বিশেষ প্রতিবেদক :
অভাবের সংসারে সচ্ছলতা আনতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৯ সালে লিবিয়ায় পাড়ি জমান কুমিল্লার দেবীদ্বারে ইয়াকুব হাসান। তার বাবা আবুল খায়ের আগে থেকেই লিবিয়ায় ছিলেন। বাবা-ছেলের আয়ে দেশে থাকা মা আর দুই বোন নিয়ে সংসার বেশ ভালোই চলছিল। তবে উচ্চ আয়ের আশায় হবিগঞ্জের এক দালালের খপ্পরে পড়েন ইয়াকুব। অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে ইতালি যাওয়ার পথে ল্যাম্ব দোসা দ্বীপে “মাফিয়াদের” হাতে আটক হন ইয়াকুবসহ অন্তত ১৫০ বংলাদেশি।
এরপর দীর্ঘ ছয় মাস ছেলের খোঁজ না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন মা শাহীনুর বেগম (৪৫)। ছেলেকে ফিরে পেতে পুনরায় দালাল চক্রের মাধ্যমে চার দফায় প্রায় ২০ লাখ টাকা দেন মাফিয়াদের। এরপরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে লিবিয়া প্রবাসী স্বামীর সহযোগিতায় পাসপোর্ট ও ভিসা করে ছেলেকে উদ্ধার করতে লিবিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শাহীনুর। গত ৯ জানুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন শাহীনুর বেগম। অবশেষে নানা নাটকীয়তা শেষে ২১ মার্চ মা শাহীনুর ছেলেকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরেন। ছেলে উদ্ধারে মায়ের এমন সাহসী ভূমিকা কুমিল্লাজুড়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
এ খবরে উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের বাড়িতে মা-ছেলেকে দেখতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। শাহীনুর বেগম ও তার ছেলে ইয়াকুব হাসানের সাঙ্গে কথা বলে জানা যায় এমন তথ্য।এ বিষয়ে শাহীনুর বেগম বলেন, লিবিয়ায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে ব্যাঙ্গাজি শহরে অবস্থান করি। পরে পর্যায়ক্রমে প্রথমে বাংলা ভাষা জানেন এমন কয়েকজনকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে সব খুলে বলি। তারা আমাকে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। দূতাবাস ও আইওএমের কর্মকর্তারা সব শুনে আমাকে সাহায্য করেন। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কর্মকর্তারা লিবিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াকুবকে উদ্ধার করেন। গত ২১ মার্চ ছেলেকে নিয়ে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে ফেরেন।
তিনি আরও জানান, প্রায় ছয় মাস বন্দী জীবনে অনাহার, অর্ধাহার, নির্যাতনে ইয়াকুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে উদ্ধারে চার দফায় প্রায় ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে মাফিয়াদের। আমাদের কাছে থেকে যে দালালরা টাকা নিয়েছে তাদের একজন এখন দেশে আছেন। তার বাড়ি সিলেটে। আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।ইয়াকুব জানায়, সেখানে আমাদের খুব অত্যাচার করা হতো। খাওয়ার জন্য একটা রুটি আর পানি দিতো। আমাদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন সাতজন বাংলাদেশি। তাদের একজনের নাম সুজন। বাকিদের নাম মনে নেই। তারাও মাফিয়াদের হাতে অনেক আগে ধরা পড়েন। তবে তারা মাফিয়াদের কিছুটা বিশ্বস্ত। এই সাতজন আমাদের নিয়মিত পেটাতেন। কোনো কথা ছাড়াই হাতের কাছে যা পেতেন তাই দিয়ে পেটাতেন। তাদের কোনো মায়া-দয়া ছিল না। তারাই আমাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছেন।