কুমিল্লা প্রতিনিধি :
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে এসে হাসপাতালের অবহেলায় আবু সাঈদ নামে এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে নগরীর টমচমব্রীজ এলাকায় সংলগ্ন হলি ফ্যামেলী হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এছাড়াও পরিবারের কাছে নবজাতকের মৃত্যুর তথ্য গোপন রেখে দীর্ঘ সময় আইসিওতে রাখার পর পরিবারকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং নবজাতকের মাকে হাসপাতালে আটক রেখে বাচ্চার লাশ নিয়ে যেতে বাধ্য করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি রফাদফা করতে ভুক্তভোগী পরিবারকে নিয়ে বসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন তথ্য পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে এর সত্যতা পাওয়া যায় । সরজমিনে ঘটনার দিন রাতে ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসপাাতাল কর্তৃপক্ষ এলাকার ১৫-২০ জনকে নিয়ে বসে আলোচনা করে ভুক্তভোগীর থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে তা উপস্থিত লোকদের নিকট বিতরণ করেন। এমনকি উপস্থিত একজন পরিচয় গোপন রাখা সাংবাদিককেও সেই টাকা দিতে চেষ্টা করেন একজন।
পরিবারের দাবি, সোমবার (২১শে অক্টোবর) রাত ২টার দিকে কুমিল্লা সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেইটের ভিতরে গেলে হাসপাতালের স্টাফ পরিচয়ে এক দালাল রোগীর কাগজপত্র হাতে নিয়ে মেডিকেলের ডক্টর হলি ফ্যামেলী হাসপাতালে আছেন বলে সেখানে নিয়ে যান। পরে সেখানে ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগম নামে ওই রোগীকে ভর্তি করেন এবং রোগীর চিকিৎসার খরচ বাবদ টাকা চেয়ে নগদ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে কৌশলে পালিয়ে যান।
অন্যদিকে ভর্তিকৃত রোগী ফাতেমা বেগম ওই দিনই ভোররাত ৪টার দিকে সিজারের মাধ্যমে জীবন্ত এক নবজাতকের জন্ম দেন তিনি। পরে সেই নবজাতকের নাম রাখেন পরিবার আবু সাঈদ। নবজাতকের বাবার অভিযোগ, সিজারের সময় ফাতেমা বেগমের স্বামী সাইফুল ইসলামের অনুপস্থিতিতে পুরুষ মানুষ দিয়ে সিজার করিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফাতেমা বেগম বলেন, যিনি আমার সিজার করেছেন তিনি পুরুষ মানুষ ছিলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি কোন ডক্টর ছিলেন না। তিনি আমার সঙ্গে অত্যান্ত খারাপ ব্যবহার করেছেন। এমনকি যে মৃত বাচ্চাটি আমাদেরকে দিয়েছে সেই বাচ্চাটি আমার নয়, তারা বাচ্চা পাল্টিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
বাচ্চার বাবা জানান, বাচ্চাটি জন্মের পর ভালো ছিলো এবং স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু বাচ্চাটি তারা মায়ের কাছে না দিয়ে তারা অক্সিজেন দিতে হবে বলে নিয়ে যায়। পরে সোমবার (২১শে অক্টোবর) ভোররাত ৪টা থেকে বুধবার (২৩শে অক্টোবর) তারিখ সকাল ১১টা পর্যন্ত বাচ্চাটি স্বাভাবিক থাকলেও বাচ্চাকে ৩ ব্যাগ রক্ত দিতে হবে বললে তা আমি এনে দেই। পরের দিন রাত ২টা ২০ মিনিটে আমাকে ফোন দিয়ে জানানো হয় যে, বাচ্চার অবস্থা খুবই গুরুতর। এসময় আমি বাচ্চা দেখতে চাইলে তা দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে জুম্মার নামাজের পর আমাকে ফোন দিয়ে ৫ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে যেতে বলেন তারা। ৫ মিনিট পরে আসলে আপনার বাচ্চাকে আর দেখতে পাবেন না বলেন হাসপাতাল ম্যানেজার। পরে আমি ৭/৮ মিনিটের মধ্যে উপস্থিত হলে আমাকে জানানো হয় আমার বাচ্চা মারা গেছে। এসময় আমি বাচ্চা দেখতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দেখতে না দিয়ে বাচ্চা ও বাচ্চার মাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন এবং হাসপাতালের বিল বাবদ ৭৬ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু আমার কাছে এতো টাকা তখন না থাকায় তখন তারা বাচ্চা ও বাচ্চার মাকে আটকিয়ে রেখে টাকা নিয়ে আসতে বলেন।
পরে ওই দিনই রাত ১টার দিকে আমি কিছু টাকা নিয়ে আসলে তারা তাতে রাজি না হয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে খারাপ ব্যবহার করেন এবং মামলার ভয় দেখান। এসময় বাচ্চার মাকে আটকিয়ে রেখে মৃত বাচ্চা নিয়ে যেতে বাধ্য করেন গভীর রাতে এবং হাসপাতালের ৭৬ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন তারা। পরে আমি বাচ্চার মাকে হাসপাতালে রেখে বাচ্চা নিয়ে এসে দাফন করে দেই। পরের দিন শনিবার ও রবিবার আমাকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন ধরণের গালিগালাজ করে মামলার কথা বলে টাকা নিয়ে আসতে বলেন হসপিটালে। পরে সোমবার (২৮শে অক্টোবর) সন্ধা ৭টা ৪০ মিনিটে কয়েকজনকে নিয়ে গেলে তারা আমার থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে আমার স্ত্রী ও বাচ্চার মাকে মুক্তি দেন হলি ফ্যামেলী হসপিটাল। আমি এ ঘটনায় বিচার চাই এবং আমি আমার বাচ্চা ফিরিয়ে চাই। এ বিষয়ে আমি ঘটনার পরের দিন মঙ্গলবার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে হলি ফ্যামেলী হাসপাতালের বক্তব্য জানতে চাইলে মালিক পক্ষের রকিব নামে একজন উপস্থিত হয়ে বলেন, ভুক্তভোগী তো আমাদের সাথে কথা বলে চলে গেছে, তাহলে আর কি। এসময় হাসপাতালের বৈধ কোন কাগজপত্র আছে কি না জানতে চাইলে কোন উত্তর দেননি তিনি। রোগীর কাগজপত্র দেখতে চাইলেও তা দেখাতে পারেননি তিনি। পরে হাসপাতালের মালিক পক্ষের আরেকজন সব দোষ স্বীকার করে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে চেষ্টা করেন।
এ ঘটনায় কুমিল্লার সিভিল সার্জন এর কার্যালয়ের সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতারকে ঘটনাস্থল থেকে সোমবার রাত ১০টা ৮ মিনিটে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।