Doinik Bangla Khobor

কুমিল্লায় ডিএফও’র যোগসাজশে আওয়ামী দোসর আবুল কালামকে অনিয়মের মাধ্যমে চেক স্টেশনে যোগদানের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিবেদক :
কুমিল্লা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জি. এম. মোহাম্মদ কবিরের যোগসাজশে বন বিভাগের নিয়মনীতি ও বন আইনের তোয়াক্কা না করে আওয়ামী দোসর ও দলীয় পদধারী নেতা ফরেস্ট গার্ড আবুল কালাম আজাদ বাবুলকে চেক স্টেশনে দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে , কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পদধারী নেতা) আবুল কালাম আজাদ বাবুলকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজি ফরেস্ট চেক স্টেশনে কাগজপত্র (টিপি) চেকের নামে বনজ বোঝাই যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজির কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই যোগদানের পেছনে সরাসরি ডিএফও জি. এম. মোহাম্মদ কবিরের অদৃশ্য যোগসাজশ রয়েছে।

বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ তথ্যসূত্রে জানা যায়, আবুল কালাম আজাদ বাবুল বন বিভাগের একটি ছোট পদে কর্মরত থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিলেন অত্যন্ত বেপরোয়া। তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এবং তার বড় ভাইয়ের আওয়ামী সেন্ট্রাল নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বন আইনের তোয়াক্কা না করে ঘুষখোর অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগের একাধিক বন চেক স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব চেক স্টেশনে তিনি বনজ বোঝাই গাড়ির কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে নিয়মিত চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, এর আগেও আবুল কালাম আজাদ বাবুল সুয়াগাজি ফরেস্ট চেক স্টেশনে দায়িত্ব পালনকালে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাকে কুমিল্লা থেকে ফেনী বন বিভাগে বদলি করা হয়। ফেনীতে বছর খানেক দায়িত্ব পালনের পর তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের বন কর্মকর্তা নিশাদ সাহেবের সহযোগিতায় পুনরায় কুমিল্লায় বদলি হয়ে আসেন।
বন বিভাগের লোকজনের ভাষ্য মতে, কুমিল্লায় ফিরে এসেই তিনি ডিএফও জি. এম. মোহাম্মদ কবিরকে ম্যানেজ করে পুনরায় সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজি ফরেস্ট চেক স্টেশনে যোগদান করেন। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। যোগদানের পর থেকেই স্টেশন কর্মকর্তা নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে আবুল কালাম আজাদ বাবুল বনজ বোঝাই প্রতিটি গাড়ি থেকে কাগজপত্র চেকের নামে প্রকাশ্যে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে—একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও সরাসরি আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের পদধারী নেতা হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তার চাকরিতে বহাল থাকা কীভাবে সম্ভব? রাজনৈতিক পরিচয় ও দলীয় প্রভাব ব্যবহার করে তিনি কীভাবে বারবার নিজ জেলায় বদলি হয়ে গুরুত্বপূর্ণ চেক স্টেশনে দায়িত্ব পাচ্ছেন এবং বন আইনের সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন—তা নিয়ে জনমনে তীব্র প্রশ্ন ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ফরেস্ট গার্ড আবুল কালাম আজাদ বাবুলের সুয়াগাজি চেক স্টেশনে যোগদান ও কাগজপত্র (টিপি)চেকের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে কুমিল্লার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি. এম. মোহাম্মদ কবিরের সরকারি ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিক দিন ধরে অসংখ্যবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে লিখিতভাবে বিষয়টি অবগত করা হলেও তিনি কোনো ধরনের জবাব দেননি।
এদিকে, কুমিল্লা বন বিভাগের ডিএফও জি. এম. মোহাম্মদ কবির, সুয়াগাজি চেক স্টেশন কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন এবং আওয়ামী দোসর ও পদধারী ইউনিয়ন নেতা ফরেস্ট গার্ড আবুল কালাম আজাদ বাবুলের বিরুদ্ধে ওঠা এসব গুরুতর অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।