মোঃ খাইরুল ইসলাম মুন্না :
বরগুনার বেতাগীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় জন সাধারণ। রবিবার দুপুরে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্থানীয় জনগন কর্মকর্তাকে না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এসময়ে তারা ওই কর্মকর্তার অপসারণ দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আমানুল্লাহ আল মামুনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসে তাকে উদ্ধার করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো.আমানুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ।এমন ঘটনায় ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মচারী সহ এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। পরে রবিবার দুপুরে জনগনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। আরো জানা যায়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অভিযোগ তোলায় গতকাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: রবিন্দ্রনাথ সরকারকে হঠাৎ অব্যাহতি দিয়ে জুনিয়র ডাক্তারকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদে দায়িত্ব দেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা এমন।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাঠ পর্যায়ের কর্মরত একাধিক স্বাস্থ্য মাঠকর্মীদের মোবাইল ফোন জিম্মি করে প্রশিক্ষণের ভাতার অংশ উৎকোচ গ্রহন সহ হাসপাতালের বিভিন্ন খাতের বরাদ্দের অর্থ লোপাট, ঘুষ দূর্নীতি, অশালীন ব্যবহার, স্টাফদের হয়রাণি ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়সহ নানাভাবে হয়রানী করে আসছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমানুল্লাহ আল মামুন। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় কর্মজীবী একাধিক মাঠকর্মী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক বরাবর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এহেন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ডজন খানেক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়াও সকল প্রকার বিল, ভাউচারে তাকে ৩৫ থেকে ৫০% টাকা ঘুষ হিসেবে না দিলে তিনি স্বাক্ষর বা সই করেন না। এমন অর্ধশতাধিক অভিযোগ তুলে সবাই মিলে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সামাল দিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে উপস্থিত হন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সুহৃদ সালেহীন ও বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম হাওলাদার পরপরই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান ও পৌর মেয়র গোলাম কবির এসে বিক্ষুব্ধ জনতাকে নানা ভাবে বুঝিয়ে ও তাদের দাবি মানা হবে এবং ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অপসারণের জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা করবেন বলে আস্বস্ত করে পরিস্থিতি সামাল দেন। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমানুল্লাহ আল মামুনকে পুলিশি হেফাজতে তার কোর্য়াটারে পৌঁছে দেয়া হয় এবং স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সংবাদকর্মীদের সামনে এমন বিক্ষোভের কারন জানতে চাইলে ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমি কোন ধরনের কথা বলতে বাধ্য নই, আপনার সবাই মিলে যা করতে পারেন করেন, আমার ডজন খানেক সচিব পকেটে আছে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন,‘ একজন কর্মকর্তার এমন কর্মকানেড আমরা উপজেলা প্রশাসন বিব্রত। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।তদন্ত স্বাপেক্ষে এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এমন ঘটনায় বেতাগী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, ‘স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমানুল্লাহ আল মামুনের দুর্নীতির শেষ নেই। যত ধরনের কাজ আছে তাতেই তাকে ২৫% ঘুষ দিতে হয়্য। তার সাথে কথা বলতে বহুবার আমি নিজে ফোন দিয়েছি সে কারো ফোনও রিসিভ করেননা জনসাধরনের ফোন তো ধরেনই না। তার সকল অনিয়মের ব্যাপারে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হবে।
বরগুনা সিভিল সার্জন ফজলুল হক যুগান্তরকে বলেন,‘স্বস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার তদন্ত কমিটি ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হবেন। তবে অবরুদ্ধ করার বিষয়টি আমি শুনেছি এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।