বগুড়া জেলা প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা শাখার প্রচার সম্পাদক ও পাইকের ছড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন মোল্লা গড়লেন মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিন বছর পূর্বে হারিয়ে যাওয়া মানসিক প্রতিবন্ধী জোহরা বিবি (৬০) কে চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে এনে দিলেন নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশীতে জোহরা বিবির নিজ পরিবারের নিকট।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন নেওয়াশীর গো-বর্ধনকুটি (বুড়িরছড়া) গ্রামের জোহরা বিবির স্বামী মোঃ কাশেম আলী গত ৬/৭ বছর পূর্বে ছোট ভাই জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে জমি জমার বিরোধ পরবর্তী আপোষ সূত্রে নিজ গ্রাম থেকে ২ কি.মি. দুরত্বে শ্বশুড়বাড়ী আশ্রয় নেন। কিছু দিন সেখানে অবস্থান করার পর ৫/৬ বছর পূর্বে কাজের খোঁজে নিজের বড় দুই ছেলে জয়নাল ও ময়নালকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের রাজধানী দিল্লীতে পাড়ি জমান। দিল্লীতে কাজ নেন ইটের ভাটায়। বছর দুয়েক পরে শ্বশুড় বাড়ীতে ফিরে বাকী দুই ছেলে মোসলেম ও মোহাম্মদ এবং দুই মেয়ে খাছিরন ও কবিজনকেও দিল্লীতে নিয়ে যান বাবা কাশেম আলী। বাড়ীতে থাকলেন শুধু স্ত্রী জোহরা বিবি। স্বামী সন্তানের সঙ্গে জোহরা বিবির মোবাইল ফোনে মাঝে মধ্যে যোগাযোগ হলেও ক্রমান্বয়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। বছর চারেক পূর্বে স্বামী সন্তানদের সঙ্গে জোহরা বিবির কোন প্রকার যোগাযোগ না থাকার দরুন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য একরামুল হক বুলবুল ও নেওয়াশী ইউপি সদস্য আক্কাস আলী জানান, নিজ এলাকায় কিছু দিন পথে ঘাটে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে বছর তিনেক পূর্বে তিনি বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে স্বামী সন্তানের খোঁজে দিল্লী রওয়ানা দেন। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ১ বৎসরের মতো ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে তিনি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ অথবা ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হয়ে দুই বৎসরাধিক কাল ভারতীয় কারাগারে অন্তরীণ থাকেন। সাজা শেষে জোহরা বিবিকে গত ৫/৬ দিন পূর্বে চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার মুশরিভুজা ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশে পুশইন করে।
তারপরের কাহিনী ছাত্রলীগের মানবতার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মানবতার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মানসপুত্র সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের ভাবশিষ্য ও ভূরুঙ্গামারীর পাইকেরছড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন মোল্লার বন্ধু নাটোরের ছাত্রলীগ কর্মী রুবেল চাপাই নবাবগঞ্জের উল্লেখিত সীমান্ত এলাকায় পল্লী বিদ্যুতে কর্ম সূত্রে অবস্থান করা অবস্থায় ৪/৫ দিন পূর্বে জোহরা বিবিকে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করতে দেখে কৌতুহল বশত কাছে গিয়ে নাম ঠিকানা জানতে চান। জোহরা বিবির রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা ও ঠিকানা শুনে ছাত্রলীগ কর্মী রুবেল তাঁর কুড়িগ্রামের বন্ধু ভূরুঙ্গামারীর পাইকেরছড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন মোল্লাকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান। মুজিব আদর্শের ছাত্রলীগ কর্মী শিপন মোল্লা বন্ধু রুবেলের নিকট জোহরা বিবির নাম ঠিকানা সহকারে ভিডিও ক্লিপস চান। রুবেল ভিডিও ক্লিপস দিলে শিপন মোল্লা তাঁর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী নাগেশ্বরী প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা কোকিল চন্দ্র বিশ্বাস এর ফেসবুক আইডি ট্যাগ করে জোহরা বিবির নাম, ঠিকানা, ঘটনা উল্লেখ পূর্বক ফেসবুকে পোস্ট দিলে পোস্টটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ২ দিনের মাথায় শিপন মোল্লা উক্ত জোহরা বিবির পরিচয় ও তাঁর পরিবারকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হন। পরে তিনি নেওয়াশীর ইউপি সদস্য আক্কাস আলীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করলে ইউপি সদস্য আক্কাস আলী ১ বৎসর পূর্বে দিল্লী থেকে ফেরত আসা জোহরা বিবির বড় ছেলে জয়নাল সহ পাইকেরছড়া ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন মোল্লা চাঁপাই নবাবগঞ্জে অবস্থান রত বন্ধু ছাত্রলীগ কর্মী রুবেলের মাধ্যমে অসহায় জোহরা বিবিকে উদ্ধার করেন। রুবেল ও শিপন মোল্লা যৎ সামান্য কাপড় এবং কিঞ্চিৎ উপহার সামগ্রী সহ জোহরা বিবিকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেন। তৈরী হয় এক আনন্দঘন পরিবেশের। জানা গেছে, স্বজন শোকে কাতর মানসিক প্রতিবন্ধী জোহরা বেগম এখন অনেকটাই সুস্থ্য। ইতিমধ্যে দিল্লিতে জোহরা বিবির স্বামী কাশেম আলী এবং তাঁর অন্যান্য সন্তানদের জোহরা বিবিকে খুঁজে পাওয়ার খবর জানানো হয়েছে। তাঁরা দ্রুতই দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।
জোহরা বিবি, তাঁর বড় ছেলে জয়নাল, অন্যান্য আত্মীয় স্বজন এবং এলাকাবাসী মানবিক ছাত্রলীগ নেতা শিপন মোল্লাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এ বিষয়ে পাইকেরছড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন মোল্লার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমরা মুজিব আদর্শ ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ভাইয়ের সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। কিভাবে মানবতার পাশে দাঁড়াতে হয়, তা আমরা শোভন ভাইয়ের নিকট থেকে দীক্ষা পেয়েছি। আমরা যেমন অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার, তেমনি মানবতার কল্যাণে সর্বান্তকরণে আত্মনিয়োগ করি। ভালো লাগছে মাতৃ সমতুল্য জোহরা বিবিকে দূঃসহ জীবন থেকে উদ্ধার করে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে"। কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য একরামুল হক বুলবুল ও নেওয়াশী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আমজাদ আলী ও সদস্য আক্কাস আলী জোহরা বিবি এবং তাঁর পরিবারকে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন।