মতিন খন্দকার টিটু :
দেশে মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে বগুড়ায় ফুলের ব্যবসার বিশাল ধস নেমে গেছে। প্রায় দুই কোটি টাকার লোকসান নিয়ে বগুড়ার ফুল ব্যবসায়ীরা অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে। অনেকে ফুলের ব্যবসা বন্ধ করে অন্য ব্যবসার কথা চিন্তা করছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরের খোকন পার্ক সংলগ্ন রাস্তার পূর্ব পাশে অনেক দিন হলে গড়ে উঠেছে ছোট বড় প্রায় ১৭ টি ফুলের দোকান। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত চলতো ফুলের বেচা কেনা। এই ফুল মার্কেটে প্রতিদিন গড়ে ২ লক্ষাধীক টাকার ফুল কেনা বেচা হতো। যে কাউকে ফুল মার্কেটের কথা বললেই সবাই চিনতো শহীদ খোকন পার্কে পাশে এই মার্কেটের অবস্থান। এই ফুল মার্কেটের ১৭ টি ফুলের দোকানে প্রায় ১ শ জন কর্মচারী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। গত কয়েক মাস আগে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। আস্তে আস্তে এই ভাইরাস সারাদেশে বিস্তার লাভ করে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে হাঁচি কাশি ও সংস্পর্শে। যেহেতু এই ভাইরাস একটি সংক্রমন রোগ। বগুড়ায় সংক্রমন হওয়ার সাথে সাথে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বগুড়ায় লক ডাউন ঘোষনা করা হয়। বগুড়ায় লক ডাউন ঘোষনা করার পর থেকেই বগুড়ার ফুলের মার্কেটে নেমে আসে বিপর্যয়। ক্রেতা হারিয়ে ফেলে বগুড়ার ফুল ব্যবসায়ীরা। ক্ষতির মুখে পড়ে ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত সকল কর্মচারীরা। সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ থাকায় বগুড়ায় ফুলের আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। বগুড়ায় লক ডাউন চলায় সমস্ত দোকান বন্ধ হয়ে যায় অনির্দষ্ট কালের জন্য।
সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের ফুল আসতো বগুড়ার ফুল মার্কেটে। বিশেষ করে যশোর, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ, দর্শনা এলাকা থেকে প্রতিদিন ফুল আসতো বগুড়ায়। এর পাশাপাশি বগুড়ার বিভিন্ন নার্সারী থেকেও ফুল আসতো বগুড়ার এই ফুল মার্কেটে। বগুড়া থেকে এই ফুল আবার পাঠানো হতো নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, উল্লাপাড়া, নাটোরসহ বিভিন্ন জায়গায়। প্রতিদিন বগুড়ার এই ফুল মার্কেটের পাইকারি বাজারে প্রায় লক্ষাধীক টাকার ফুল কেনা বেচা হতো।
এছাড়াও প্রতিদিন বিয়ে, জন্মদিন, গায়ে হলুদ, গাড়ী সাজানো, বাসর ঘর সাজানোসহ অনেক ধরনের কাজে ফুলের ব্যবহার হতো। এতে হাজার হাজার টাকার ফুল বিক্রি হতো।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবসা থাকতো জমজমাট। বিশেষ করে মহান স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবস উল্লেখযোগ্য। করোনা ভাইরাসের কারনে এবারের এই জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় ফুল ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই জাতীয় অনুষ্ঠানে সারাদিন সারারাত ফুলের কাজ করতে হতো ফুল কর্মচারীদের। এই দিবসগুলোতে ফুলের ব্যবসাও হতো লাখ লাখ টাকার। মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে এবার সবধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফুল ব্যবসায়ীদের বিশাল ক্ষতির মুখে পরতে হয়েছে।
বগুড়া ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জুয়েল মিয়া জানান,মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে বগুড়ায় ফুলের দোকান দুই মাস বন্ধ ছিল। এতে করে অনেক লোকসান হয়েছে। অনেক কর্মচারী বেকার হয়ে গেছে। করোনার কারনে বগুড়ায় ফুলের বাজারে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অতিকষ্টে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
বগুড়া ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ দাস জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে বগুড়ায় ফুল ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে না পারায় যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা পুরন হওয়ার নয়। অনেক ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। কর্মচারীরা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। সরকারী ভাবে এখন সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলের দোকানে এখন ক্রেতা শূন্য। ফুল ক্রয় করার লোক নেই। এখন কোন সামাজিক অনুষ্ঠানও নেই। ফুল বিক্রি হওয়ার কোন সম্ভাবনাও নেই। ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত সকলেই আজ মহা বিপদে রেয়েছে। সরকারীভাবে ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত সকলকে সরকরী ভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন