প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪৬৮ রান

খেলা

খেলাধুলা ডেস্ক :
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে দলের বিপর্যয়ের মুখে দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও তাসকিন আহমেদ। তাদের ব্যাটি দৃঢ়তায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রান তুলেছে টাইগাররা। শেষ উইকেটে খেলতে আসা এবাদত হোসেন করতে পারেননি কোনো রান।

দীর্ঘদিন পর মাঠে ফিরে দলের বিপর্যয়ের মুখে অপরাজিত ১৫০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এই রান করতে ২৭৮ বলে ১৭টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি।

মাহমুদুল্লাহর টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। এর আগে তার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৪৬।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তাসকিন আহমেদের ব্যাটে দ্বিতীয় দিনের সকালের সেশনে দারুণ লড়াই করছে বাংলাদেশ। ১৬ মাস পর টেস্ট দলে ফিরেই শতকের দেখা পেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরির পরপরই টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ পান তাসকিন। মাত্র ৭১ বলে ৮ চারের মারে এ অর্ধশতক তুলে নেন তাসকিন। দেশের হয়ে নবম উইকেট জুটিতে আগের রেকর্ড ভেঙে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তাসকিন আহমেদ। ২৭৬ বলে ১৯১ রানের পার্টনারশিপ গড়েছেন তারা।

ব্যাট হাতে চোখ জুড়ানো শটে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে তাসকিন। ১৩৪ বলে ১১টি চারের সাহায্যে ৭৫ রান করে মিল্টন শাম্বার বলে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।

২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে নবম উইকেটে আবুল হাসানকে নিয়ে ১৯৭ বলে ১৮৪ রান করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। যদিও রিয়াদ-তাসকিনের সামনে বিশ্বরেকর্ডের হাতছানি ছিল। ১৯৯৮ সালে জোহানেসবার্গ টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার ও প্যাট স্যামকক্স ১৯৫ রান করেছিলেন। রিয়াদ-তাসকিনের এই জুটিটি এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

৮ উইকেটে ২৯৪ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছে মুমিনুল হকের দল। এর আগে লিটন-মাহমুদউল্লাহর কার্যকরী ইনিংসে প্রথম দিন স্বস্তিতে শেষ করে লাল সবুজের দল।

এর আগের প্রথম দিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ছন্নছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজাবারানির করা প্রথম ওভারেই ফিরে গেছেন ওপেনিং ব্যাটসম্যান সাইফ হাসান। ওভারের পঞ্চম বলে অফ স্টাম্পের বল মূহুর্তেই তার রক্ষণ ভেদ করে। ম্যাচের পঞ্চম ওভারে সেই মুজাবারানির শিকার নাজমুল হোসেন শান্ত। ডানহাতি পেসারের ডিফেন্স করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন ২ রান করা শান্ত।

৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে হারের টেস্টের শুরুতেই বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মুশফিককে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ছিল সাদমান। কিন্তু ধৈর্য্যের পরীক্ষায় ফের ব্যর্থ হলেন সাদমান। মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস বড় করার আশা জাগিয়েও আত্নাহুতি দিলেন টাইগার এই ওপেনার। একুশতম ওভারের প্রথম বলে এনগারাভার বলে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন সাদমান। ফেরার আগে ৬৪ বল মোকাবেলা করে চার বাউন্ডারিতে ২৩ রান তুলেছেন তিনি। মুমিনুল ও সাদমানের জুটিতে এসেছিল ৬০ রান।

দলের বিপর্যয়ে ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন মুমিনুল হক। সেখান থেকে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফসেঞ্চুরি পূরণ করলেন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৩৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে অবিচ্ছিন্ন রয়েছেন অধিনায়ক। একইসঙ্গে দলীয় শতক পেরিয়েছে বাংলাদেশ। দলীয় শতকের পরই বাংলাদেশ শিবিরে ফের ব্যাটিং বিপর্যয়। পরপর দুই ওভারে মুশফিক-সাকিবকে হারালো বাংলাদেশ। মুজাবারানির তৃতীয় শিকারে এলবি হয়ে মাঠ ছাড়েন ১১ রান করা মুশফিক। আর ৩০তম ওভারের তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ৩ রানে থাকা সাকিবকে রেগিস চাকাভার ক্যাচে ফেরান ভিক্টর নিয়াচি।

৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দল যখন চাপে, তখন থেকেই বুক চিতিয়ে লড়াই করে গেছেন অধিনায়ক মুমিনুল। জিম্বাবুয়ের মাটিতে মুমিনুলের ব্যাটে শতক দেখতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি দিয়ে ব্যক্তিগত ৭০ রানেই সাজঘরে ফিরলেন মুমিনুল। ভিক্টর নিয়াচির বলে মায়ের্সের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন টাইগার অধিনায়ক।

মুমিনুলের বিদায়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। তবে দারুণ জুটি করে লিটন দাস এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে মিলছে স্বস্তি। ক্যারিয়ারের নবম, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে ফেললেন লিটন। সপ্তম উইকেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশে শতরানের জুটি এটিই প্রথম। আগের সেরা ৭৩ ছিল ২০১৮ সালে মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজের।

সপ্তম উইকেট জুটিতে লিটন-মাহমুদউল্লাহ দুজন মিলে গড়েন ১৩৮ রানের জুটি। হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর হাঁটছিলেন সেঞ্চুরির পথেই। কিন্তু ৯৫ রানে ডোনাল্ড তিরিপানোর বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। পরেই বলেই আউট হয়েছে বোলিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ।

এদিকে তাসকিন আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে দিনশেষ করার আগে মাহমুদউল্লাহ তুলে নেন ব্যক্তিগত পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস। প্রথম দিনশেষে অপরাজিত রয়েছেন ৫৪ রানে। আর তাসকিন অপরাজিত রয়েছেন ১৩ রানে।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে দলে ফিরেছেন সাকিব। ইনজুরির কারণে একাদশে নেই অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। এছাড়া বাদ পড়েছেন তাইজুল ইসলাম এবং আবু জায়েদ রাহী। ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সাদমান ইসলাম।

বাংলাদেশ একাদশ:

মুমিনুল হক , সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন চৌধুরী।

জিম্বাবুয়ে একাদশ:

রেগিস চাকাভা, রয় কাইয়া, তাকুজওয়ানাশে কাইতানো, টিমিসেন মারুমা, ব্লেসিং মুজারাবানি, ডিওন মায়ের্স, রিচার্ড এনগারাভা, ভিক্টর নিয়াচি, মিল্টন শুম্বা, ব্রেন্ডন টেলর, ডোনাল্ড তিরিপানো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.