ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লা অংশে বেড়েছে ছিনতাইকারী ও ডাকাতের উৎপাত

অপরাধ

মাহফুজ বাবু :
কুমিল্লার ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কে দিনে এবং রাতে ডাকাত ও ছিনতাইকারীর উৎপাত বেড়েছে আশংকাজনক হারে। কখনো গাড়িতে যাত্রীবেশে কখনো বা প্রাইভেটকার ও মারুতি মাইক্রোবাসে সঙ্ঘবদ্ধ এসব ছিনতাইকারী ও ডাকাত চক্রের কবলে পরে সর্ব শান্ত হচ্ছেন অনেকেই। গত কয়েক মাসে এমন বেশ কিছু অভিযোগ শোনা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা থানা পুলিশে লিখত অভিযোগ বা মামলা করেন না। এতে করে দিন দিন মহাসড়কে বেড়েই চলেছে ছিনতাই ডাকাতি সহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

সম্প্রতি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে নাজিরা বাজার এলাকার বিভিন্ন অংশে দিনে এবারের রাতে প্রাভেটকার, মাইক্রোবাস, মারতী গাড়ী সহ বিভিন্ন যানবাহনে নানা কৌশলে যাত্রী উঠিয়ে আবার কখনো বা চলন্ত গাড়ি ও বাইকযোগে এসে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাথে থাকা টাকা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ২২নভেম্বর সোমবার দুপুর ১টায় জেলার বুড়িচং উপজেলার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কাবিলা ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের কেন্টিনের ম্যানেজার মোঃ বোরহান উদ্দিন ভূইয়া শহরে বাসায় ফেরার সময় কুমিল্লাগামী একটি প্রাইভেট কার তার পাশে এসে বন্ধু সুলভ আচরন করে গন্তব্য পৌছে দেয়ার কথা বলে পাইভেটকারে ওঠায়। গাড়িতে তখন যাত্রীবেশে আরো ৩জন ছিল। গাড়ি কাবিলা এলাকায় আসা মাত্রই ইউটার্ণে ঘুরিয়ে ঢাকার দিকে চলতে থাকে। এ সময় গাড়িতে থাকা সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা হিংস্র হয়ে ওঠে। তারা বোরহান উদ্দিন ভূইয়ার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুট করে নেয়। এসময় অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে তার স্ত্রী শিল্পী আক্তারকে বলেন মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম রকেটে টাকা পাঠানোর জন্য। তখন ছিনতাইকারীরা নিমসার চান্দিনা সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে তাকে মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী দুটি নম্বারে প্রায় ৪০ হাজার টাকা রকেট ও বিকাশ করে। বোরহান উদ্দিন জানান তাকে ছিনতাইকারীরা পরে তাকে গৌরিপুর আমিরাবাদ এলাকায় নামিয়ে দেয়। তিনি তার কর্মস্থলে ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানান। কলেজ কর্তৃপক্ষ বুড়িচং থানার দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ আজিজুল বারি নয়ন কে বিষয়টি জানান।

এদিকে ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা আছরারুল আজিজ ইশরাত জানান মহাসড়কের পাশে আমাদের কলেজটি অবস্থিত হওয়ায় ছিনতাইকারীরা প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। এ সমস্ত ছিনতাইয়ের শিকার হয় আমাদের কলেজের কর্মকর্তা কর্মচারী, ডাক্তার, ছাত্র -ছাত্রীরা। কোরবানি ঈদের কয়েকদিন আগে কলেজের সহকারী এডুকেশন মেডিকেল অফিসার তাহমিনা ইয়াসমিন মুন্নী দুপুরে ডিউটি শেষে বেতন বোনাস নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে কলেজের সামনে থেকে মারতি গাড়িতে উঠে। ওই গাড়িটিতে দুই জন পুরুষ ও এক জন মহিলা ছিলেন যাত্রীবেশে। গাড়িতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৪০ হাজার টাকা, স্বর্নলংকার সহ প্রায় দুই লক্ষ টাকা লুট করে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। তিনি আরো জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে হাসপাতাল এন্ড কলেজের ডাক্তার টুয়েল চক্রবর্তী রাত ১০ টায় ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার সময় কলেজের সামনে থেকে মারতি গাড়িতে উঠে। এসময় গাড়িতে থাকা ৪-৫ জন যাত্রী বেশী ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ সহ প্রায় এক লক্ষ টাকা লুটে নিয়ে মারধর করে নামিয়ে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে মেডিকেল কলেজের বহু শিক্ষার্থী এ ধরনের ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে।

অপর দিকে মহাসড়ক চলাচলকারী কাবিলা, নিমসার বাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানিয়েছেন, গাড়িতে বা বিভিন্ন যান বাহনেকরে যাত্রীবেশি ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের উৎপাত দিনদিন বেড়ে চলছে। তারা জানান গত দুমাসে এমন বেশকিছু ঘটনার কথাও জানান তারা। আর এতে করে স্থানীয় জনসাধারণ ও যাত্রীরা আতংকে রয়েছে।

সোমবার দিনদুপুরে উক্ত ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে বুড়িচং থানার দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ আজিজুল বারি নয়ন জানান, সোমবার ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের কেন্টিন ম্যানেজার বোরহান উদ্দিনের ছিনতাইয়ের ঘটনাটি আমাকে জানান। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং কলেজ থেকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। বুড়িচং এলাকার মহাসড়কের ছিনতাইয়ের বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এঘটনায় বুড়িচং থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশকুমিল্লা রিজিওন এর ময়নামতি হাইওয়ে ক্রসিং থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাফায়ত হোসেন বলেন, মহাসড়কে নিরাপত্তায় ময়নামতি হাইওয়ে পুলিশ দিনরাত দায়িত্ব পালন করে চলেছে। এরপরেও দীর্ঘ সড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ভাবে হাইওয়ে পুলিশ অথবা জরুরী সেবা ৯৯৯ এ অবহিত করার অনুরোধ রইলো। এধরণের ঘটনার ক্ষেত্রে বেশিরভাগই ভুক্তভোগীরা অভিযোগ না করার কারনে ক্রাইমস্পটগুলো চিহ্নিত করা যায় না। এছাড়াও বিভিন্ন সময় চালক ও পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতায় লিফলেট বিতরন সহ নানা ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নিজস্ব সচেতনতার বিকল্প নেই। অপরিচিত প্রাইভেটকারে বা গাড়িতে না ওঠাই উত্তম। বড় ধরনের আর্থ বা সম্পদ বহনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকলে প্রয়োজনে যে কেউ মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশের সহায়তা নিতে পারে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা সহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বেশকিছু স্পটে দিনে রাতে হাইওয়ে পুলিশের ট্রহল জোরদার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.