নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকার আশুলিয়ায় একাধিক ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামি সবেদ আলী প্রকাশ্যে বীরদর্পে চলাফেরা করলেও তাকে এখনো গ্রেপ্তার না করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকায় তীব্র প্রশ্ন ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি প্রকাশ্যে অবস্থান করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে এবং ন্যায়বিচার নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে।
এলাকাবাসীর মধ্যে চাউর রয়েছে, থানা পুলিশের সঙ্গে মাসিক চুক্তিতে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে সবেদ আলী গ্রেপ্তারের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। যদিও এ অভিযোগের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্তের তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে পুলিশের দীর্ঘদিনের নিষ্ক্রিয়তা এসব অভিযোগকে আরও জোরালো করছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
একটি সূত্র জানায়, আলোচিত শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের পলাতক আসামি ফয়সালের সঙ্গে সবেদ আলীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন এবং পালাতে সহযোগিতা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের দাবি, তার ব্যবহৃত ১৫–২০টি বিভিন্ন কোম্পানির সিমকার্ড পর্যালোচনা করলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও যোগাযোগের সূত্র পাওয়া যেতে পারে।
স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, সবেদ আলী পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এবং নিজেকে তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, অস্ত্র ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও জমি দখল, মাদক ব্যবসা সহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অল্প সময়েই তিনি বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান বলে দাবি এলাকাবাসীর।
অভিযোগ রয়েছে, গ্রেপ্তার না হওয়ায় সবেদ আলী দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তিনি প্রকাশ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
এলাকাবাসী জানায়, বাইপাইল কাচাবাজার এলাকায় সবেদ আলীর একটি দুইতলা ভবন রয়েছে, যেটি তার ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর আস্তানা রয়েছে এবং সেটিকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি ওই কাচাবাজার এলাকায় ট্রাকযোগে সীমান্ত এলাকা থেকে ফেনসিডিল আনা হয় এবং এই অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও তার হাতে বলে দাবি করা হচ্ছে।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো—তার এসব অপকর্ম ও অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তাকে ধরে এনে ওই স্থানে আটকে রেখে তথাকথিত বিচার-এর নামে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
সবেদ আলী আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার বগাবাড়ির বাসিন্দা এবং মৃত সদর আলীর ছেলে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে এলাকাবাসীর প্রশ্ন—যদি এসব অভিযোগ মিথ্যা হয়, তবে কেন পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করছে না? আর যদি অভিযোগ সত্য হয়, তবে একজন হত্যা মামলার আসামি কীভাবে প্রকাশ্যে ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারে?
সচেতন নাগরিকদের মতে, নিরপেক্ষ তদন্ত ও দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমেই এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া সম্ভব। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।