কানে বাংলাদেশের জয়ধ্বনি

বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক :
ভূমধ্যসাগরের তীরে কান সৈকতে বাংলাদেশের জয়ধ্বনি উঠল। সম্মানজনক কান চলচ্চিত্র উত্সবের অফিশিয়াল সিলেকশনে প্রদর্শিত প্রথম বাংলাদেশি ছবির গৌরব অর্জন করল আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। ফলে ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হলেন এই ছবির কলাকুশলীরা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় অর্জন এটাই।

৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের আঁ সার্তে রিগা বিভাগে দর্শকদের মুগ্ধ করেছে নারীকেন্দ্রিক গল্প নিয়ে নির্মিত “রেহানা মরিয়ম নূর”। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিচালক, প্রযোজক ও পেশাদার চলচ্চিত্রকর্মী ও সাংবাদিকরা এটি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গল্প, অভিনয়, চিত্রগ্রহণ, শব্দসহ সব শাখায় মুন্সিয়ানা দেখিয়ে অভিনন্দনে ভেসেছেন ছবিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই। পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের সাল দুবুসিতে বুধবার কান উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সকাল সোয়া ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা ১৫ মিনিট) ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দর্শক সমাগম হতে থাকে সাল দুবুসিতে। ঘড়ির কাঁটা ১১টার ঘরে যেতেই উপচে পড়া ভিড় জমে যায় ফটকে। ছবিটি দেখতে প্রত্যেককেই আগে থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়েছে। প্রদর্শনী শুরুর আগে সাল দুবুসির সামনে লালগালিচায় একসঙ্গে দাঁড়িয়েছেন সাদ ও তার ছবির কলাকুশলীরা।

শুরুতে সাল দুবুসির মঞ্চে আসেন কান উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো। তিনি জানিয়ে রাখেন, দর্শক সারিতে উপস্থিত আছেন এবারের আসরের আঁ সার্তে রিগা বিভাগের বিচারকদের সভাপতি আন্দ্রেয়া আর্নল্ড। এরপর একে একে আমন্ত্রণ জানানো হয় সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমি চুয়া, নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন এবং পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদকে। পুরো প্রেক্ষাগৃহে তখন দর্শকদের করতালি। ছবি দেখা শেষে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছে।

মঞ্চে ওঠার পর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের হাতে মাইক্রোফোন ধরিয়ে দেন থিয়েরি ফ্রেমো। আবেগাপ্লুত সাদ বলেন, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এখানে আসতে পেরেছি! আমাদের জন্য বিশেষ ব্যাপার হলো, কানের অফিশিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের প্রথম ছবি এটাই। আমাদের কাছে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য।

এরপর থিয়েরি ফ্রেমোসহ অফিশিয়াল সিলেকশন কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানান সাদ। ছবিটি দেখতে সাল দুবুসিতে অসংখ্য দর্শক সমাগম হয়। তাদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন সাদ, এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি, আমাদের ছবিটি ভালো লাগবে।

ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন সাদ নিজেই। একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করে এর গল্প। কর্মস্থলে ও পরিবারে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাকে। শিক্ষক, চিকিৎসক, বোন, কন্যা ও মা হিসেবে জটিল এক জীবনযাপন করেন তিনি। এক দিন সন্ধ্যায় একজন অধ্যাপকের কক্ষ থেকে এক ছাত্রীকে কাঁদতে কাঁদতে বের হতে দেখেন রেহানা। এ ঘটনার পর ক্রমে একরোখা হয়ে ওঠে তার মন। ঐ ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু একই সময়ে তার ছয় বছর বয়সি মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ ওঠে। অনড় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে গিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী ও নিজের মেয়ের জন্য ন্যায়বিচারের লড়াই করতে থাকেন।

নিজেদের ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে ছিলেন ছবিটির চিত্রগ্রাহক তুহিন তমিজুল, প্রোডাকশন ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জল, শব্দ প্রকৌশলী শৈব তালুকদার ও কালারিস্ট চিন্ময় রয়।

প্রদর্শনী শেষে সাল দুবুসি প্রেক্ষাগৃহে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির পরিচালক, অভিনেত্রীসহ সবাইকে দাঁড়িয়ে করতালিতে সিক্ত করেছেন দর্শকরা। এ সময় অভিনেত্রী বাঁধন বাঁধভাঙা আনন্দে কেঁদে ফেলেন। ১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিটের ছবিটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। রেহানার জেদ, দৃঢ় মনোভাব, বিচক্ষণতার সঙ্গে বিভিন্ন ভাষাভাষির দর্শকরা নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন। তাই রেহানা জয় করে ফেলেছে সবার মন।

রেহানার মেয়ে ইমু চরিত্রে আফিয়া জাহিন জায়মার অভিনয় মন কেড়েছে অনেক দর্শকের। অন্যান্য চরিত্রে আছেন সাবেরী আলম, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, কাজী সামি হাসান, ইয়াছির আল হক, জোপারি লুই, ফারজানা বীথি, জাহেদ চৌধুরী মিঠু, খুশিয়ারা খুশবু অনি, অভ্রদিত চৌধুরী প্রমুখ।

আজ কান উৎসবের তৃতীয় দিনে সাল দুবুসিতে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট) ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ আবার দেখানো হবে। এরপর সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) কান শহরের মাল্টিপ্লেক্স ‘সিনেয়ুম অরা’য় এর আরেকটি প্রদর্শনী হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.