শরীয়তপুর জাজিরা থানার এসআই হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

অপরাধ

বিশেষ প্রতিবেদক :
শরীয়তপুরের জাজিরা থানার এসআই হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিতে তদন্তের সময় ঘুষ নেয়ার অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের আবেদনের পর স্থানীয় থানায় তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। থানা থেকে এসআই হুমায়ুন কবির সেবাগ্রহীতার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে থানায় গিয়ে দেখা করতে বলেন। পরে সেবাগ্রহীতারা থানায় গেলে তিনি মুন্সী কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালক অনিক নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি দিয়ে যেতে বলেন।

সেবাগ্রহীতারা কম্পিউটার দোকানি অনিকের সঙ্গে দেখা করলে ৫শ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়। যারা চাহিদা মতো টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান তাদের তদন্ত প্রতিবেদন নেগেটিভ দেওয়া হবে বলে হুমকি প্রদান করা হয়।

দক্ষিণ বাইকশা এলাকার বাসিন্দা রাকিব হাসান বলেন, অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফি ৫০০ টাকা দিয়ে আবেদন করেছি। পরে জাজিরা থানা থেকে পুলিশের এসআই হুমায়ুন কবির আমার জাতীয় পরিচয়পত্র, বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট, পাসপোর্টের ফটোকপি ও বিদ্যুৎ বিলের কপি নিয়ে থানায় যেতে বলেন। পরে তার চাহিদামতো কাগজপত্র নিয়ে থানায় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

রাকিব বলেন, পরে তাকে ফোন দিলে তিনি আমাকে থানার সামনে থাকা মুন্সী কম্পিউটার সেন্টারের সামনে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর এসআই হুমায়ুন আমার কাগজপত্রগুলো হাতে নিয়ে ওই কম্পিউটার দোকানের লোক অনিকের কাছে দিয়ে অনিক সব বুঝে রাখবে বলে সেখান থেকে চলে যান। পরে ওই কম্পিউটার দোকানি অনিক আমাকে বসতে বলেন। একটু পর দোকানিবলেন, কাগজপত্র সব ঠিক আছে। ১ হাজার টাকা দাও। তখন কীসের টাকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খরচ আছে তাই দিতে হবে। কোনো উপায়ন্তর না দেখে তাকে ৫০০ টাকা দেই। তখন তিনি ৫০০ টাকায় হবে না বলে আমাকে ফিরিয়ে দেন এবং বলেন, কাজ ঠিকমতো হতে হলে অন্তত ৮০০ টাকা দিতে হবে। যদি এখন না পারো তাহলে গিয়ে বিকাশে পাঠিয়ে দিও।

তিনি আরো বলেন, এরপর চলে আসার পর টাকার জন্য আমাকে অনেকবার ফোন দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ এখনো সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ঘুষ খাওয়া বন্ধ করলো না।

একাধিক ভুক্তভোগী একই অভিযোগ করে বলেন, সরকার অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন ব্যবস্থা করেছে। সেখানে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র আপলোড করে তারপর আবেদন দাখিল করতে হয়। আর আবেদনের সঙ্গে ৫০০ টাকা ফি নেওয়া হয়। এরপরও তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া অসাধু পুলিশ কর্মকর্তারা সরাসরি এসে তদন্ত না করে থানায় বসে বসে আমাদের ভুক্তভোগীদের হয়রানি করে। আবার বাড়তি টাকার দাবি করে। আর যদি কোনো ভুল পায় তাহলে ভোগান্তির শেষ থাকে না। একারণে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার অবনতি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী বলেন, অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের আবেদন করার দুদিন পর জাজিরা থানা থেকে এক পুলিশ সদস্য ফোন করে কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলেন। থানায় যাওয়ার পর থানার সামনে থাকা কম্পিউটারের দোকানে কাগজপত্র দিয়ে যেতে বলা হয়। পরে সেখানে কাগজপত্র জমা দিলে ওই দোকানের অনিক নামে এক লোক খরচ লাগবে বলে ১ হাজার টাকা চায়।

তিনি বলেন, কাজ হতে হলে টাকা দিতে হবে। পরে ৫০০ টাকা দিতে বাধ্য হই।

অভিযুক্ত পুলিশে এসআই হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার থানায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলমের সঙ্গে কথা বললে তিনি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.