বিশেষ প্রতিনিধি :
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কয়েকটি বেসরকারি হাই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির নামে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। পুনঃ ভর্তির ক্ষেত্রেও একইভাবে অতিরিক্ত ফি নিচ্ছে বিদ্যালয়গুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে চলতি শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সেশন ফি এর নাম করে বাণিজ্য করছে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) পৌরসভার চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ছাত্রীদের কাছ থেকে ১ হাজার ২শত টাকা থেকে ১ হাজার ৫শত টাকা আদায় করা হয়েছে। পুনঃভর্তির ক্ষেত্রেও একই ফি আদায় করা হয়। ওই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণিতে পুনঃভর্তির জন্য জান্নাতুল ফেরদাউস নামের একজন ছাত্রীর নিকট থেকে ১ হাজার ৪ শত টাকা নেওয়া হয়।
চান্দিনা পৌরসভার সাহাপাড়া এলাকার অভিভাবক ধনঞ্জয় মজুমদার ও চান্দিনা পশ্চিম বাজার এলাকার অভিভাবক আমেনা আক্তার জানান, তাদের বাচ্চাদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ১ হাজার ৫শত টাকা করে নিয়েছে ওই বিদ্যালয়।
অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভাধীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা নেওয়ার বিধান রয়েছে। নীতিমালার তোয়াক্কা না করে মনগড়া মতো টাকা আদায় করছে চান্দিনা ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
এব্যাপারে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুমিতা রায় বলেন, ‘ভর্তি ও সেশন ফি এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।’ অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার প্রমাণ রয়েছে বললে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত না বেতন হিসেবে নেওয়া হয়েছে।’
এদিকে বড় গোবিন্দপুর আলী মিয়া ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, ভর্তি ও সেশন ফি মিলিয়ে ১২শত ৬০ থেকে ১৪শত টাকা নিচ্ছে বিদ্যালয়টি। পুনঃভর্তির ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিদ্যালয়টিতে দশম শ্রেণির একজন ছাত্রের কাছ থেকে পুনঃ ভর্তি বাবদ ১২শত ৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কমপক্ষে ৮জন ছাত্র-ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, ১২শত ৬০ টাকা করে ভর্তি ও পুনঃভর্তি ফি নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এব্যাপারে জানতে চাইলে বড় গোবিন্দপুর আলী মিয়া ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. জাকির হোসেন খান বলেন- ‘আমি আপনাকে কোন তথ্য দিতে পারবো না। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে সব তথ্য দেওয়া আছে। আপনি ওখান থেকে সংগ্রহ করুন।’
মাধাইয়া বাজার ছাদিম উচ্চ বিদ্যালয়ে নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি ও সেশন ফি মিলিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে সর্বোচ্চ ৫শত টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও এক হাজার টাকা করে ভর্তি ফি নিয়েছে বিদ্যালয়টি। পুনঃভর্তির ক্ষেত্রেও এক হাজার টাকা করেই নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যায়লয় কর্তৃপক্ষ আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
অপরদিকে উপজেলার বাড়েরা উচ্চ বিদ্যালয়, মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি হাইস্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওই প্রতিষ্ঠানগুলোও অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় করেছে।
এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কানিজ আফরোজ জানান, ‘পৌর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো ভর্তি ও সেশন ফি মিলিয়ে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা নিতে পারবে। তদন্ত করে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অতিরিক্ত টাকাও ফেরত দিতে বাধ্য করা হবে।’ তিনি আরও বলেন- ‘পুনঃভর্তির জন্য কোন টাকা নেয়ার বিধান নেই।’
এব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন- ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।