অনলাইন নিউজ ডেস্ক :
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বাংদেশের ৯টি জেলায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। তারপর মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাইবান্ধা জেলার অবস্থান।
এছাড়া কক্সবাজার, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, কুমিল্লা, গাজীপুর জেলায়ও রোগী আছেন। তবে কুমিল্লার যে ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন তিনি ঢাকায় থাকেন বলে জানাগেছে।
তিনি সেখানেই করোনায় আক্রান্ত হন। এছাড়া কুমিল্লায় দেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী থাকায় ক’রোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বেশি এ এলাকায়। তবে প্রশাসনের প্রস্তুতিও অনেক ও চোখে পড়ার মত।
কিন্তু এ ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা সেটা নির্ণয়ের জন্য কুমিল্লায় তথা আশেপাশের পাঁচটি জেলায় নেই কোনও আধুনিক ল্যাবরেটরি। করোনাভাইরাস পরীক্ষার একমাত্র বায়োসেফটি লেভেল-থ্রি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা যেতে পারে কুমিল্লায় জেলায়।
এ জেলার ১৭টি উপজেলার প্রায় ৬০ লাখ মানুষসহ চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনীসহ ছয় জেলার প্রায় দেড় কোটিরও বেশি লোকের করোনা পরীক্ষায় ভরসার স্থল হতে পারে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
স্বাভাবিক সময়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জটিল রোগ নিয়ে প্রতিদিনই চিকিৎসা নিতে আসে এই ছয় জেলার রোগাক্রান্ত মানুষ।
রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান কুমিল্লা জেলার। এছাড়া আশেপাশের জেলাগুলোর সাথেও রয়েছে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কিন্তু এখানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের পরীক্ষার নেই কোনও ব্যবস্থা। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই করোনা পরীক্ষার জন্য এ সকল জেলার রোগীদের ছুটতে হচ্ছে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের দিকে।
এতে বিড়ম্বনার পাশাপাশি অপচয় হচ্ছে সময়, বাড়ছে ব্যয়। তাই কুমিল্লায় একটি বায়োসেফটি লেভেল-থ্রি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হলে সহজেই এই রোগ নির্ণয়ের সুযোগ পেত অনেকে।
এ বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, বায়োসেফটি লেভেল-থ্রি ল্যাবরেটরি স্থাপনে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এমনিতেই কুমিল্লা একটি বড় প্রশা’সনিক জেলা।
এ জেলায় স্থাপিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীর ছয় জেলাকে কেন্দ্র করে বায়োসেফটি লেভেল-থ্রি ল্যাবরেটরি গড়ে উঠতে পারে।
এই মেডিকেল কলেজে একটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিটি স্থাপন এখন সময়ের দাবি। তিনি আরও বলেন, আমরা এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সাথে কথা বলেছি। তিনিও এতে সায় দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আমরা কুমিল্লায় ল্যাব স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করছি আগামীতে বায়োসেফটি লেভেল-থ্রি ল্যাবরেটরি হয়ে যাবে,যোগ করেন তিনি।
এদিকে করোনাভা’ইরাসের ঝুঁ’কি এড়াতে কুমিল্লায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা সন্দেহভাজন ৩৪ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে প্রতি উপজেলা থেকে দুটি করে নমুনা সংগ্রহের পর তা পরীক্ষার জন্য সরকারি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার (৩ এপ্রিল) কুমিল্লার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান এ তথ্য জানান। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) নির্দেশে কুমিল্লার ১৭ উপজেলা থেকে দুইটি করে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় যাদের সর্দি ও কাশি এবং জ্বর রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। জেলা সিভিল সার্জন আরও জানান, এর আগে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার খরখরিয়া গ্রামে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এক ব্যবসায়ীর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে ওই নমুনা পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এছাড়াও হোমনা উপজেলায় আরও দুই জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং তাদের বাড়িগুলো লকডাইন করে রাখা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশফেরত মানুষের মাধ্যমেই দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ ঘটেছে। ৬১ জন আ’ক্রান্তের মধ্যে ১৬ জন বিদেশফেরত।
বিদেশ ফেরতদের মধ্যে ইতালির ৬ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ৩ জন, সৌদি আরবের ২ জন। এছাড়াও কুয়েত, বাহারাইন, ভারত, জার্মানি ও ফ্রান্সের একজন করে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই ১৬ জন দেশে আসেন। এরপর থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ভা’ইরাস ছড়িয়ে পড়ে।