মতিন খন্দকার টিটু :
বগুড়ায় এক গৃহবধুকে তার স্বামী বন্ধুকে দিয়ে ধর্ষনের পর মাথার চুল কেটে গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা ঘটনার দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী স্বামী রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে শহরের ঠনঠনিয়া কোচ টার্মিনাল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
শাজাহানপুর থানার ওসি আজিম উদ্দিন জানান, রফিকুল পালিয়ে যাওয়ার জন্য ঠনঠনিয়া কোচ টার্মিনালে গেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার অপর আসামীকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। দুজনকেই গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায় স্কুলে পড়া অবস্থায় বগুড়ার গাবতলি উপজেলার মালিয়ানডাঙ্গা দক্ষিনপাড়া গ্রামের তোজাম্মেলের পুত্র রফিকুল ইসলামের প্রেমে পড়েন। সে সময় রফিকুল একটি বেসরকারী পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী ছিলো। পরিবারের অসম্মতিতে তারা বিয়ে করেন প্রায় ৯ বছর আগে। বিয়ের পর তারা শহরের চকলোকমান এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। রফিকুল একটি পরিবহন প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার হিসাবে কর্মরত রয়েছে বলে তিনি জানান অভিযুক্ত রফিকুল একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সেলসম্যান হিসাবে কাজ করতেন। কিছুদিন ধরে তাদের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়। তাদের ৮ বছরের একটি সন্তানও রয়েছে। গৃহবধুর অভিযোগ, তার স্বামী তাকে তালাক দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় জানুয়ারি মাসে রফিকুল তাকে মারপিট করে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রেখে গিয়েছিলো। পরে প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় সে সময় তিনি উদ্ধার পেয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন। এর পর থেকে স্বামী রফিকুল বাড়িতে আসতো না। শনিবার দুপুরের কিছু আগে ওই গৃহবধু বাড়িতে একাই ছিলেন। এসময় তার স্বামী এক বন্ধুকে নিয়ে প্রাচীর টপকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। প্রথমেই তার মুখ চেপে ধরে ঘরের ভিতরে নেয়া হয়। সেখানে হাত ও মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে মারপিট করা হয়। এর পর রফিকুল তার স্ত্রীকে শায়েস্তা করতে বন্ধুকে ঘরের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে পাহাড়ায় থাকে। গৃহবধুর অভিযোগ এসময় স্বামীর বন্ধু তাকে ধর্ষন করে। পরবর্তীতে দু’ জন গৃহবধুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেল্ড জাতীয় কিছু দিয়ে একাধিক আঘাত করে। এক পর্যায়ে তার স্বামী মাথার চুল কেটে দেয় এবং বোতলে থাকা এসিড জাতীয় পদার্থ শরীরে ঢেলে দেয়ার পর আগুন দিয়ে দু’জনই পালিয়ে যায়। নৃশংস নির্যাতনের শিকার গৃহবধু কোন ভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। তার মা ও ভাই একই এলাকায় থাকেন। খবর পেয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে তারা বগুড়া (শজিমেক) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের সহকারি পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই নারীকে গাইনি ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার পেটসহ শরীরের একাধিক স্থানে ফোস্কা এবং মাথার কিছু চুল কাটা রয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তাই ওই নারীর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এখনও রিপোর্ট হাতে পাওয়া যায়নি।