মো:আসাদুল হক,কুমিল্লা :
গ্রাম্য কবিরাজের ভুল চিকিৎসায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্থো সাজারী বিভাগে এক শিশু এক যুবক পঙ্গুত্ব বরন কাতরাচ্ছেন। এই পৃথক দুইটি ঘটনায় কুমিল্লা বুড়িচং ও লালমাই উপজেলায় গ্রাম্য কবিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই শিশু নাম মারুফ (৮)। বুড়িচং উপজেলার গদানগর ছয়গ্রামের সিএনজি চালক কামাল উদ্দিনের ছেলে।
অপর যুবক আমজাদ হোসেন (১৮)। লালমাই উপজেলার কাতালিয়া গ্রামের আবুল খায়েরর ছেলে। তারা দুই জন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শিশু মারুম বলেন,বাড়ী উঠানে খেলতে গিয়ে তার বাম হাত ভেঙ্গে যায়। ওই দিন তাঁর চিকিৎসার জন্য বুড়িচং কালিকাপুর এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যায় তার বাবা। কবিরাজ আমার হাতটি টেনে সোজা করে বাঁশের বাতা (লম্বা ফালি) দিয়ে বাঁধেন। মারুফের পিতা কামালউদ্দিন বলেন,কবিরাজের চিকিৎসায় তার হাত জোড়া লাগলে তার হাতে আঙ্গুল গুলো লারাচারা করতে পারে না দেখে বুড়িচং মিরপুর এলাকার এক ডাক্তারে কাছে নিয়ে গেলে তিনি বিভিন্ন রকমের ঔষধ দিলেও গত ৩৭ দিনে তার হাতের কোন পরির্বতন না পাওয়া কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্থোপেথিক সার্জারী বিভাগে চিকিৎসা জন্য নিয়ে আসি। তিনি বলেন,আমরা গ্রামের সাধারন লোক না বুঝে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাই। এই কবিরাজের ভুল চিকিৎসা আজ আমার ছেলে পঙ্গুত্ব বরনে কাতরাচ্ছে।
প্রশাসন এই কবিরাজের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে সাধারন মানুষ এই সব অপচিকিৎসা থেকে রক্ষা পাবে।
অপর দিকে কুমিল্লা লালমাই উপজেলার কাতালিয়া গ্রামের আবুল খায়েরর ছেলে আমজাদ হোসেন(১৮)। বাগমারা এক কবিরাজের চিকিৎসা নিয়ে কুমেক হাসপাতে পঙ্গুত্ব বরনে কাতরাচ্ছে। জানা যায় আমজাদ হোসেন উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি পাইপফ্লিট্রারে কাজ করেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এশটি বাড়ীতে পাইপফ্লিট্রারে কাজ করতে গিয়ে ১ তলা ছাদ থেকে উল্টে পরে তার দুই হাত ভেঙ্গে যায়। এ ঘঁনায় তার মামা কামাল হোসেন বাগমারা এক কবিরাজের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করান। আমজাদ হোসেনের হাতের কোন পরিবর্তন না আসায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল হামপাতালে অর্থো পেডিক সাজারী বিভাগে ভর্তি করানো হয়। আমজাদ হোসেন ভাই আব্দুর সামাদ বলেন,আজ কবিরাজের ভুল চিকিৎসায় আমার ভাই পঙ্গুত্বে কাতরাচ্ছেন। এই সব কবিরাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নজর রাখতে হবে। তাদের ধরে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে। এই সব ভুয়া কবিরাজদের না ধরলে সাধারন মানুষ দোখায় পরে পঙ্গুত্ব বরন করবে।
জানা গেছে, ওই সব কবিরাজরা তাদের চিকিৎসালয়ের নামে প্রচারপত্র ও ভিজিটিং কার্ড তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে বিলি করেছেন। কার্ডে লেখা রয়েছে, ‘“হাড় স্পেশালিস্ট ও হাড় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসালয়”। এখানে স্বপ্নে পাওয়া আশ্চর্য বনািজ ওষুধ দ্বারা যেকোনো জটিল ও কঠিন হাড়ভাঙা এবং মচকানোর চিকিৎসা গ্যারান্টি দিয়ে ভালো করা হয়।’ কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারে কথিত কবিরাজদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। আর তাঁদের কথার ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, আসর বসিয়ে হাতুড়ে কবিরাজেরা চটকদার কথায় পেটের ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, বাত, আমাশয়, ডায়াবেটিস, সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, যৌন রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময়ের শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে ওষুধ বিক্রি করছেন। গ্রাম এলাকার সহজ-সরল লোকজন তাঁদের মনভোলানো কথায় বিশ্বাস করে ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
কুমেক চিকিৎসা নিতে আসা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘হাতুড়ে কবিরাজের তেল মালিশ করে আমি পঙ্গু হয়েছি। আর কেউ যেন ভুল করেও হাতুড়ে কবিরাজের ওষুধ না কেনে।’ তিনি বলেন,এসব হাতুড়ে কবিরাজের চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে আসেন।
কুমিল্লার মেডিকেল হাসপাতের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চিকিৎসা শাস্ত্রে ঝাড়-ফুঁকের কোন অস্তিত্ত্ব নেই। কেউ এসব করে থাকলে ধরে নিতে হবে তিনি প্রতারণা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু ভ্রাম্যমান আদালতের ক্ষমতা জেলা প্রশাসনের হাতে, সেহেতু চিকিৎসার নামে এসব অপ-চিকিৎসা প্রতিরোধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির পদক্ষেপ হাতে নেয়া জরুরী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মেডিকেল অফিসার বলেন, একটা সময় ছিল যখন গ্রাম ডাক্তাররা গ্রামের সাধারণ জনগনকে ছোট খাট সমস্যায় চিকিৎসা দিতেন। পরবর্তীতে কিছু অসাধু পল্লী চিকিৎসক শহরে উঠে নিজেদের নামের পিছনে অপ্রাসঙ্গিক কিছু বিশেষনসহ ‘ডাক্তার’ উপাধি লিখে সাধারণ রোগীদের চোখে ধুলো দিয়ে অবৈধ উপার্জণ শুরু করেছে। বর্তমানে এসব ডাক্তারদের দৌরাত্ম সীমা ছড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, এসব হাতুড়ে ডাক্তারদের অপচিকিৎসায় অসুস্থ হয়ে অনেকেই তার কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, এসব ডাক্তাররা ঠিকভাবে ওষুধের নাম লিখতে পারে না। এমনকি লিখতে পারে না বিভিন্ন টেস্টের নামও। বানান ভুলে ভরা প্রেসক্রিপশন দেখলেই তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিধি বোঝা যায়।