জেলা প্রতিনিধি :
বগুড়ার কাহালু উপজেলার সুদখোর ও ধর্ষক মোঃ মোজাম্মেল হক ওরফে মোজামের (৪০) এর বিরুদ্ধে বিশাল মানব বন্ধন করেছে ভুক্তভোগীগন। গতকাল ০২/১১/২০ইং রোজঃ সোমবার দুপুর ১টায় বগুড়া শহরের প্রানকেন্দ্র সাতমাথায় এ মানব অনুষ্ঠিত হয়। এতে কাহালু উপজেলার প্রায় দুই শত মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
জানা গেছে মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সুদারু মোজাম কাহালু পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের পাল্লাপাড়া গ্রামের গুড় বিক্রেতা মোসলেম উদ্দিন ওরফে মোসোর ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মোজাম ২০১৩ সালে কাহালুতে সোনালী স্বপ্ন উন্নয়ন সংস্থা (এস এস ডি ও) নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান চালু করে, যার
নিবন্ধন- বগুড়া /২২০/১৩ তার প্রতিষ্ঠান কাহালু বাজার, দূর্গাপুর মালঞ্চা, মহরাবানী, দরগাহাট, মুরইল সহ বেশ কিছু এলাকায় অতিরিক্ত হারে সুদ নিয়ে সল্প মেয়াদি ঋণ দিতে শুরু করে, শুধু কাহালু উপজেলায় সে ঋণ দিয়ে থেমে থাকেনি, সম্প্রতি বগুড়া শহরের পুরান বগুড়া, নামাজগড়, ভবের বাজার, জামিল নগর, সেউজগাড়ী, নিউমার্কেট সহ বিভিন্ন হাট বাজার ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় তার প্রতিষ্ঠান ঋন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে জানা গেছে মোজাম কাহালু উপজেলায় দাদন ব্যবসায়ী সুদারু মোজাম হিসাবেই পরিচিত। সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে এনজিও নাম ভাঙ্গিয়ে সুদের রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে এই মোজাম। স্থানীয় সমবায় অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এবং কিছু রাজনৈতিক মহলের নেতাদের ব্যবহার করে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করছে মোজাম।
নিজেদের এনজিওর পরিচয় দিয়ে নামে-বেনামে সদস্য সংগ্রহ করে কোন রকমে ঋণ গছিয়ে দিচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া নিরীহ মানুষদেরকে।
দেশের নামকরা এনজিওর মতো সঠিক দিক নির্দেশনা না মেনে নাম মাত্র পাশবহি ছাঁপিয়ে কিছু রেজিস্ট্রি খাতায় ডেবিট-ক্রেডিট করে, রেজুলেশন বহি ব্যবহার করে এই সোনালী স্বপ্ন প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছে মোজাম এবং উপজেলা সমাজ সেবা চাহিদা মাফিক কাগজপত্র নিয়ে অফিস সাজিয়েছেন দাদন মোজাম।
কৌশলে প্রতিমাসে আমানত সংগ্রহ, সেবামূলক কাজে মিথ্যা ভাউচার, বডিমিটিং সহ সামান্য ২-৪ লাখ টাকা আমানত, বিতরন, দেখিয়ে সমাজ সেবা অফিসকে ম্যানেজ করে সরকারী আয়কর ফাঁকী দিয়ে খাতা পত্রে অফিসিয়াল ভাবে স্ব স্ব কর্মকর্তাদের কে দিয়ে আপগ্রেড সিন করে লাখ লাখ টাকা আয়কর ফাঁকিবাজি করে আসছে মোজাম। নিজ নামে, স্ত্রী, নিকট আত্মীয় স্বজনের নামে গড়েছেন বিশাল সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স।
এলাকার অসংখ ভুক্তভোগীগন, মোছাঃ মর্জিনা বেগম, মোছাঃ ফজিলা বেগম, ছফেলা, শাপলা,ময়না, মন্টু মিয়া ককিল,টগর,জুয়েল,লিটন সহ আশেপাশে অনেকেই এই দাদন ব্যবসায়ী বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আমরা মোজামকে ফাঁকা ব্যাংক চেক দিয়ে ঋন গ্রহণ করি, পরবর্তীতে অতিরিক্ত সূদ সমেদ তা পরিশোধ করে দিয়েও নিজেদের ব্যাংক চেক ফেরত পাইনি বরং মোজাম সেই ফাঁকা চেকে নিজের ইচ্ছেমতো কয়েকগুন টাকার অংক বসিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি ধামকি প্রদান করে। আমরা টাকা দিতে রাজি না হলে মোজাম তার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে আমাদের পরিবারের লোকজনকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে তার নিজেস্ব টর্চার সেলে মারধোর ও নানান ধরনের নির্যাতন করে। ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, সরকারি ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র, শনি যে কোন বারেই দিনে রাতে কিস্তি আদায় করে সুদারু মোজাম। তার কাছ থেকে ঋন নিয়ে অতিরিক্ত হারে সুদ না দিতে পেরে অনেকই আতঙ্কে হয়েছেন এলাকা ছাড়া।
এক দিন কিস্তি না দিতে পারলে ভূক্তভোগীদের ধরে নিয়ে এসে আটকে রেখে টাকা পরিশোধ করে নিয়ে ছেড়ে দেন। এমনকি তার অফিসে যারা চাকরি করতেন, কেউ যদি চাকরি ছাড়তে চাইতো তাহলে তাদেরকে যেকোন মামলা হামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি ধামকি প্রদান করতেন এই মোজাম। ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন মহিলা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সর্তে গনমাধ্যমকে বলেন,আমি এখানে চাকুরী করতে চাই না,আমি চাকুরী ছেঁড়ে দিলে আমাকে চেকের মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিবে মোজাম,মাসিক বেতন নিয়েও করেন নানান ঝামেলা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মহিলা বলেন, মোজাম আমাদের চাকুরী দেয়ার নামে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে,
থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন বিচার পাইনি আমরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কাহালু থানায় একাধিক অভিযোগ এই মোজামের নামে,একাধিক অভিযোগ থাকলেও মোজামের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন আইনগত ব্যবস্থা। জানা গেছে মোজাম কৌশলে সব ম্যানেজ করে নেয়। থানায় অভিযোগকারী মনছুর রহমান,ফারজানা আক্তার সহ বেশ কয়েকজন এ কথা জানিয়েছেন।
এরকম আরও অনেক ভুক্তভোগী সদস্য রয়েছে যারা টাকা পরিশোধ করেও ফিরে পাননি তাদের জমাকৃত ব্যাংকের চেক ও সাদা স্ট্যাম্প। টাকা দেওয়ার নাম করে কৌশলে নেওয়া হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সহি করা একাধিক চেকের পাতা ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প।
গনমাধ্যম কর্মীরা জেলা-উপজেলা সমবায় অফিসারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান,সমিতিগুলো কোন ভাবেই আইনের বাইরে পরিচালিত হতে পারে না, যারা নিজস্ব নিয়ম করে আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল সহ সকল আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাহালু উপজেলা সমবায় অফিসার আরো বলেন কেউ সমবায় নীতিমালার বাইরে নয়, যদি কেউ সমবায় নীতিমালার বাইরে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সমবায়ের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গণমাধ্যমকর্মীরা অভিযুক্ত মোজামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, এই বলে মোজাম ফোনলাইন কেটে দেন,পরবর্তীতে মোজামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি আর কল রিসিভ করেননি।
প্রায় ঘন্টা ব্যাপি এই মানব বন্ধন কর্মসূচিতে ভুক্তভোগীরা উপরোক্ত বিষয়গুলো ব্যানার, ফেস্টুন ও বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন। মানব বন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগীগনের, মোঃ আবুল খায়ের, মন্টু মিয়া, মোজা হোসেন,মোছাঃ মর্জিনা বেগম, ফজিলা বেগম সহ প্রমূখ।