মতিন খন্দকার টিটু :
বগুড়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমানের বিরুদ্ধে কারোনা প্রাদুর্ভাবের সময় দুস্থদের পাশে না দাঁড়ানো, সরকারি সাহায্য বিতরণে স্বেচ্ছাচারিতা এবং দলীয়করণসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার ২১ জন কাউন্সিলর বুধবার (১৫ এপ্রিল) এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর অনুলিপি পুলিশ সুপার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে দেওয়া হয়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরিফুর রহমান এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কাউন্সিলররা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশের জনপ্রতিনিধিরা করোনাভাইরাসের কারণে দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তখন বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান বাসায় অবস্থান করেন। মাঝে মাঝে ফোন খোলা রাখলেও অজ্ঞাত কারণে ফোন ধরেন না। বাধ্য হয়ে ১৫-১৬ জন কাউন্সিলর গত ১ এপ্রিল বিকালে তার বাসায় যান। তারা মেয়রকে পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে চাল, ডাল ও তেল কিনে ২১ ওয়ার্ডের কর্মহীন মানুষের মাঝে বিতরণের অনুরোধ জানান। মেয়র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বা জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া কিনবেন না বলে জানিয়ে দেন। ৫ এপ্রিল পৌরসভায় এসে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা থাকলেও মেয়র আসেননি।
কাউন্সিলররা জানান, পৌরসভার ২১ ওয়ার্ডের কর্মহীন ৯ হাজার ১০০ মানুষের তালিকা তৈরি করা হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে ১০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। এ বরাদ্দ ২১ ওয়ার্ডে সমবণ্টনের জন্য মেয়র ও সচিবকে অনুরোধ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, কাউন্সিলরদের না জানিয়ে মেয়র ওই টাকা বিতরণ না করে নিম্নমানের আলু কেনেন। ১০ মেট্রিক টন চাল ১০ কেজি করে ২১ ওয়ার্ডের ১ হাজার জনের মাঝে বিতরণের কথা থাকলেও মেয়র অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাউন্সিলরদের ৬০ ভাগ ও নিজে ৪০ ভাগ নেন। মেয়র নিজে ৪১২ জন এবং ২১ ওয়ার্ড ও সাতটি সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৫৮৮ জনের মাঝে চালগুলো বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে মেয়র তার বরাদ্দ থেকে বগুড়া জেলা জাতীয়তাবাদী হোটেল ও রেস্তোরাঁ শ্রমিক ইউনিয়নকে ৯৮টি স্লিপ, মেয়রের আস্থাভাজন বিএনপি নেতা মন্তেজারকে ৩৫টি স্লিপ, জেলা জাতীয়তাবাদী রিকশা/ভ্যান শ্রমিক দলকে পাঁচটি স্লিপ, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আমিনুল ফরিদকে ১৬টি স্লিপ, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পাইকারপাড়ার কালাম ফকিরকে ১১টি স্লিপ, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের নারুলী পশ্চিমপাড়ার সালমা খাতুনকে ১০টি স্লিপ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম সাইফুল ইসলামকে ১০টি স্লিপ, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলমকে ১৬টি স্লিপ এবং ধুনট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে সাতটি স্লিপ দেন।
কাউন্সিলররা আরও অভিযোগ করেন, ৯ এপ্রিল ২১ ওয়ার্ডের জন্য আরও ২১ টন চাল বরাদ্দ করা হয়। এ চালগুলো উত্তোলনের জন্য মেয়রকে ফোন দিলে তিনি প্রতি কাউন্সিলরকে তাদের ওয়ার্ডে ৫০০ কেজি করে চাল দিতে চান। এতে তারা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। ১১ এপ্রিল সব কাউন্সিলর মেয়রের বাসায় গেলে তিনি করোনাভাইরাসের অজুহাতে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তী সময়ে তারা (কাউন্সিলর) জানতে পারেন, মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান সদর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, কাল্পনিক অভিযোগ করেছেন। কাউন্সিলররা তাদের অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে তদন্তসাপেক্ষে মেয়রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
তবে বগুড়া পৌরসভার মেয়র একেএম মাহবুবর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসকের দেওয়া বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়েছে। এরপরও চার জন কাউন্সিলর শহরের জলেশ্বরীতলায় আমার বাসায় গিয়ে দারোয়ানকে মারপিট করে বেশ কিছু ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যায়। এরপর তারা আমার বাসার দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে। এসব খবর পেয়ে পুলিশ আমার বাসায় গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ অবস্থায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পরে আমি পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আরিফুর রহমান আরিফ, শহর আওয়ামী লীগ নেতা ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ সার্জিল আহম্মেদ টিপুসহ চার জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করি।
সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, মেয়র কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, কাউন্সিলরদের একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।