বিশেষ প্রতিবেদক :
খুলনার রুপসা উপজেলায় নৈহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব এম. এম. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। নৈহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অন্তর্গত সকল সম্পত্তি খুলনা মহানগরীর গা ঘেষা হওয়ায় সম্পত্তির মূল্য উচ্চমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নায়েব সাহেব ও তার সহযোগীরা সাথে দালাল চক্র মিলে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষের রাম রাজত্ব চালাচ্ছে নৈহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসটিতে। নায়েব এম.এম. মনিরুজ্জামান ( শ্রীফলতলা,আজগাতি ও নৈহাটি) তিনটি ইউনিয়নের ৪২টি মৌজার ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নৈহাটি ইউনিয়নে ভূমি কর্মকর্তা এম.এম মনিরুজ্জামান তার অফিসকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। অর্পিত সম্পত্তি উচ্চ আদালতের রায় পাওয়ার পরেও মোটা অংকের অর্থ দাবি করে না পাওয়ায় মিউটেশনের তদন্ত রিপোর্ট আটকে রাখাসহ বিলান সম্পত্তি ডাঙ্গা দেখিয়ে ২০০শ টাকার খাজনা ৮০০০/আট হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন এই নায়েব। একাধিক স্বল্প টাকার খাজনা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে। নায়েবের দাবিকৃত অর্থ কেউ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের সম্পত্তি পূর্বের ভিপি সম্পত্তি বলে খাজনা দেওয়া থেকে আটকে রাখেন এই কর্মকর্তা যা পূর্বের মালিকের নিকট থেকে ক্রয় করার পর মিউটেশন ও খাজনা দেওয়া আছে এ ধরনের একাধিক হতদরিদ্র ব্যক্তি টাকার অভাবে খাজনা না দিতে পেরে আরএস রেকর্ড করাতে পারছে না। তাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে নানা অজুহাত ও তালবাহানা করে ঘুরিয়ে আসছেন বলে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত “ফি”র পরিবর্তে কন্ট্রাকের মাধ্যমে নামজারী করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এই নায়েবের বিরুদ্ধে। গোপন সূত্রে জানা যায়, এসকল ঘুষ বাণিজ্য তিনি সুকৌশলে তার অফিস সহায়ক রবিউল ইসলাম কে দিয়ে করিয়ে আসছেন। কেউ ঘুষ না দিয়ে নামজারী করাতে পারছেন না তাই সেবা গ্রহীতাদের বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়ে নামজারী করাতে হচ্ছে এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অর্থ ছাড়া কোন সেবা মেলে না নৈহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা গ্রহীতাদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ সময় বেশ ক'জন সেবা গ্রহীতার সাথে কথা বলে জানা যায়, নৈহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারীর রিপোর্ট প্রস্তুতের জন্য সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে ০৮(আট) হাজার থেকে ২৫(পঁচিশ) হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন অফিস সহায়ক রবিউল ইসলাম আর তার থেকে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব এম.এম মনিরুজ্জামান। অত্র ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেবাগ্রহীতা বলেন, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবের সাথে তার ১০ (দশ) হাজার টাকায় নামজারির রিপোর্ট প্রস্ততের জন্য কন্ট্রাক্ট হয়। পরে সেটি সাড়ে ০৯ (নয়) হাজার টাকায় করে দিবে বলে ঠিক হয়। তিনি আরোও বলেন, ইলাইপুর গ্রামের এক যুবকের কাছে নামজারির রিপোর্টের জন্য ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা দাবী করেছে নায়েব মনিরুজ্জামান। এদিকে ঘুষ আদায়ের ব্যপারে খোঁজ নিতে নৈহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে দেখা যায় সাংবাদিকদের সাথে ভূমি অফিসের নায়েব এম.এম মনিরুজ্জামান হাস্যকর,অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ আচরন করেন। এসকল ভয়ানক অপকর্ম ধামা চাপা দেয়ার জন্য অফিস সহায়ক রবিউল ইসলাম কে দিয়ে অত্র অঞ্চলের একাধিক ভূমিদস্যু ও দালালের মাধ্যমে সুকৌশলে এই অবৈধ কর্মকান্ড চালাচ্ছেন এই ভূমি কর্মকর্তা এম.এম মনিরুজ্জামান। ঘুষ না দিতে পারায় হতদরিদ্র, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষ এখন নাজেহাল হয়ে পড়েছে। আজ তারা সরকারি বিনামূল্যে সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঘুষ বাণিজ্য, দালাল চক্র বিষয়ে রুপসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সাজ্জাদ হোসেন মুঠোফোনে উক্ত বিষয়ে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের নিয়োজিত সরকারি জেলা ও উপজেলা দপ্তরে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা যতদিন পর্যন্ত তাদের অফিসারদের অপরাধ গুলোকে মনিটরিংয়ের সাথে শক্ত হাতে দমন না করবেন ততদিন দেশের জনগণ অনিয়ম ও দুর্নীতির বেড়া জাল থেকে পরিপূর্ণ মুক্তি পাবে না।