এম শাহীন আলম : পর্ব-১
বাংলাদেশ জাতীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক কারিগরি প্রশিক্ষণ সেবার অংশ হিসেবে দেশের সকল অঞ্চলের ন্যায় খুলনায় যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ করে দেয়াই মূল লক্ষ্য হলো টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার অর্থ্যাৎ টিটিসির। কিন্তু খুলনা তেলিগাতী'র কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিধি লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মাধ্যমে আখের গোছানোর অভিযোগ উঠেছে স্বয়ং অধ্যক্ষ এবং দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এখানে অধ্যক্ষ কাজী বরকাতুল ইসলাম চালাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের ভবন তৈরিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লোপাটের ফন্দী, ভর্তি পরীক্ষা নামে চালাচ্ছেন নাটকীয় কায়দায় পছন্দের লোকদের রাখছেন চুড়ান্ত তালিকায়, সরকারি গাছ কর্তন, আসবাবপত্র ও মালামাল আত্মসাৎ সহ একাধিক অবৈধ কর্মকান্ড। অন্যদিকে অত্র প্রতিষ্ঠানের দেশ-বিদেশ ড্রাইভিং শাখার প্রশিক্ষক মোঃ মমিনুল হক পূর্বের নারী শ্লীলতাহানী সহ তার জুনিয়র প্রশিক্ষকের সাথে যোগসাজশে চালাচ্ছেন তাদের ভর্তি সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য ও প্রতিষ্ঠানটির গেটের পাশে থাকা বিপুল দোকানদারের মাধ্যমে ভর্তি বাণিজ্য, সিভিল সার্জন অফিসে শারীরিক ফিটনেস ও ডোপ টেস্টের নামে কমিশন বানিজ্য। এমন গুরুতর অভিযোগ করেছেন ভর্তি ইচ্ছুক যুবক-যুবতী এমনকি চলমান ও বিগত দিনের প্রশিক্ষণার্থীরা। তারা মনে করেন এখানে মামা খালু ছাড়া প্রশিক্ষণ নেয়া অসম্ভব। সকল নিয়মনীতি অমান্য করে এখানে চলে ভর্তি বাণিজ্য। সরেজমিনে গিয়ে একাধিক সূত্রে জানা যায়, এখানে প্রশিক্ষক মোঃ মমিনুল হক নারী শিক্ষার্থীদের উপর সু-কৌশলে পূর্বের মতো যৌন হয়রানি করে আসছে আর তার সাফাই গাইতে থাকে অধ্যক্ষ কাজী বরকাতুল ইসলাম আর তার প্রধান কারণ হলো অধ্যক্ষের দুর্নীতির সাক্ষী হিসেবে তিনিই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। আর এজন্য তিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকে বদলী হওয়ার জন্য আবেদন করলেও অধ্যক্ষ বদলী হতে দিচ্ছেন না। অনেকেই বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য ও শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সু-কৌশলে অর্থ হাতানো, তদরীর বানিজ্যের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পছন্দের ট্রেডে ভর্তি করানো, দালাল নির্মূল না করে স্থানীয় দোকানদারকে দিয়ে ভর্তি করানোসহ একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতি বিগত দিনে হয়েছিল এখনো অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে প্রকৃত প্রশিক্ষণ পাওয়ার মত শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। অনেকেই এখানে সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি মনোবল হারিয়ে ফেলছে। এতে সমাজে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।তবে এই প্রতিষ্ঠানের ট্রেড প্রশিক্ষকেরা এসব অভিযোগ স্বীকার করলেও অধ্যক্ষ উক্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। অবশ্য শিক্ষার্থী সেজে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ভর্তি শাখার মধ্যে ঢুকে গোপন ক্যামেরায় নিয়ে অনুসন্ধান কালে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি সহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির মধ্যে দিয়ে শিক্ষকদের পাতানো দালাল এমনকি স্থানীয় দোকানদারকে দিয়ে রহস্যজনকভাবে চালানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ড্রাইভিং শাখার ভর্তির কার্যক্রমের সত্যতা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কিছু প্রশিক্ষক এসব অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে অধ্যক্ষের নিকট দেখা করতে বলেন এবং প্রত্যকে বলেন অধ্যক্ষ এখানের সকল চাবিকাঠি। তার খুঁটির জোর খুবই শক্তিশালী। তিনি বড় ধরনের অর্থ আত্মসাতের উদ্দশ্যে নিয়েই তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিশেষ সূত্রে জানা যায়। স্হানীয় লোকজন জানান তিনি এখানে আসার পর থেকে এখানে সকল শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে ৫৯ জনের গণস্বাক্ষরকৃত লিখিত ১২টি অভিযোগ প্রেরণ করা নিয়ে গনমাধ্যমে যে রিপোর্ট হয়েছিল তাতে তিনি অনুতপ্ত নন। যেকোন মূল্যে দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে তিনি তার কাজ পূর্বের ন্যায় অব্যাহত রেখেছেন। তার কোন প্রশিক্ষক অধ্যক্ষের সিদ্ধানের বাইরে গেলে গোপালগঞ্জে বাড়ী থাকায় দলীয় প্রভাবের নাক লজ্জা ও অধ্যক্ষের রক্তচক্ষু উপেক্ষা কেউ প্রকাশ্যে আসতে রাজি নয় বলে জানান তারা।তারৈ জানান তার বেশ কিছু প্রশাসনের সাথে হাত থাকায় মামলা দিয়ে তুলে এনে ভয় দেখিয়ে থাকেন বলেও জানা যায়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসংখ্য স্বাক্ষ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তার এ ধরনের বক্তব্যে স্থানীয় সচেতন মহল ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। অনতিবিলম্বে এই দূর্ণীতিবাজ অধ্যক্ষ সহ তার সহযোগী অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান অসংখ্য নারী ও পুরুষ প্রশিক্ষণার্থীসহ অভিভাবক বৃন্দ। সর্বশেষ অত্র প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতি দূর করে কর্মসংস্থানে পিছিয়ে থাকা খুলনায় বেকার জনগোষ্ঠীকে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, দক্ষ জনশক্তিতে গড়ে তুলবে এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের। অনুসন্ধান অব্যাহত চলমান আগামী পর্বে অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রশিক্ষকদের বিরুদ্ধে সকল অপরাধ ও দুর্নীতির ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।