নরাইল প্রতিনিধি :
স্বপ্নের চাকুরীতে আর যোগদান করা হলো না জনি সরদারের (২৫)। তার পিতা-মাতার আশা ছিলো ছেলে চাকুরীতে যোগদানের পর পুত্রবধূ সোহাগী খাতুনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলে নিবে ধুমধাম করে। সে আশাও পূরণ হলো না পরিবারের। যোগদানের মাত্র তিনদিন আগে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পাশ্বববর্তী চিত্রা নদীতে গোসল করার সময় পানিতে ডুবে তিনি চিরতরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। জনি সরদার খুলনার ফুলতলা উপজেলার আলকা পূর্বপাড়া নিবাসী মোঃ সরদার শরিফুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের কালিয়া উপজেলাধীন পেড়লী গ্রামের নূর মোহাম্মাদ মুন্সির মেয়ে মোসাঃ সোহাগী খাতুনের (১৯) সঙ্গে প্রায় এক বছর পূর্বে খুলনার ফুলতলা উপজেলার আলকা পূর্বপাড়া নিবাসী মোঃ সরদার শরিফুল ইসলামের ছেলে মোঃ জনি সরদারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর অদ্যাবধি আনুষ্ঠানিকভাবে স্ত্রীকে ঘরে তুলে নেয়া সম্ভব না হলেও শ্বশুর বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিলো বর-কনের। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে জনি সরদার স্ত্রী সোহাগীকে সঙ্গে নিয়ে ফুলতলার নিজগ্রাম আলকা থেকে কালিয়ার পেড়লী গ্রামে তার শ্বশুরালয়ে বেড়াতে যান। ওইদিন বেলা ১২টার দিকে তিনি পার্শ্ববর্তী চিত্রা নদীতে গোসল করতে গিয়ে ডুব দেন। এ সময় তার স্ত্রী সোহাগী নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও স্বামীকে পানির নিচ থেকে উপরে ভাসতে না দেখে সোহাগী চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকার শুনে পার্শ্ববর্তী লোকজন এসে নদীতে নেমে তাকে খুঁজতে থাকে। এ সময় পুত্রবধূর ফোন থেকে ওই ঘটনা জানতে পেরে জনির পিতামাতা দ্রুত ছুটে যান পেড়লীতে। কিন্তু তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরও ছেলের কোনো সন্ধান না পেয়ে খুলনার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ডুবুরীদলকে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে চিত্রা নদীর তলদেশ থেকে জনির মৃতদেহ উদ্ধার করে ডাঙ্গায় তুলতেই সর্বত্র নেমে আসে শোকের ছায়া। শোকে মুর্হমান হয়ে পড়েন উপস্থিত হাজারো মানুষ। এ সময় এক হুদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নদীতে ডুব দেয়ার পর ষ্ট্রোক হওয়ায় পানিতে ডুবে তার অকাল মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ফুলতলার আলকা গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
জনির পিতা সরদার শরিফুল ইসলাম খবরকে বলেন, খুলনার ল্যাটেক্স ফ্যাক্টরীতে জনির চাকুরী হয়েছে। ১ অক্টোবর তার যোগদান করার কথা ছিলো। আশা ছিলো ছেলে চাকুরীতে যোগদানের পর সুবিধামত সময়ে পুত্রবধূকে ধুমধামের সঙ্গে তুলে নিবো। কিন্তু বিধিবাম। সে আশা আর পূরণ হলো না। তার আগেই আল্লাহ্ আমার ছেলেকে দুনিয়া থেকে চিরতরে নিয়ে গেলেন।