Doinik Bangla Khobor

কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় দিনে কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ 

বিশেষ প্রতিবেদক :
গত ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কিছু দিন বন্ধ থাকার পর আওয়ামীলীগ নেতা নামের শুধু মুখোশ গুলো পাল্টিয়ে নতুন মুখোশে দলীয় রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় অদৃশ্য শক্তির ইশারায় কিছু দালাল নামের লেঁওয়ার মাধ্যমে দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা – চট্রগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে চলাচলকারী ছোট বড় যানবাহনের মোটর ড্রাইভার শ্রমিকদের কাছ থেকে জিবির নামে এবং পদুয়ার বাজারের ফুটপাতের ক্ষুদ্র দোকানীদের কাছ থেকে দিনে কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। যে হারে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি হচ্ছে তাতে করে দেখা যায় শুধু পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে মাসে গড়ে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা যানবাহন এবং ফুটপাতের ক্ষুদ্র দোকানদারীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায়  করছে একটি সিন্ডিকেট।

সরজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার অদৃশ্য ছত্র-ছায়ায় একটি দালাল চক্রকে ব্যবহার করে এসব চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। চাঁদাবাজ দালালদের নিয়মিত চাঁদা না দিলে ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ   দোকানীদের বাঁধার সৃষ্টি করে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার মতোও ঘটনা ঘটে। যানজট নিরসনে ফুটপাত দখল মুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযানে চাঁদাবাজরা ধরা পড়লেও কিছুদিন পর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে জামিনে বেরিয়ে আবার শুরু করে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। কুমিল্লায় পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় কারা এসব চাঁদাবাজির মূল হোতা মোটর শ্রমিক এবং ফুটপাতের দোকানীদের জানা থাকলেও  প্রকাশ্যে কেউ ভয়ে চাঁদাবাজদের  বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। মোটর শ্রমিকরা জানান, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড আসলেই জিবির নামে টাকা দিতে হয়। আর টাকা দিলে গাড়ি আটক রেখে পুলিশ দিয়ে হয়রানি সহ মামলা দিয়ে জরিমানা করে এখানকার দালালরা। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চাঁদাবাজ দালালরা গাড়ির ক্ষতি সহ গাড়ির ড্রাইভার হেলপারদের মারধরের ঘটনাও ঘটায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে স্থানীয় এমপিদের ছত্র-ছায়ায় পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের আওয়ামীলীগ নেতা দুলাল হোসেন অপু এবং আজাদ সিন্ডিকেটের নের্তৃত্বে চাঁদাবাজি হতো। আওয়ামী সরকারের পতনের পর বর্তমানে স্থানীয় বিএনপির মতাদর্শী কিছু নেতা নামের হোমড়াচোমরাদের একটি সিন্ডিকেট এই চাঁদাবাজির সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা যায়। এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে যারা নের্তৃত্ব দিচ্ছে তাদের নাম উঠে আসলেও তাদের শোধরানোর সুযোগ দিয়ে তাদের নাম এই সংখ্যায় প্রকাশ থেকে বিরত রাখলাম। এই চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে সামনের সংখ্যায় তাদের ছবি পরিচয় সহ পুনরায় নিউজে প্রকাশ করা হবে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চলাচলরত কোন গাড়ি যদি পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড একজন যাত্রীও উঠায় তাহলেও স্থানীয় দালালদের টাকা দিতে হয়। না হয় জোর করে গাড়ির ড্রাইভার হেলপারদের কাছ থেকে টাকা নেয় দালালরা। পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে দিয়ে চলাচলকারী মাইক্রোবাস, মারতি জীপ,সিএনজি সহ ছোট বড় যানবাহন গুলো থেকে প্রতিদিনই জিবি’র নামে চাঁদাবাজি করা হয়। চাঁদাবাজি থেকে একটি গাড়িও রেহাই পায় না বলে জানা যায়।

পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় এবং ফুটপাতের  ব্যবসায়ীরা বলেন, চাঁদা না দিলে তো আগামীকাল এখানে ব্যবসায় করা যাবে না। দালালদের চাঁদার টাকা না দিলে কিছু সন্ত্রাসী ক্যাডার দিয়ে হুমকি সহ প্রতিবাদ করলে মারধর করার মতো ঘটনাও ঘটে। এখানের চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের কাছে গাড়ির মালিক শ্রমিক সহ সকল ব্যবসায়ীরা জিম্মি। প্রতিবাদ করলেই বিশ্বরোডে যাওয়া বা গাড়ি চলাচল সহ ব্যবসা করা সম্ভব নয় বলে তারা জানান।

পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চেয়ে কুমিল্লার যানবাহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের সংগঠন সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। মোটর শ্রমিক সংগঠনের মোবারক নামের এক সদস্য জানান, আমাদের সংগঠনের সকল  কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে চলাচলকারী ছোট বড় যানবাহন থেকে চাঁদা উত্তোলন বন্ধ নেই। আরেক সিএনজি শ্রমিক জানায় আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও থেমে নেই চাঁদা নেওয়া। সিএনজি ড্রাইভাররা জানান,এই চাঁদা কোন খাতে কি করে তাও আমাদের জানা নেই। সিএনজি শ্রমিকরা জানান,আমরা আমাদের সংগঠনকে আগে যা দিতাম তা থেকে আমাদের মৃত্যু পেনশন, চিকিৎসা সহ অন্যান্য ভাতা সহ সুবিধা দিতেন মালিক শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর নিয়মিত চাঁদা দিলেও আমরা শ্রমিকরা কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না। আগে রাস্তায় বিভিন্ন সমস্যা হলে আমরা মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের পাশে পেতাম তারা আমাদের বিপদে এগিয়ে আসতো। এখন আমরা বিপদে পড়লে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের কিংবা বর্তমানে যাদের চাঁদা দিচ্ছি তাদের কাউকেও দৃশ্যমান আমাদের বিপদে পাচ্ছি না। সিএনজি শ্রমিকরা জানান আমরা বর্তমানে ভ্রাম্যমাণ ভাসমান ভাবে নিয়মিত চাঁদা দিচ্ছি যা আমাদের ড্রাইভার শ্রমিক কারো উপকারে আসে না। চাঁদার টাকা গুলা কোথায় কোন খাতে যায় তাও আমাদের জানা নাই। মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যক্রম যেন চালু করা হয় তার জন্য সিএনজি ড্রাইভার শ্রমিকরা অনুরোধ জানান। অনুসন্ধানকালে আরেকজন সিএনজির ড্রাইভার জানান, পদুয়ার বাজার বিশ্ব রোড আসলেই চল্লিশ টাকা প্রদান করতে হয়। না দিলে বিভিন্ন হেনস্থার স্বীকার হতে হয় সিএনজির ড্রাইভারদের। পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে কোন মালিক শ্রমিক সংগঠন ছাড়াই শুধু সিএনজি থেকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্র-ছায়ায় ভ্রাম্যমান এই চাঁদা উত্তোলন করেন মোসলেম, আনিছ, ইসমাঈল, ফরিদ নামের এই লোক গুলা। ড্রাইভাররা জানান, তারা আমাদের কাছ থেকে এই টাকা উত্তোলন করে কোথায় কাকে দেয় তার কোন হদিস নেই। সিএনজি ড্রাইভার শ্রমিকদের দাবি আমাদের মালিক শ্রমিক ইউনিয়ন বা সংগঠনের সকল কার্যক্রম চালু করলে আমরা সংগঠন থেকে সুযোগ সুবিধা পাবো।  সংগঠনের নেতারা আমাদের বিপদে এগিয়ে আসবে। তাই আমাদের মালিক শ্রমিক সংগঠনটি চালু করার দাবি সিএনজি ড্রাইভার শ্রমিকদের।
অনুসন্ধানকালে সিএনজি শ্রমিকরা জানান, আমরা বছরে কাগজপত্র নবায়ণ করতে সরকারকে ভ্যাট টেক্স দেই। যদি না দিই তাহলে আমরা বিভিন্ন মামলায় সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু ব্যাটারী চালিত ইজি বাইক যেখানে সেখানে পার্কিং করে শহরে বিভিন্ন স্থানে যানজট সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অপরদিকে সিএনজি বেলায় শুধু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সিএনজির ড্রাইভাররা জানান,পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে দৈনিক চাঁদা ছাড়াও ট্রাফিক পুলিশের জন্য মাসিক টোকেনের টাকা দিতে হয়। আর টোকেন না থাকলে গাড়ি সিগন্যাল দিয়ে ধরলেই ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার জরিমানা টাকা গুনতে হয় আমাদের। অথচ রাস্তায় যানজট সৃষ্টিকারী ব্যটারি চালিত ইজি বাইক এর জরিমানা মাত্র ১৫০০ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে জিবির নামের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নিবে জানতে চেয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসিকে তার মুঠো ফোনে দিলে ফোনটি রিসিভ করেন ঐ থাকার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, তিনি বলেন, ওসি স্যার ছুটিতে আছেন কি বলবেন আমাকে বলতে পারেন। বিশ্বরোডে যানবাহনে চাঁদাবাজি হচ্ছে এটা নাকি তিনি এক বছরে থাকার পরও মাত্র আমার মুখ থেকে শুনেছেন। বিশ্বরোডে জিবির নামে চাঁদাবাজির বিষয়ে নাকি সদর দক্ষিন থানা অবগত নন। তদন্ত ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন,কোন অভিযোগ পেলে তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।