বিশেষ প্রতিবেদক :
অতি মুনাফা লোভী এবং প্রতারক চক্রের সংগঠনে সদস্য হলেই এমবিবিএস পাস না করেও অষ্ট রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। শুনতে বিষয়টি অবাক লাগলেও বাস্তবে এমনটাই ঘটে ঢাকার আশুলিয়া – সাভার ও ধামরাই এর বিভিন্ন এলাকায়। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে বড় ডির্গ্রী লিখা হলেও , এমবিবিএস পাস না করেও অষ্ট রোগের চিকিৎসক বনে গেছেন তারা। বিশ্বস্হ সূএে জানা যায়, রোগীদের অস্ত্রোপচার এর কাজও করছেন তারা । কিন্তু তাদের পরিচয় হলো তারা সকলেই পল্লী চিকিৎসক ।
অনুসন্ধানে জানা যায় এই প্রতারক চক্র একটি তথা কথিত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আরএমপি (রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার) কোর্স করেই এমবিবিএস চিকিৎসকের মতোই করছেন জটিল এবং সর্ব-প্রকার কঠিন রোগের চিকিৎসা। ডিজিটাল ব্যানার ও চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের নামে ভিজিটিং কার্ড ও প্যাড ছাপিয়ে আইন অমান্য করছেন তারা।
স্বাস্থ্য দপ্তরের সরকারি কোন নির্দেশনা না মেনে তাদের নামের আগে পদবীতে লিখছেন “ডাক্তার”। তাদের মনগড়া ভুল চিকিৎসা ও ভূলবাল হর-হামেশা নামী দামী কোম্পানীর মাত্রাঅতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখার কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের।
এসব হাতুড়ে ডাক্তার নামধারী এই পল্লী চিকিৎসকদের ওপর স্বাস্থ্য প্রশাসন কিংবা স্হানীয় সিভিল সার্জন,উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহ কারোই নজর বা নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। এসব হাতুড়ে ডাক্তারদের বিষয়ে সরকারি কোন জোর তদারকি না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন সেবা নিতে আসা অসংখ্য মানুষ।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এসব হাতুড়ে চিকিৎসকরা আরএমপি, ডিএমএফ ও এলএমএএফ কোর্স করে নামের আগে “ডাক্তার” লিখে রোগী দেখলেও এই পল্লী চিকিৎসকদের রোগী দেখার আইনগত অনুমোদন বা যোগ্যতা কোনোটাই নেই। এই চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকেই ন্যূনতম এসএসসিও পাস পর্যন্ত করেননি এমনও নজির রয়েছে ।
সাধারণ রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান এবং জটিল-স্পর্শকাতর রোগীদের বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে প্রেরণের নিয়ম। অথচ তারা করছেন ঠিক এর উল্টো। এসব হাতুড়ে চিকিৎসকরা দেদারছে এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসার নামে সাধারণ-জটিল সকল রোগের অপ-চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ ধরনের অপ-চিকিৎসকদের বিষয়ে তারা অবগত রয়েছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসনকে প্রতিদিন অনেকগুলো সরকারি কাজ সম্পাদন করতে হয়। এর বাইরে বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা রোজই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন।
জানা যায়,এই বিষয়টি নিয়েও তারা এর আগে অসংখ্যবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন। তবে জনস্বাস্থ্য’র বিষয়টি সবার আগে। তাই শিগগিরই এ ব্যাপারে বেশি বেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বিশ্বস্হ সূএে জানা যায় । ‘বিএমডিসি অ্যাক্ট অনুযায়ী এমবিবিএস পাসকৃত চিকিৎসক ও ডেন্টাল সার্জন ছাড়া কাউকেই তাদের নামের আগে “ডাক্তার” লিখতে দেওয়া হবে না। এছাড়া তাদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্র যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এদিকে এই সুযোগ ব্যাবহার করে ওষুধ প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে ঢাকার সাভার আশুলিয়া ধামরাই সহ সারাদেশে দুই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসীতে চলে মানহীন কোম্পানীর বহু ওষুধ। অভিনব কায়দায় সদস্য বানিয়ে পল্লী চিকিৎসকদের ব্যাবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সঙ্গবদ্ধ প্রতারক চক্র।
দীর্ঘদিন যাবত দুইটি ভুয়া ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কৌশলে জন-প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তারাও প্রতারিত হয়েছেন। কেউ বাধ্য হয়ে কেউ বা সমাজে খ্যাতি অর্জনে ক্রেস্ট ও অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার আশায় জেনে বুঝে নিয়মিত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তবে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই রয়েছে পল্লী চিকিৎসক।
প্রথমেই তারা সৌজন্য সাক্ষাতের নামে স্থানীয় এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও স্বাস্থ্য বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাদের নেত্রী স্থানীয়দের সাথে ছবি তুলে মানহীনকৃত কোম্পানির অর্থায়নে অনুষ্ঠান আয়োজন করে ক্রেস্ট ও অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পরে পাড়া মহল্লার বিভিন্ন ফার্মেসিতে ওই মানহীনকৃত কোম্পানির ওষুধ চালাতে বাধ্য করা হয়।
শুধু তাই নয় এককালীন মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অল্প-শিক্ষিত অযোগ্যদের হাতে সাভারের ব্যাংক কলোনি ও মজিদপুর এলাকা থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকেন তারা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের নেপথ্যে রয়েছে দুই শীর্ষ প্রতারক, সাইনবোর্ডধারী সাংবাদিকসহ চক্রের তিন ডজন প্রতারক সদস্য।
বিশেষ অভিযানের জন্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইন প্রয়োগকারী একটি সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযোগের দীর্ঘ অনুসন্ধান করে সত্যতা মিলেছে। এদের ধরতে যে কোন সময় অভিযান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, প্রতারক চক্র দুই ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে প্রমাণ সহ লিখিত অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।