যুক্তরাষ্ট্রের চাপে চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক পরিবর্তন হবে না : ইমরান খান

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে পাকিস্তানে একজন মহান নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক পরিবর্তন করতে পারবে না। একই সঙ্গে তিনি কোয়াড নিয়ে তার বিরূপ ধারণার কথা তুলে ধরেন। বলেন, এটা আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবে। দেখা দেবে নানা সমস্যা। উল্লেখ্য, এই জোটে বাংলাদেশকে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। চীনা মিডিয়ার সঙ্গে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান এসব কথা বলেছেন।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ। বৃহস্পতিবার ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পাকিস্তান কোনো পক্ষ নেবে না। তাই পাকিস্তান ও চীনের মধ্যকার বন্ধন কারো চাপে প্রভাবিত হবে না। ইমরান খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে পাকিস্তান একটি পক্ষ বেছে নেবে। কিন্তু তা যথার্থ নয়। পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক খুবই গভীর। শুধু দুই দেশের সরকারের মধ্যেই এই সম্পর্ক- এমন নয়। এটা একই সঙ্গে জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কও। তার ভাষায়, আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে যা ঘটবে তা হলো, আমাদের ওপর যতই চাপ দেয়া হোক, তাতে কিছুই হবে না। এই সম্পর্ক পরিবর্তন হবে না। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আঞ্চলিক জোট কোয়াড নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারত ও অন্য কয়েকটি দেশ মিলে গড়ে উঠছে কোয়াড। কিন্তু এটা হলো আঞ্চলিকতার ক্ষেত্রে বড় শক্তির একটি বিরোধ। এতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান মনে করে পাকিস্তানের মতো অন্য দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা শক্তিগুলোর পক্ষ বেছে নিতে বলা খুবই অনুচিত কাজ। ইমরান খান প্রশ্ন রাখেন, কেন আমরা পক্ষ নিতে যাবো? সবার সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক থাকা উচিত।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্তান যখনই রাজনৈতিকভাবে, আন্তর্জাতিকভাবে বা প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তখন সবসময়ই পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে চীন। পাকিস্তানের জনগণের হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গায় আছে চীনের জনগণ। ইমরান খানের ভাষায়, যে বন্ধু সব সময় আপনার পাশে থাকেন, আপনি তো তাকে স্মরণ করবেনই। সুসময়ে সবাই আপনার পাশে থাকে। কিন্তু জটিল, কঠিন ও খারাপ সময়ে আপনার পাশে কে থাকে, মনে করুন। চীনে দারিদ্র্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করেন ইমরান খান। বলেন, মাত্র কয়েক বছরে ৭০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে তুলে এনেছে চীন। এটা এক বড় অর্জন। দুই দেশের মধ্যে আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো উন্নত করতে চাই। চীনা প্রেসিডেন্ট দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে লড়াই করছেন তাতে অভিভূত ইমরান খান। তিনি বলেন, তাকে আধুনিক সময়ে একজন মহান রাজনীতিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান কার্যকর ও সফল।
ইমরান খান কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না’র শততম বার্ষিকী উপলক্ষে বলেন, পশ্চিমা গণতন্ত্রের চেয়ে অনেক উন্নত চীনের ব্যবস্থা। চীন মেধাবীদের সন্ধান করে। নির্বাচিত গণতন্ত্রের যেকোনো দেশের চেয়ে ওই মেধাবীকে আরো ঘষামাজা করে। আমাদের সমাজে এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে পরিবর্তন আনা কঠিন। সমাজের জন্য যা কল্যাণকর তা করা সব সময় সম্ভব হয় না।
সিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেন। তিনি বলেন, বেআইনিভাবে ভারত যে জম্মু ও কাশ্মীরে ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, সে বিষয়ে পশ্চিমা মিডিয়ায় কোন উল্লেখই নেই। এ সময় তিনি কাশ্মীর বিরোধ নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলুশনের কথা তুলে ধরেন। এর অধীনে কাশ্মীরের জনগণের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.