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে এবং করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে গোপনে খাদ্যসামগ্রীও পৌঁছে দিয়েছে শফিকুল ইসলামের টিমের পুলিশ সদস্যরা। করোনা দুর্যোগে মানবিক এই কর্মকান্ডসমূহ ছাড়াও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই সময়েই সদরে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফুলবাড়ি এলাকায় ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের প্রায় ২০ হাজার নাগরিক নিবন্ধন ফরম পূরণ, জনবান্ধব পুলিশিং কার্যক্রম এর অংশ হিসেবে সচেতনতার বার্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে উঠান বৈঠকের আয়োজন,
করোনা দুর্যোগের মাঝে সড়কে পরে থাকা অবহেলিত মানুষগুলোকে তুলে সেবাযত্নের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে নিজেদের ফাঁড়ি এলাকায় নানাধরণের বৃক্ষরোপন এবং পরিকল্পিত পাকিং ব্যবস্থা করার মাধ্যমে করা হয়েছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ, জনবান্ধব পুলিশিং কার্যক্রম বৃদ্ধিতে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিজেদের কার্যক্রম এবং সেবা প্রদানের মাধ্যম তুলে ধরাসহ বর্তমানে জেলায় যেকোন নির্মাণে চাঁদাবাজি বন্ধে জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফের জিরো টলারেন্স ঘোষনা বাস্তবায়নেও সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা দেখিয়েছে এই পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরাই।
ইতিমধ্যেই এই ফাঁড়ি এলাকার প্রায় ১ শতাধিক এরও বেশী নির্মাণাধীণ বাড়ি/ভবনে তারা ঝুলিয়ে দিয়েছে জেলা পুলিশের পর্যবেক্ষনের ব্যনার। উল্লেখ্য, উক্ত ফাঁড়িতে ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম যোগদানের পর মাটিডালি এলাকায় যানযট নিরসনসহ ফাঁড়ি এলাকার ব্যস্ততম সড়কগুলো থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদকরণের মাধ্যমে পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে।
তবে উক্ত ফাঁড়ির সবচেয়ে বড় যুদ্ধ ছিলো এই ফাঁড়ির আওতাধীণ রাজাপুর ডাকুরচক আমতলা এলাকায় গড়ে উঠা অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা যা দীর্ঘ ২০ বছর যাবত কৃষি জমি নষ্ট, নদী দখল, শব্দদূষণ, পরিবেশের ক্ষতিসহ অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরির মধ্য দিয়ে চলমান ছিল নানারকম খুঁটির জোর ব্যবহার করে। যা শক্তহাতে এলাকার মানুষকে সাথে নিয়ে ধারবাহিক অভিযানের মাধ্যমে জেলা পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে তারা যা অনেকের কাছেই এখনো অবিশ্বাস্য ।
বর্তমানে চলমান সকল কার্যক্রম প্রসঙ্গে উক্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, জেলা পুলিশ সুপারের সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনায় তাদের সকল কাজে সর্বদা সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী এবং সদর থানার অফিসার ইনচার্জ। দায়িত্ব পালনকালে ইতিমধ্যেই তার ফাঁড়ির ৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল যার মাঝে বর্তমানে সুস্থ হয়েছেন ৫ জন। বর্তমানে ১৬ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে তাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে তবে দেশের এই ক্রান্তিকালে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেশমায়ের একজন সন্তান হিসেবে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে তিনি কাজ করে যাবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন।