রবিউল আলম, গাজীপুর থেকে :
গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল মেট্রোপলিটন থানার মিরেরবাজার এলাকায় রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি দেদারসে ‘চিকিৎসা’সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তার চেম্বারে প্রতিদিন রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এলাকার ‘বড় ডাক্তার’ হিসেবে তিনি পরিচিত। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসা শাস্ত্রে তার কোনো ডিগ্রি নেই।
স্থানীয়রা জানান, ডিগ্রি ছাড়াই নামের পাশে ডাক্তার লিখে রীতিমতো চেম্বার খুলে বসেছেন রবিউল ইসলাম। দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে এভাবেই ‘চিকিৎসা’ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের নামে প্যাড করে রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট দিচ্ছেন, রোগী দেখার পর প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন।
রবিউল নিজেকে দাবি করছেন ভার্সিটি পড়ুয়া হিসেবে। শোনাচ্ছেন ডাক্তারি বিদ্যায় বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জনের কথা। বলছেন করোনাকালীন আর্তমানবতার পাশে থেকে জীবনবাজি রেখে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার বীরত্বের গল্প।
শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় প্রায়ই দেখা যায়, ডাকঢোল পিটিয়ে মাইকিং করে বিভিন্ন অফারসহ রবিউলের নানা প্রচার। তার চেম্বারের সাইনবোর্ডে দেশের বিখ্যাত নামকরা ডাক্তারদের নামের তালিকাসহ রোগী দেখার দিন সময় লেখা রয়েছে। স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা রবিউলের অপচিকিৎসায় যে কোনো বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, রবিউল ভুল চিকিৎসায় মানুষকে ঠেলে দিচ্ছেন মৃত্যুঝুঁকিতে। টেস্টের নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা কমিশন। রবিউলদের মতো ডিগ্রিহীন ডাক্তারদের কারণে রাতারাতি মিরেরবাজার এলাকায় গড়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আধুনিক কোনো মেশিনপত্র ছাড়াই সেগুলোতে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
মিরেরবাজার মা ও শিশু হাসপাতাল গলিতে রবিউলের চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, বয়স্ক নারী-পুরুষ রোগীর ভিড়। সিরিয়াল দিয়ে তিনি রোগী দেখছেন সকাল সন্ধ্যা। ভিজিট নেন ২০০ টাকা। বিভিন্ন জটিল রোগের জটিল টেস্ট লিখে দিচ্ছেন তিনি অবিরাম। মেডিসিন লিখছেন ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের মতো।
চেম্বারে গিয়ে দেখা গেল লাইন ধরে চেয়ারে বসে আছেন রোগীরা। কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা অনেক দিন ধরে রবিউলের নিয়মিত রোগী। প্রেসক্রিপশনে দেখা যায় কতগুলো টেস্টও দিয়েছেন তিনি।
কেয়া নামে এক রোগী প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বলেন, আমি অনেক দিন ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমরা তো জানি তিনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তার ডিগ্রি নেই এ কথা তো জানতাম না।
স্থানীয় তালটিয়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ জানান, তিনি রবিউলের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন। তার ভুল চিকিৎসার কারণে দীর্ঘদিন ভোগে অবশেষে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।
এ বিষয়ে পূবাইল থানা পল্লী চিকিৎসক সমিতির সহসভাপতি ইকবাল হোসেন জানান, রবিউলের কোনো ডিগ্রি নেই। তিনি টেস্টসহ প্রেসক্রিপশন দিতে পারেন না।
প্রেসক্রিপশন ও টেস্ট লিখতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম জানান, আমার ভুল হয়েছে। আমাকে বললে এখান থেকে চলে যাব। ডিগ্রির বিষয়ে তিনি বলেন, পল্লী চিকিৎসক হিসেবে কোর্স করেছি। করোনাকালে ডাক্তারের অভাব ছিল, তাই সেই সময়টা থেকে সেবা করতে হাত পাকা হয়ে গেছে।
সিভিল সার্জন অথবা প্রশাসনের কেউ জানে কিনা এমন প্রশ্ন করলে ভুয়া ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি জানে।
ডিগ্রি ছাড়া চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের সিভিল সার্জন খাইরুজ্জামান বলেন, প্রয়োজনীয় তথ্য দেন, ব্যবস্থা নেব জরুরি ভিত্তিতে।