বিশেষ প্রতিনিধি :
"মাদক সম্রাটদের তালিকা প্রকাশ করা হলো"
কুমিল্লার ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা বুড়িচং, এই উপজেলাটিতে মাদক পাচার,মাদক কারবার ও মাদক সেবীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে দিনদিন। অবৈধ মাদকের টাকা, আগ্নেয়াস্ত্র ও রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় ক্রমেই বেপোরোয়া হয়ে পরেছে মাদক কারবারি সিন্ডিকেট। এই সীমান্ত এলাকার ওপর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট-কুমিল্লা- ঢাকা মহাসড়ক ও রেলপথের একটি বিশাল অংশ। মাদকের প্রধান বাজার রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। বহিরাগত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা তো আছেই সেই সাথে সীমান্তবর্তী এ উপজেলার তরুণ, কিশাের-কিশােরী ও যুবকরা দিন দিনই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। সহজ-লভ্য হওয়ায় জড়িয়ে পরছে মাদক কারবারেও। বিশেষ করে উপজেলার সীমান্তবর্তী পাঁচোড়া, চড়ানল, জগৎপুর, শংকুচাইল, বারেশ্বর ও লড়িবাগ, আনন্দপুর, ঘিলাতলী, নজুপুড়া, জামতলা সহ বিভিন্ন গ্রামে নিত্য নতুন মাদক ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছে প্রতিদিনই। এরা বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন কায়দায় মদ, গাঁজা, স্কার্প, বিয়ার, ফেন্সিডিলের পাশাপাশি দেদারে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা। বুড়িচংয়ে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিনই নদীর স্রোতের মত প্রবেশ করছে মাদক। মাদকের ডিলার ও ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণীর অসাধু সীমান্তরক্ষী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করে মদ, গাঁজা, বিয়ার, ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ নানা প্রকার মাদক ও ভারতীয় অবৈধ পণ্য ওপাড় থেকে এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। ফলে যুব ও তরুণ সমাজ মাদকের নীল নেশায় আসক্ত হয়ে দিন দিন ধ্বংসের দিকে পতিত হচ্ছে। সেই সাথে ঘটছে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই সহ নানা অপ্রিয়কর ঘটনাও। ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জেলার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ও রাজাপুর ইউনিয়নের প্রায় ১৫ কিলােমিটার অংশ জুড়ে রয়েছে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা। এর মধ্যে ভারতী সীমান্ত লাগোয়া আনন্দপুর, জঙ্গলবাড়ি, পাহাড়পুর, কোদালিয়া, মিরপুর, শঙ্কুচাইল, হায়দ্রাবাদ, পাঁচোরা, চড়ানল, নবিয়াবাদ এসমস্ত গ্রামের ওপড় দিয়ে ভারত থেকে আসা মাদকের চালান প্রতিদিন পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মাদক পাচারে নিত্য নতুন কৌশল এবং নারী মাদক কারবারির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকাংশে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এর সামান্য কিছু আটক হলেও বেশীর ভাগ মাদকের চালান গোপনে পৌঁছে যাচ্ছে গন্তব্যে। চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিদের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন মাদক ও চোরা কারবারি। এদের মাধ্যমেই দেশে আসছে ইয়াবা সহ নানা জাতের মরন নেশা।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য জাচাই বাছাই করে জানা যায়, সীমান্ত গলিয়ে এপাড়ে আসা মাদকের বড় চালান উপজেলার কংশনগর, জগৎপুর, ময়নামতি সহ বিভিন্ন এলাকায় জড়ো করা হয়। পরে সময় সুযোগ বুঝে এম্বুলেন্স, বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, সিএনজি, পিকাপ সহ নানা পরিবহন পাঠানো হয় রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে। প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গেলে সীমান্তের চিহ্নিত মাদক কারবারিরা ঢা-ঢাকা দিয়ে থাকে অথবা সীমান্ত পেড়িয়ে অবস্থান করে ভারতে। সীমান্ত এলাকার বড় বড় মাদক ডিলাদের অধিকাংশই ভারত বাংলাদেশের দৈত নাগরিক হওয়ায় তাদের গ্রেফতার করাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য কষ্টস্বাধ্য হয়ে পরেছে।
এছাড়াও উপজেলার সীমান্ত সহ বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিদের মাঝে রয়েছে, রাজাপুর ইউনিয়নের চড়ানল গ্রামের মহসীন, পাঁচোড়া গ্রামের এমরান আলীর ছেলে মোঃ হোসেন, শঙ্কুচাইল এলাকার ফরিদ মিয়ার ছেলে রিপন , মোস্তফার ছেলে সাইফুল,
মাদক সম্রাট নরু মিয়া, তার ভাই রবি নুরু মিয়ার ছেলে মাসুদ, মহরম আলীর ছেলে শিরাজ, রতন মাস্টারের ছেলে মাহমুদুল হাসান সজীব, শঙ্কুচাইল উত্তর পাড়ার সুমন, মুমিন, ও তার মামা শশুর রিপন, সাগর (২৮), নগর ভারত সীমান্ত, মোঃ এমেলী হায়দ্রাবাদ নগর সীমান্তের দৈত নাগরিক, কাউছার, (২৬) হায়দ্রাবাদ, (নগর) সীমান্তে, সুজন খান (২৬), শঙ্কুচাইল, খান বাড়ি,
স্বপণ খান, শঙ্কুচাইল (খান বাড়ি), জসিম (৩৫) পাইকোডা দক্ষিণগ্রাম, পাবেল খান শঙ্কুচাইল খান বাড়ি, ফিরোজ মিয়া উত্তর গ্রাম (বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন) শঙ্কুচাইল, সুমন মিয়া শঙ্কুচাইল খান বাড়ি, মোঃ সাকি উত্তর গ্রাম শঙ্কুচাইল, আনোয়ার দক্ষিণ গ্রাম, মাদক সম্রাট মনির পিতা-আয়েত আলী ঘিলাতলা নজুমুড়া সীমান্ত ভারত দৈত নাগরিক। নাছির, পিতা- আলম ছয়গ্রাম, গাংপাড়ের মৃত হাকিমের ছেলে ফারুক মিয়া, বাৱেশ্বর গাছপাড়ের অবঃ সৈনিক আবুল
হাসেমের ছেলে মিজান মিয়া, বারেশ্বর রহমত আলী
বাড়ীর শিখন মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া, বারেশ্বর সাধু
মেম্বার বাড়ির সানু মিয়ার ছেলে বাদল মিয়া, বাৱেশ্বর কাইমুদ্দি হাজীর বাড়ির ছবির ও তারিই ভাই মনির হােসেন, বারেশ্বর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মানিক ওরফে ফেন্সি মানিক, বারেশ্বর গ্রামের বাহাউদ্দির বাড়ির অহন মিয়ার ছেলে মনির হোসেন, বারেশ্বর পশ্চিম পাড়ার চৌধূরী বাড়ী সংলগ্ন জমসু মিয়ার ছেলে কবির হােসেন, বারেশ্বর পশ্চিম পাড়া চৌধুরী বাড়ী সংলগ্ন চারু মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলাম তারি ভাই রমজান, নোয়াখালি চাটখিল এলাকার আবদুর রব পাটোয়ারীর ছেলে মোঃ গোলাম কিবরিয়া বর্তমানে রাজাপুর ইউনিয়নের বারেশ্বর গ্রামে শশুরবাড়ি সংলগ্ন টাকুই গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকে। বাৱেশ্বর পশ্চিম পাড়ার বারেশ্বর খন্দকার উত্তর বাড়ীর ইদ্রিস খন্দকারের ছেলে নজরুল, বারেশ্বর পশ্চিম পাড়া হাজী জজু মিয়ার ছেলে মানি মিয়া, বারেশ্বর পশ্চিম পাড়া আবুল হাসেমের ছেলে মােঃ হানিফ, মৃতঃ মফিজ পুলিশের ছেলে সম্রাট মিয়া। জগতপুর গ্রামের কামাল হােসেন ওরফে ফেন্সি কামাল, আনন্দপুর গ্রামের আবদুর রহমান, শঙ্কুইলের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কাজল খান।
ছাড়াও উপজেলার ভারেল্লা দক্ষিণ ও উত্তর ইউনিয়ন এলাকায় রয়েছে প্রায় ডজন খানেক মাদকের ডিলার।
ময়নামতি ও মোকাম ইউনিয়ন এলাকায় রয়েছে আন্তর্জাতিক ইয়াবা ডিলার সহ মাদক সম্রাটদের আস্তানা। তুলনামূলক ভাবে উপজেলার সবচেয়ে বড় মাদক কারবারি ও কারবারের ট্রানজিট পয়েন্ট হলো উপজেলার এই দুই ইউনিয়ন। বৃহৎ পাইকারি বাজারের অন্তরালে সীমান্ত থেকে আসা মাদকের বড় বড় চালান পৌঁছে যায় ঢাকা সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে। মাদক বিক্রির অবৈধ কালো টাকা ব্যবহার করে সরকার দলীয় সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় ভিন্ন ও বৈধ ব্যবসার সাইনবোর্ডের আড়ালে মাদক সহ নানা অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী মাদক ডিলার সিন্ডিকেট।
প্রায় প্রতিদিনই মাদকসেবী ও কারবারির তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। অনুসন্ধানে জানা যায় গোটা উপজেলাজুড়ে মাদক কারবারির প্রকৃত সংখ্যা সহস্রাধিক। আর সীমান্ত লাগোয়া ১০৫ কি মি অংশের জেলা কুমিল্লায় এই সংখ্যা কত তা অনুমান করা কঠিন। জেলার বিভিন্ন থানার তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত মাদক কারবারিদের যে তালিকা রয়েছে প্রকৃত সংখ্যা এর অন্তত দশ গুন হতে পারে ধারনা বিশ্লেষকদের।
সীমান্তের ঢিলেঢালা নজরদারি ও দায়িত্বরত কতিপয় অসাধু সদস্যদের যোগসাজশে মাদক পাচার ও কারবার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন সীমান্তে বসবাসকারীরা। সীমান্ত এলাকার সচেতন স্থানীয়রা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মাদক কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে পরছে। মাদকের সাথে সাথে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানিও বেড়েছে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোতে। মাদক কারবারে জড়িতরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসার সাথেও জড়িত। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পবিত্র ঈদের দিন জেলা সদরের গেলাবাড়ি এলাকায় ঈদের জামাতে গোলাগুলিতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়। গত ১৩ এপ্রিল বুড়িচং হায়দ্রাবাদ সীমান্তে সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈম হত্যায় একাধিক আগ্নেস্ত্রের ব্যবহার করা হয়। এর আগে জেলার সদর দক্ষিণে র্যাবের ওপর মাদক কারবারিদের হামলা ও গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হন র্যাবের এক সদস্য। এছাড়া নগরীতে কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ হত্যাকান্ডে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে প্রশাসনকেও। জেলায় সংঘঠিত বেশির ভাগ অপরাধের সাথেই প্রত্যক্ষ বা পরোভাবে মাদকের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়। মাদক একেবারে নির্মূল করা সম্ভব না হলেও সচেনত জনগণের প্রত্যাশা এর প্রসার ও পাচার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর হবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই বলে মনে করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসান।