বিশেষ প্রতিবেদক :
খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার ০৭ নং আমিরপুর ইউনিয়নের ০৯ নং ওয়ার্ডের মেজবাহ উদ্দীন মোড়ল মেম্বারের নেতৃত্বে বড় কড়িয়া আতালের চর নামক স্থানে একদল কুচক্রী মহল অবৈধ ভাবে মেতে উঠেছে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানোর মহা উৎসবে। এতে করে এলাকার জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে দেখার কেউ নাই। সরকার নিষিদ্ধ এ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত মেজবা মেম্বার সহ সোহাগ সানি মফিজ এরশাদ বাবু মাস্টার এদের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি চুল্লি জ্বালিয়ে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা তথা জীববৈচিত্র্যের শ্বাস-প্রশ্বাসের একমাত্র অবলম্বন গাছ আর শুরু হয়েছে এই গাছ কেটে বন উজাড় করার এক মহা প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতার ফসল কাটা গাছ দিয়ে বাঁধাহীন ভাবে দেদারসে চলছে কাঠ পোড়ানো চুলা। প্রত্যান্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন বনজ ও ফলজ গাছ কেটে এসব চুল্লিতে কাঠ সরবরাহ করা হচ্ছে।কাঠ ও ইট পোড়ানোর সময় নির্গত হয় দূষিত কালো ধোঁয়া আর এসব চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর নামমাত্র অভিযান চালাচ্ছে। ফলে ভয়ংকর হুমকিতে পড়েছে অত্র এলাকার জনস্বাস্থ্য,কমে যাচ্ছে জমির উর্বরতা। এতে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে বনজ সম্পদ অপরদিকে বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার কারণে শ্বাস প্রশ্বাসজনিত নানা মরণব্যাধি দেখা দিচ্ছে এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি মানুষের মধ্যে। এসব চুল্লিতে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন বৈধ অনুমতি না থাকলেও সুচতুরভাবে বিভিন্ন সুকৌশল খাটিয়ে দেদারসে এই অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,এই অবৈধ কয়লা ও ইট পোড়ানোর মালিকেরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ার পাশাপাশি প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের মাসোহারা দিচ্ছে। যার কারণে নাম মাত্র অভিযান পরিচালনা হলেও পুনরায় একই পথে এই অবৈধ চুল্লির ব্যবসা বেড়েই চলেছে। অনুমোদনহীন অবৈধ গড়ে ওঠা এসব কয়লা তৈরির চুল্লিতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হয়।চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখ গুলো ইট ও মাটির প্রলেপ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং খোলা মুখ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আগুন দেয়া শেষ হলে পুনরায় মুখটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এভাবে আগুন জ্বালিয়ে রেখে প্রায় (৫-৭) দিন পর চুল্লি থেকে কয়লা বের করা হয়ে থাকে।এসময় প্রতিটি চুল্লি থেকে প্রায় (৩৫-৪০) হাজার টাকার কয়লা পাওয়া যায়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার (২০০-৩০০)শত মণ কাঠ পোড়ানো হয়। আগুনে পোড়ানো এই কয়লা শীতল হলে নদী ও সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। পরিবেশ আন্দোলন সংগঠনের নেতারা বলেন,কয়লা পোড়ানোর চুল্লির কারখানা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। এখানে সারাদিন কালো বিষাক্ত ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন ভাবে এটার প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে কোন প্রলোভনে না পড়ে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকরের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার মূলে যদি সরকারি কর্মকর্তাগণ আর্থিক প্রলোভনে পড়ে এভাবে কয়লা পোড়ানোর মতো অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকেন, অভিযান পরিচালনা না করে পরিবেশ তথা দেশের মারাত্মক ক্ষতি করতে সহায়তা প্রদান করেন তবে অচিরেই এই সুন্দর বিশ্ব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চুল্লির মালিক বলেন, আমাদের লিখিত কোন অনুমতি না থাকলেও মুখে মুখে অনেকেই অনুমতি দিয়েছেন।এ বিষয়ে দায়িত্বরত আইনের লোকদের কোন সমস্যা হচ্ছে না তাতে পরিবেশের ক্ষতি হলেও বা কি? তাছাড়া আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত মাসোহারা দিয়ে এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে এসেছি, আসছি এবং ভবিষ্যতেও আসবো। আমাদেরকে কেউ কিছু করতে পারবে না।আমরা নিজেরা এখানে থাকি না,কর্মচারী দিয়ে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করি। তাছাড়া এই বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও তাতে কোন সমস্যা নেই। কোন ক্ষেত্রে যদি প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অভিযান পরিচালনা করার চিন্তাও করেন তবে আমরা আগে থেকেই সাথে সাথে জানতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের কোন ভয় নেই।