মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতাল ভুল চিকিৎসায় কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ

অপরাধ

আরিফ হোসেন হারিছ :
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় বৃষ্টি আক্তার নামে এক কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃষ্টি আক্তার(১৭) ঢাকা মালিবাগ থানার খিলগাঁও এলাকার মোঃ শহীদের মেয়ে। ১৫ই আগষ্ট রবিবার বিকেল ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
এছাড়া এই হাসপাতালে ডাঃ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হাওলাদারের বিরুদ্ধে একাধিক রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করারও অভিযোগ রয়েছে।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুলাই বৃষ্টি তার নানার মৃত্যুর সংবাদ শুনে নানা বাড়িতে আসে। ১০ জুলাই পেটে ব্যাথা অনুভব করলে তাকে কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর ডাঃ মোঃ শিহাব আল মশিউর রহমান আল্ট্রাস্নো গ্রাম করতে বলে। রিপোর্ট দেখে বৃষ্টি আক্তারের পরিবারকে দ্রুত এপেন্ডিসাইট এর অপারেশন করতে বলেন। অপারেশনের ২২ দিন পর পরিবারের লোকজনদের বৃষ্টি আক্তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
বাড়িতে আসার কয়েকদিন পর ব্যাথা অনুভব করলে তাকে পুনরায় ১০আগস্ট কুসুমপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির পর ডাক্তার বলেন আগের অপারেশন এর জায়গায় ইনফেকশন হয়েছে সেখানে আরেকটি অপারেশন করতে হবে।

পরিবারের লোকজন অপারেশন করতে দ্বিমত পোষণ করলে ডাঃ শিহাব আল মশিউর রহমান বলেন হাতে বেশি সময় নেই ১ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন না করতে পারলে এই রোগী বাচানো সম্ভব হবে না। পরিবারের লোকজন তখন ডাক্তারের কথায় রাজি হয়। অপারেশন পর তারা দেখতে পায় আগের স্থানে অপারেশন না করে অন্য সাইডে অপারেশন করা হয়েছে এবং সেখানে একটি ব্যাগ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।

এটা দেখে পরিবারের লোকজন ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে ডাক্তার বলেন তার একটা টিউমার হয়েছিলো সেটার অপারেশন করতে হয়েছে। তখন বৃষ্টির পরিবারের লোকজন যানতে চায় আগের অপারেশনটা কি জন্য করা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ডাক্তার ও মালিক পক্ষ এরিয়ে যায়। দ্বিতীয় অপারেশনের পর অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় গত ৭ আগষ্ট সকালে ঢাকা হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন।
পরিবারের লোকজন সাথে সাথে বৃষ্টি আক্তারকে নিয়ে ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ডাক্তার কিছু পরিক্ষা করার পর রিপোর্ট দেখে বলেন বৃষ্টি ভুল চিকিৎসার কারনে এই অবস্থা হয়েছে। অপারেশন করার সময়ে তার কয়েকটি নারি ছিদ্র করে ফেলার কারনে সেখানে ময়লা প্রবেশ করে ক্যান্সার হয়েছে।

বৃষ্টি আক্তারের মা বিথী বেগম বলেন, আমার মেয়েকে ভুল চিকিৎসা করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার মেয়ের এপেন্টিসাইট না হলেও তারা আমার মেয়েকে এপেন্টিসাইট অপারেশন করে। আমার মেয়ে সুস্থ হওয়ার আগেই তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে বলেন তারা। বাড়িতে নিয়ে আসার কিছু দিন পর আবার ও ব্যাথা শুরু হলে তারা আমার মেয়েকে আবার অপারেশন করে। অপারেশন এর ৪/৫ দিন পর অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় আমার মেয়েকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আমরা সাথে সাথে ঢাকা নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেন তাকে ভুল চিকিৎসা ফলে এই অবস্থা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।

কুসুমপুর জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান শামিমুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে রোগী মারা যায়নি। চিকিৎসার বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেন।
এবিষয়ে জানতে ডাঃ মোঃ শিহাব আল মশিউর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ডাঃ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হাওলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আঞ্জুমান আরা বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি তদন্ত করে দেখব। এছাড়া নিহতের পরিবার যদি কোনো অভিযোগ করেন সে বিষয়েও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জৈনসার ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এবিষয়ে নিহতের স্বজনরা আমার কাছে অভিযোগ করে ভুল চিকিৎসায় তাদের রোগী মারা গেছে। এ বিষয়ে জানতে আমি হাসপাতলে ফোন করলে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ আমাকে বলে তাদের ওখানে কোনো ভুল চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসা সঠিক হয়েছে সে বিষয়ে সকল ভিডিও তাদের কাছে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.