এম শাহীন আলম :
কুমিল্লায় অর্থমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় একটি খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সরু ব্রীজ। তবে সরু ব্রীজটির দুই পাশে নেই সংযোগ সড়ক। ব্রীজটির এক পাশে বসতবাড়ি ও অন্যপাশে ফসলি জমি।এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের সরু ব্রীজটি কোন কাজেই আসছে না। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোদালিয়া এলাকায় রুহিতা খালের ওপর প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই সরু ব্রীজটি।
সদর দক্ষিন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রুহিতা খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু ও কালভার্ট ব্রীজ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২৯ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয়ে এই সরু ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের কোদালিয়া মজুমদার বাড়ীর দক্ষিণ পাশে রুহিতা খালের ওপর ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর দুইপাশে নেই পার্শ্ব সংযোগ সড়ক। সরু ব্রীজের উত্তর পাশে বসতবাড়ি ও দক্ষিণ পাশে বিশাল ফসলি জমির মাঠ। গত প্রায় তিন বছর ধরে খালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সরু ব্রীজটি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর দাবী, মাএ একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি মাছের প্রজেক্টের সুবিধার জন্যই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সে বিষয়টি এলাকায় বর্তমানে ওপেন সিক্রেট।
কোদালিয়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন লোক দৈনিক বাংলা খবর কে জানান, সংযোগ সড়ক ছাড়া ব্রীজটি জন-সাধারনের কোনো কাজে আসবে না। তবে সড়ক নির্মাণের জন্য ব্রীজের দুইপাশে সরকারি কোনো জায়গাও তেমন নেই। তাই মাছের প্রজেক্ট মালিক আবদুল মালেক ছাড়া এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসবে না এই সরু ব্রীজটি।
স্হানীয়রা আরো দৈনিক বাংলা খবর কে জানান, আশপাশে রাস্তার কোন খবর নেই,অথচ ব্রীজ নির্মাণ করে বসে আছে। তারা আরো বলেন, আগে দেখতাম রাস্তা নির্মাণ করে তারপর ব্রীজ বা কালভার্ট যাই করার করতো। কিন্তু এই ব্রীজ নির্মাণের ক্ষেত্রে হয়েছে পুরো উল্টা। সরেজমিনে জানা যায়, বর্ষাকালে গলা সমান পানি হয়ে যায় এই নির্মানাধীন সরু ব্রীজের আশপাশ এলাকায়, স্হানীয়দের ভাষ্য মতে রাস্তা সংযোগ বিহীন ব্রীজটি এটি এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসবে না।
তবে অভিযুক্ত আবদুল মালেক এর ফোনে নাম্বারে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
ঠিক একেই প্রক্রিয়ায় সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ার ইউপি এলাকার শীষপুর গ্রামে একটি খালের উপর পুনরায় প্রায় ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্শ্ব রাস্তা সংযোগ বিহীন আরেকটি সরু ব্রীজের কাজ চলমান রয়েছে l
এই অপরিকল্পিতভাবে খালের ওপর একটি ব্রীজের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার প্রায় তিন বছরে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ না করার পরও একেই ইউনিয়নের শীষপুরে নতুন সরু ব্রীজটির নির্মাণের বিষয়ে মুঠো ফোনে কল দিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো.মিজানুর রহমান দৈনিক বাংলা খবর কে বলেন, জন-গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেই সরু ব্রীজটি নির্মাণ করা হচ্ছে, সংযোগ রাস্তা বিহীন ব্রীজ কিভাবে নির্মাণ হচ্ছে বলে (পিআইও) মিজান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠো ফোনে জানান, সংযোগ রাস্তার নাকি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে , তাৎক্ষনিক রাস্তার নতুন প্রকল্পের অনুমোদন এর কপি চাইলে কথার পাস কাটিয়ে এই বিষয়ে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার এর সাথে কথা বলতে বলেন, তিনি আরো জানান, এখানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারনে তার ব্যক্তিভাবে সরকারী শতভাগ সিদ্ধান্ত নিতে পাচ্ছে না,শীষপুর ব্রীজের পাইলিং এর কাজে অনিয়েমের বিষয়ে জানতে চাইলে, পিআইও মিজান বলেন,নিয়মের বাহিরে টিকাদার সিমেন্টে অনিয়ম করায়, উপজেলা ইউএনও স্যার শুভাশিস ঘোষ সরেজমিনে গিয়ে সিমেন্ট পাল্টিয়ে দেয়, ঠিক একেই দিনে পিআইও মিজান এর সাথে মুঠো ফোনে কথা বলার কিছুক্ষণ পর দৈনিক বাংলা খবর পএিকার প্রতিবেদক এর মুঠো ফোনে কল করেন বর্তমান অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই ও সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার,তিনি বাংলা খবর কে জানান, শীষপুরের এই ব্রীজটি সরকারি এানের বরাদ্দে হচ্ছে,পার্শ্ব রাস্তা সংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,ব্রীজের কাজ শেষ হলে আগামী অর্থ বছরে অন্য প্রকল্প থেকে বরাদ্দ এনে এই ব্রীজের আশপাশে নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে,তিনি বলেন,তোমরা সাংবাদিকরা জানো কিনা, অন্য উপজেলায় বিএনপি'র নেতা মনিরুল হক চৌধুরী ক্ষমতা থাকা কালে তো এই রকম কয়েকটি সংযোগ রাস্তা বিহীন গত বিএনপি'র আমলে করে গেছে কই এটা নিয়ে তো কেউ নিউজ করেনি,এখন আমরা কাজ করতে গেলে সাংবাদিকদের ফোন,এতো বাঁধা বিপওি,উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার আরো জানান,তুমি সাংবাদিক তো জানো সামনে আমাদের উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউপি এলাকায় ইউপি নির্বাচন,এতে করে কোন প্রকার কাজ করতে গেলে এখানে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী যারা একে অন্যের পিছনে লেগে আছে,এই জন্যই তারা এসব বিষয়ে তোমরা যারা সাংবাদিক আছো তাদের কে খবর দিয়ে আনে,প্রতিবেদক কে তিনি বলেন,তোমার আরো কিছু জানার থাকলে সরাসরি আমার সাথে দেখা করো, আর কাজের বিষয়ে তুমি পিআইও সাহেবের সাথে কথা বলো, প্রতিবেদককে ঠিক আছে তোমার সাথে পরে কথা বলবো বলে তিনি কল কেটে দেন ।
এই ব্রীজের বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু দৈনিক বাংলা খবর কে বলেন, কোদালিয়া রুহিতা খালের ওপর এর আগেও একটি সংযোগ রাস্তা বিহীন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে বলে স্হানীয়রা জানান। তিনি বলেন, এসব ব্রীজ কালভাট করা এটি সরকারের অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই না। তার দাবী, কোদালিয়া ব্রিজটি সংযোগ রাস্তা বিহীন কেন নির্মাণ করা হয়েছে এবং পুনরায় কেন একেই প্রক্রিয়ায় একেই ইউনিয়নে রাস্তা সংযোগ বিহীন আরেকটি সরু ব্রীজ নির্মাণ করা হচ্ছে সে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নিয়ে খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাকে এই বিষয়ে মুঠো ফোনে কল করা হলে তিনি দৈনিক বাংলা খবর কে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে সেতু, ব্রীজ, কালভাট করার কোন সুযোগ নেই। অবশ্যই এর দুইপাশে সংযোগ সড়ক থাকতে হবে। কারণ মানুষ যদি চলাচলই করতে না পারে, তাহলে ব্রীজ দিয়ে কী হবে। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরবর্তী অনুসন্ধানে আরো তথ্য সহ পরের সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে