কুমিল্লায় রেজাউল গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত হত্যার টার্গেটে ছিল কাউন্সিলর হাসান’কে

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
কুমিল্লা জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষসন্ত্রাসী এবং হত্যা ডাকাতি অস্ত্র ও মাদকসহ অন্তত ৩ ডজন মামলার আসামি রেজাউল করিমকে নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহ অনেকটা গোলকধাঁধায় ছিল। রেজাউল সদর দক্ষিন মডেল থানাধীন বল্লভপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র। সে খুন এবং অপকর্ম করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে অল্প সময়ে ভারতে পাড়ি জমাতো।
এলাকায় ডজন খানেক খুন করার পরও ভারতে বসে বাংলাদেশে চাঁদাবাজিসহ একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল রেজাউল।গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে সিরিয়াল কিলার রেজাউলের নানা অপকর্মের কাহিনী। এদিকে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন। দেলোয়ার হত্যা মামলার পর ইতিমধ্যে তাকে চৌয়ারা এলাকায় ২০১৫ সালে সংঘটিত কলেজছাত্র রিফাত হত্যা মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। এ মামলায় তাকে সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল । হত্যা রহস্য উদঘাটনে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে কুমিল্লা নগরীর চৌয়ারা এলাকার মানুষের মাঝে কৌতুহলের শেষ নেই। তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে রেজাউল নাকি এবার দেশে ফিরছিল ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসানকে হত্যার মিশন নিয়ে। ইতিমধ্যে কাউন্সিলর হাসানকে হত্যার হুমকি প্রদানের ৮ সেকেন্ডের রেজাউলের একটি ভয়েস রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনসহ তদন্ত সংশ্লিষ্টরা খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গত ১৮ জুন সন্ধ্যায় গোলাবাড়ি সীমান্তে স্থানীয়দের সহায়তায় বিজিবি হাতে ১টি ৩২ বোরের পিস্তল,৪রাউন্ড গুলি,১৬পিচ ইয়াবা,কৌটা মাদক ১প্যাকেট,৩টি ভারতীয় পরিচয়পত্র,ভারতীয় ইউসিবি ব্যাংকের ২টি ডেবিট কার্ড,ভারতীয় বিভিন্ন প্রকারের ৭টি কার্ড,নগদ ৭৮৫টাকা ও কাতারের ১০দিহরাম সহ
গ্রেপ্তার হয় রেজাউল। দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার রেজাউল বিজিবির হাতে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০১৮ সালে জেলা ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হত্যার আগে ২০১৫ সালের চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যা মামলায় তার সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে পিবিআই। ২০১৫ সালের ৯ মার্চ পুলিশ সদর দক্ষিণে ধর্মপুর এলাকার সোনাইছড়ি খাল থেকে কলেজছাত্র রিফাতের মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। থানা পুলিশ ও সিআইডি এ মামলার কোনো কূলকিনারা করতে না পারলেও পিবিআই রিফাত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে রেজাউলকে আদালতের শোন অ্যারেস্ট দেখানোর আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ করে । এছাড়া ওই এলাকার রাসেল হত্যা মামলায় আসামি রেজাউল। চৌয়ারা এলাকায় একের পর এক খুনের ঘটনায় রেজাউলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় ভয়ে মানুষ মুখ খুলত না। তার কাছ থেকে রেহাই পায়নি জনপ্রতিনিধিরাও। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি চাঁদা দাবি করে না পেয়ে ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসানের ওপর হামলা চালায় রেজাউল বাহিনী। এ ঘটনায় কাউন্সিলর আবুল হাসান সদর দক্ষিণ মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার এফ আই আর নাম্বার ১১/১১. মামলাটি উঠিয়ে নিতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে রেজাউল। কাউন্সিলর হাসান মামলা উঠিয়ে না নিলে বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি দেয় রেজাউল। ইতিমধ্যে ৮সেকেন্ডের একটি ভয়েস রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভয়েস রেকর্ডে উল্লেখ ছিল ” আল্লাহর কসম আই পিস্তল কিনছি হাসানের লাইগ্যা,হাসাইন্না বাচতে হাইত্তন অগ্রিম কইলাম”।

রেজাউলের হুমকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আবুল হাসান এটা রেজাউলের কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করে জানান,রেজাউল এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী।সে খুব দুর্ধর্ষ প্রকৃতির হওয়াতে এলাকার মানুষ ভয়ে মুখ খুলত না। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় সে আমার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। এর জের ধরে আমার উপর সে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ ঘটনায় মামলা করায় সে আরো ক্ষুদ্ধ হয়। এর পর থেকে সে আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। বিষয়টি আমি বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে অবহিত করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.