শেখ নাফিজ তপন,রাজশাহী থেকে :
চালক-শ্রমিকদের সাথে রাজশাহীর জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের হিসাব চাইতে গিয়েছিলেন সোহরাব আলী (৩৫)।
শ্রমিকদের কল্যাণে রাস্তা থেকে তোলা টাকার হিসেব পেলেন না এই ট্রাকচালক। করোনার দুর্যোগকালে পেলেন না নূন্যতম সহায়তাও। শ্রমিকদের মারামারির ভেতরে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার বিকেলে নগরীর ঘোড়ামারা এলাকায় জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে এ-ই ঘটনা ঘটে। সকাল থেকেই সেখানে বিক্ষোভ করছিলেন চালকরা। মৃত ট্রাকচালক সোহরাব আলী নগরীর খোজাপুরের বাসিন্দা।
শ্রমিকদের ভাষ্য, তাদের সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৬০০ জন। সম্প্রতি তাদের ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী কিছু শ্রমিককে ডেকে ৮ কেজি করে চাল ও ২ কেজি করে আলু দিচ্ছিলেন। শ্রমিকদের কেউ কেউ বেকায়দায় পড়ে নিয়েছেন। কিন্তু বেশিরভাগই সেই চাল-আলু প্রত্যাখান করে তাদের টাকার হিসাব চেয়েছেন। সেদিন ১১ মে হিসাব দেয়া হবে বলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জানান। কথামতো তারা সেদিন ইউনিয়ন কার্যালয়ে যান। কিন্তু হিসাব না দিয়ে আবারও ১৫ মে দিন দেয়া হয়। কথামতো তারা এ দিনও এসেছেন। কিন্তু তাদের জানানো হয়েছে হিসাব প্রস্তুত করা হয়নি। তাই তারা অবস্থান নিয়েছেন।
সাজ্জাদ আলী নামের এক শ্রমিক বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ তিন বছর। গত ১৭ এপ্রিল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই কমিটির কাছে হিসাব প্রস্তুত থাকার কথা। কিন্তু টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে হিসাব প্রস্তুত নেই বলে মনে করেন তিনি।
সাজ্জাদ ধারণা করেন, তিন বছরে এই কমিটির কাছে অন্তত ১৫ কোটি টাকা গেছে শ্রমিকদের উন্নয়নের নামে। কিন্তু এখন তাদের দিন চলছে না। তারা টাকার হিসাব চাওয়ায় বর্তমান কমিটির কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
সাজ্জাদ বলেন, হাতাহাতির মধ্যে পড়েছিলেন ট্রাকচালক সোহরাব আলী। তিনি রোজাও রেখেছিলেন। এ রকম পরিস্থিতিতে তার রক্তচাপ বেড়ে যায়। অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাথায় পানি দেয়া হয়। এরপর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। তখন চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর শ্রমিকরা একটি পিকআপে করে তার লাশ ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে আনা হয়।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, টাকার হিসাব চাইতে এসে এক শ্রমিক মারা গেছেন। তার লাশ ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে আছে। শ্রমিকরা উত্তেজিত। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চলছে। মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।