মতিন খন্দকার টিটু :
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাট্টা ইউনিয়নের দাড়িদহে উপকারভূগীদের মাঝে ১০টাকা কেজি দরে সরকারী চাল বিক্রির অনিয়মকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় নারী ইউপি সদস্য ও স্থানীয় সংবাদকর্মীকে মারপিটের ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ইউপি চেয়ারম্যানের বড় ভাই মশিউর রহমান হিরন ও ক্যাডার বাহিনী জিটিভি বগুড়া প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন মিন্টু’র ক্যামেরা ছিনতাইয়ের চেষ্টাসহ তাকে প্রাননাশের হুমকি দেয়া হয়েছে।
গত ৩রা এপ্রিল শুক্রবার বেলা আড়াইটায় শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের গাড়ীদহ বন্দরের ফাঁসিতলা রোড়ে ময়দানহাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম রুপমের বড়ভাই মশিউর রহমান হিরনের ডিলার শিপে উপকারভূগীদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করছিল। এই চাল বিক্রিতে অনিয়ম হচ্ছে এবং চাল পাচার করা হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে খাদ্য কর্মকর্তা ইউপি সদস্য শাহানাজ বেগমকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এতে ডিলার হিরণ তার ছোটভাই চেয়ারম্যান এসএম রুপমকে খবর দিলে রুপম এসে তার ভাই ও ক্যাডার বাহিনী নিয়ে নারী ইউপি সদস্য শাহানাজ বেগমকে লাঞ্ছিত ও মারপিট করে। এঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় সংবাদ কর্মী শাজাহান ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও লাঞ্জিত ও মারপিট করা হয়। স্থানীয় লোকজন নারী ইউপি সদস্য ও সংবাদকর্মীকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। বিষয়টি নিয়ে নির্যাতিত ইউপি সদস্য ও সংবাদ কর্মী শাজাহান দু’জনই থানায় পৃথক পৃথক অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনও মামলা রেকর্ড করা হয়নি। এনিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছে।
এদিকে নারী ইউপি সদস্য ও সংবাদ কর্মীকে মারপিটের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে রবিবার দুপুরে শিবগঞ্জের দাড়িদহ বন্দরের তিন মাথা এলাকায় গেলে জিটিভি বগুড়া প্রতিনিধি, আমজাদ হোসেন মিন্টু তার ক্যামেরাপার্সন রাজু আহমেদকে সংবাদ সংগ্রহ করতে বাধা দিয়ে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চেয়ারম্যানের ভাই হিরণ ও তার ক্যাড়ার বাহিনী। পরবর্তিতে উপস্থিত জনতার প্রতিরোধে মুখে তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই মোস্তাফিজুর রহমান ও এসআই আলহাজ সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিবেশ শান্ত হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনতা ফুসে উঠেছেন। তারা মামলা রেকর্ড করে আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান।
নির্যাতিত নারী সদস্য শাহনাজ বেগম জানান, আমার বাবা হাতেম আলী ময়দানহাটা ইউনিয়নের পর পর ৩ বার চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া তিনি জেলা পরিষদের সদস্যও ছিলেন। এ অঞ্চলে আওয়ামীলীগকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আমি তার কন্যা তার আদর্শে লালিত হয়ে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে মানুষের পাশে থেকে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমি ময়দানহাটা ইউনিয়নের একজন নারী সদস্য নির্বাচিত হয়ে মানুষের কাজ করছি। এই রুপম চেয়ারম্যান আমাদের কোন কাজ করতে দেন না। ঘটনার দিন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে অনিয়ম হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আসেন এবং। আমাকে বলেন, ডিলার মমিউর রহমান হিরন চাল বিক্রি করছেন চলেন ওখানে যাব। আমি তার সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। এসময় হিরণ ও ভাই ছোট ভাই চেয়ারম্যান রুপমকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে আসে। চেয়ারম্যান রুপম আমাকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে সে এবং তার ভাই ও ক্যাডাররা মিলে আমাকে মারপিট করে। নির্যাতিত সংবাদকর্মী শাজাহান জানান, ডিলার হিরুণের দোকানে হট্টগোল হচ্ছে এমন সংবাদে আমি সেখানে যাই। ঘটনাটি জানার চেষ্টা করি। এসময় চেয়ারম্যান রুপম আমাকে গালি দিয়ে বলে শালা বলে সাংবাদিক হচে শালাক ধর বলে আমার চলে ঘুষি মারে এবং বাটাম দিয়ে পিটায়। স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। স্থানীয় এক যুবক জানান, চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছে। এখন আমি সরকারী চাকুরী করতে পারছি না। এখন আমি কি করে খাব।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আজিজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। নির্যাতিত ইউপি সদস্য আওয়ামীগ নেত্রী ও সাংবাদিকরা আমার কাছে এসে ছিল। রুপম আওয়ামীলীগের একজন সর্মথক মাত্র। রুপম যে কাজ করেছে তা মোটেও গ্রহন যোগ্য নয়। আমি পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে বলবো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক – মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক জানান, কোন অনিয়মের ঘটনা যে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন। আর সাংবাদিকরাতো এই অন্যায় অবিচার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় কলম ধরেন। এক নারী সদস্যকে হেনস্থা করা বা তাকে এটা বড়ই গর্হিত কাজ। এটা যেই করে থাকুক তার বিরুদ্ধে আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। জাতীয় সাংবাদিক কল্যান ফাউন্ডেশনর শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি ও সাধারণ সম্পাদক জিএম মিজান জানান, সাংবাদিককে মারপিটের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে প্রয়োজনে বগুড়ার সকল সাংবাদিকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ময়দানহাটা ইউনিয়ের চেয়ারম্যান এসএম রুপম জানান, এখানে হাতাহাতি হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে এটা অস্বীকার করবো না। তবে আমি কাউকে মারপিট করেনি। অথচ আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন অনলাইনে এসব সাংবাদিকরা রিপোর্ট করেছে। আমার মান সম্মান হানি করেছে। শিবগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, এসংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তবে ওসি তদন্ত সানোয়ার হোসেন জানালেন, অভিযোগটি প্রাথমিক তদন্ত করে কোটে পাঠিয়েছি। কোট অনুমতি দিলে পুনরায় তদন্ত করবো।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলমগীর কবির জানান, সাংবাদিকরা একটি অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগটি থানায় পাঠিয়েছি। আর ডিলার মশিউর রহমান হিরণের কোন অনিয়ম আছে কি না খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।