কুবি উপাচার্যের আধিপত্যে শিক্ষকদের থাপ্পড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি ডেপুটি রেজিস্ট্রারের

অপরাধ

উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈনের আধিপত্য জাহিরের কারণে শিক্ষকদের দুই গ্রুপে রূপ

এম শাহীন আলম :
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈনের নিজ জেলা গোপালগঞ্জে হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকটতম আত্মীয় পরিচয়ে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগে নিজ পচন্দের মনোনীত প্রার্থী নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের পদোন্নতিতে শর্তের পাহাড় সহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক বিশ্বস্হ সূত্রে জানা যায়।তার এই একগুরেমীর কারনে শিক্ষকদের মাঝে দুইটি গ্রুপে রূপ নিয়েছে যা প্রথম শ্রেণীর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কখনো কাম্য নয় বলে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি শিক্ষক সমিতির নব-নির্বাচিত সদস্য ও সাধারণ শিক্ষকদের থাপ্পড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকির দেওয়ার পর নিজেকে সেইভ করতে ৭ শিক্ষকের নামে থানায় অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন। যিনি ক্যাম্পাসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের ঘনিষ্ঠজন বলে সু-পরিচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানিয়েছেন বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পর থেকে যতগুলো নিয়োগ হয়েছে তার মধ্যে বৃহত্তর ফরিদপুর,খুলনা, বরিশাল বিভাগের প্রার্থীদের তিনি প্রাধান্য দিয়ে নিয়োগ দানে উৎসাহিত করে আসছেন।তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া সহ সকল ক্ষেত্রে স্হানীয় সাংসদের কোন বিষয়েও তিনি তোয়াক্কা কিংবা পাত্তা দিচ্ছেন না বলে জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন তার আধিপত্য ধরে রাখতে শিক্ষকরা যেন তার অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বচ্ছার না হতে পারে সেই জন্য ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন কুমিল্লার স্হানীয় বাসিন্দা হওয়ায় উপাচার্য তাকে রীতি মতো ব্যবহার করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি-২০২৪(বুধবার) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় তিনি এ অভিযোগ দায়ের করেন বলে জানা যায়। অভিযোগপত্রে তিনি কু.বি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, মো.কামরুল হাসান, অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, ড. মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম,আলীমুল রাজী ও নূর মোহাম্মদ রাজুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন লিখেন, আমি মোহাম্মদ জাকির হোসেন দাপ্তরিক কাজে ১৯ ফেব্রুয়ারী বিকাল সাড়ে ৪টায় পূর্বে অনুমতিক্রমে উপাচার্যের কক্ষে গেলে নূর মোহাম্মদ রাজু ও অন্যান্য বিবাদীগণ আমি ও আমার সঙ্গীয় অফিসারদের এখানে কেন এসেছো বলে অশ্লীল গালাগালাজ ও মারমুখী ভঙ্গিতে আমাদেরকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে। আমাকে ধাক্কা দিয়ে জোর করে উপাচার্য মহোদয়ের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
তিনি আরো লিখেন, আমি বলি স্যার আমরা দাপ্তরিক কাজে ভিসি স্যারের কাছে এসেছি। আপনারা আমাদের সাথে এমন আচরণ কেন করছেন? আমরা কি মানুষ নই? পরবর্তীতে ভেতরে থাকা উপরে উল্লিখিত শিক্ষকবৃন্দ আমাদের দিকে তেড়ে এসে টানা হেঁচড়া করে উপাচার্য স্যারের কক্ষ থেকে আমাকে এবং আমার সাথে থাকা পরিচালক মো.দেলোয়ার হোসেন স্যারকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
ভিসি স্যারের সাথে আমরা কথা বলতে চাইলে উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ আমাদের সাথে আরও বেশি খারাপ আচরণ শুরু করেন। উপাচার্য মহোদয়ের কক্ষে বিকট শব্দ ও হট্টগোল শুনে অন্যান্য অফিসারগণ ভিসি স্যারের রুমের সামনে আসেন। পরে প্রক্টরিয়াল বডি ও উপাচার্যের সহযোগিতায় কোন রকমে আত্মরক্ষা করে বের হয়ে আসি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিশ্বস্হ সূত্রে জানা যায় ওইদিন উপাচার্যের সাথে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল না। সবই উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

ঘটনার দিনের ভিডিও ক্লিপ দেখা যায়, উপাচার্যের কক্ষে শিক্ষকরা অবস্থান নিলে কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়া কয়েকজন কর্মকর্তা ও কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির, তখন উপাচার্যের কক্ষের দরজায় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে দেখা যায়। পরে উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করেও প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি, উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের উপস্থিতিতে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা জাকিরকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

ঘটনার সময় শিক্ষকদের সাথে ধাক্কাধাক্কিও করতে দেখা যায় জাকিরকে। পরে তিনি শিক্ষকদের থাপ্পড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন। চাকরিপ্রার্থীদের সে সময় শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে উচ্চবাচ্য করতেও দেখা যায়।

থানায় অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বা বিধিবদ্ধ সংগঠনগুলো যেন উপাচার্যের অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে না পারে সেজন্যেই উপাচার্য অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে এ অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন। না হয় শিক্ষকদের ওপর হামলার পরের দিন হামলাকারী কর্মকর্তাকে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বৈঠক করতেন না।

শিক্ষক সমিতির নেতারা আরো বলেন, শিক্ষকদের ওপর কর্মকর্তা ও সাবেক ছাত্রদের হামলা এবং পরবর্তীতে অভিযোগ দায়েরের সাথে উপাচার্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সরকারের উচিত এই মুহূর্তে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। উপাচার্যের অনিয়ম সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকান্ডের বিষয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে আরো বিস্তারিত ধারাবাহিক ভাবে দৈনিক বাংলা খবর এবং অপরাধ বিচিত্রা’য় চোখ রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.