বিশেষ প্রতিবেদক :
কুমিল্লা জেলা মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া ইউনিয়নস্থ গান্দ্রা গ্রামের মৃত্যু কেরামত আলীর ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেন কে নিজ বসত ঘর থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ১৫ দিন পর মিললো লাশ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, গত ১৭/৭/২২ইং তারিখ শনিবার রাত আনুমানিক দশটায় সঙ্গ বদ্ধ একদল সাদা পোষাকধারী কালো মাক্রোবাস নিয়ে মুরাদনগর থানার বাবুটিপারা ইউনিয়নের গান্দ্রা গ্রামে প্রবেশ করে সেখান থেকে প্রথমে আনোয়ার হোসেনের বড় ভাই জসিম কে গ্রেফতার করে, পরে আনোয়ারের বসত ঘরে প্রবেশ করে তাকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে। এমতাবস্থায় আনোয়ার হোসেন ও জসিমের পরিবারের ডাক চিৎকারে বাড়ির আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের বিরুদ্ধে সিএনজি অটোরিক্সা চুরির মামলায় ওয়ারেন্ট আছে বলে জানান সাদা পোষাকধারীরা। এরপর জোর করে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় তারা। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, সেই একই অভিযোগে এবং একই সময়ে গান্দ্রা গ্রামের খলিল নামের একজন সিএনজি ড্রাইভার কে একই কায়দায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মুরাদনগর থানাস্থ পান্তি বাজারের গিয়ে সেই একই অভিযোগে বশির নামে আরো একজন কে ডিবি পরিচয় দিয়ে ফ্লিম স্টাইলে তুলে নিয়ে যায় তারা। পরে সারা রাত তাদের আর খোঁজে পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় এ প্রেক্ষিতে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পরে আতংক। গ্রামের স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গরা প্রথমে মুরাদনর থানা ও কুমিল্লা ডিবি পুলিশে যোগাযোগ করলে কোথাও কোন খোঁজ মেলেনি তাদের।
পরদিন সকাল বেলা এস আই আমিনুল নামে একজন ফোন করে জানান, ভিকটিম আনোয়ার সহ চারজন তার হেফাজতে চান্দিনা থানায় আছেন এবং এসআই আমিনুলের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। ভিকটিমের স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে চান্দিনা থানায় গেলে এস আই আমিনুল পঞ্চাশ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করেন। এ সময় আটককৃতদের সাথে দেখা করার সুযোগ দেন ভিকটিমকে। সময় ভিকটিম আনোয়ার ও বশির আহমেদ জানান, রাতে তাদেরকে গাড়িতে ওঠানোর পর তাদের চোখ মুখ বেঁধে ফেলা হয় এবং কয়েকজন মিলে তাদের কিল-ঘুষি মারতে থাকে। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বলা হয়- তোকে বাতাঘাসি ঘুড়ঘা জলার ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এসেছি, আমাদেরকে ২ লাখ টাকা না দিলে তোকে জানে মেরে ফেলব। ভুক্তভাগী ভিকটিম তাদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চান। পরদিন সকালে অপহৃত আনোয়ার সহ চারজন কে চান্দিনা থানায় নিয়ে আসা হয়। ডিবি পরিচয়ে অপহরণের বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক জেনে যাওয়ার পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রেফতার কৃত খলিল ও বশির আহমেদ কে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু জসিম ও আনোয়ার কে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে এস আই আমিনুল নিজেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগী জসিম জানায়,মিথ্যা মামলায় আমার জামিন হওয়ার পর এস আই আমিনুল জসিম কে চান্দিনায় ডেকে নিয়ে মিথ্যা সাক্ষি দিতে ভয়ভীতি দেখায় এবং বলে আমি যেইভাবে বলি এই ভাবে কথা না বললে আমি আবারও অন্য মামলায় তোকে ফাসিয়ে দেবো এই বলে সে জসিম কে মিথ্যা বলতে বাধ্য করে এবং এস আই আমিনুল জসিমের কথা ভিডিও রেকর্ড করে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, এসআই আমিনুলের দাবীকৃত মুক্তিপনের পঞ্চাশ হাজার টাকা পরিবার কোনভাবেই যোগাড় করতে না পারায় ক্ষোভে এসআই আমিনুল ভিকটিম আনোয়ার কে অজ্ঞাত ডাকাতির প্রস্তুতির মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন প্রায় ১৫ দিন পর জেল হেফাজতে ভিকটিম আনোয়ার এর মৃত্যু হয়।গ্রেফতারে ঘটনার পর দিন বশির আহমেদ এস আই আমিনুলের বিরুদ্ধে কুমিল্লা পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল। আনোয়ার হোসেনের বড় মোহসীন বলেন, আমার ভাই সম্পুর্ন সুস্থ ছিল এস আই আমিনুল ও তার সাথে থাকা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। এই বিষয়ে এস আই আমিনুল সাংবাদিকদের জানান, তিনি ভিকটিমদেরকে গ্রেফতার করেনি,এবং সে আনোয়ার নামে কাউকে জেলহাজতে প্রেরন করেননি। তিনি আরো বলেন চান্দিনা থানার ওসি সবকিছু জানেন। চান্দিনা থানা ওসি আরীফুর রহমানের বক্তব্য চাইতে চান্দিনা থানার সরকারি নাম্বারে কল দিয়ে জানা যায় ওসি আরীফুর রহমান চান্দিনা থানা থেকে বদলি হয়ে গেছেন এবং তদন্ত ওসি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে এই ঘটনায় এস আই আমিনুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে মৃত আনোয়ারের পরিবার।