Doinik Bangla Khobor

সবাই মিলে করব কাজ, গড়ব মোদের বাংলাদেশ গণসংবর্ধনায় তারেক রহমান

বিশেষ প্রতিবেদক :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “সবাই মিলে করব কাজ, গড়ব মোদের বাংলাদেশ।” দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরার পর প্রথম বড় গণসমাবেশে তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর কুড়িল-বিশ্বরোড সংলগ্ন ৩০০ ফিট সড়কে বিএনপির আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবেগঘন ভাষণে তারেক রহমান বলেন, “আজ সময় এসেছে সবাই মিলে দেশ গড়ার। এই দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছে, তেমনি সমতলের মানুষও আছে। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের যেকোনো মূল্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আমরা দেশে শান্তি চাই।”
তিনি বলেন, দল, ধর্ম কিংবা জাতিগত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ দেশের সব মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারে। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “সবাই মিলে আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই— সবাই মিলে করব কাজ, গড়ব মোদের বাংলাদেশ।”
বক্তৃতায় বারবার সহনশীলতা, সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারেক রহমান। পাহাড় ও সমতলের মানুষের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই দেশ সবার, তাই বিভাজন নয়— ঐক্যই হবে এগিয়ে যাওয়ার মূল শক্তি।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, “যে মানুষগুলোর জন্য আমার মা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই মানুষগুলোকে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারি না।”
তিনি আরও বলেন, তার কাছে রাজনীতি ক্ষমতা অর্জনের বিষয় নয়, বরং মানুষের অধিকার রক্ষা ও দায়িত্ব পালনের একটি মাধ্যম।
দেশে ফেরার সুযোগ পাওয়ায় মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “আমি প্রথমেই মহান রব্বুল আলামিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মাতৃভূমিতে ফিরতে পারার জন্য তাঁর দোয়াতেই আমি এসেছি।” দীর্ঘ প্রবাসজীবনের পর জন্মভূমিতে ফেরা তার জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন অধ্যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে লন্ডন থেকে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তারেক রহমান। পরে সেখান থেকে ঢাকায় এসে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থকের ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে মানুষ হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে ৩০০ ফিট সড়কজুড়ে দেখা যায় লক্ষাধিক মানুষের ঢল। বিএনপির পতাকা, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নেতাকর্মীরা নানা স্লোগানে মুখর করে তোলেন পুরো এলাকা। বক্তৃতার সময় বারবার উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে জনতা।
তারেক রহমান তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা দেশে শান্তি চাই, শৃঙ্খলা চাই। সবাই মিলে যদি দেশকে ভালোবাসি, তাহলে এই দেশ হবে উন্নত, এই দেশ হবে মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।” তিনি জানান, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, ন্যায়ভিত্তিক ও সমঅধিকারসমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলাই তার রাজনীতির মূল লক্ষ্য।
বক্তৃতার শেষাংশে তিনি আবারও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন— “সবাই মিলে করব কাজ, গড়ব মোদের বাংলাদেশ।”
তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে বিএনপির নেতাকর্মীরা নতুন রাজনৈতিক যাত্রার সূচনা হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার দেশে ফেরা দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তবে এর প্রভাব কতটা এবং কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, তা নির্ভর করবে আগামীর রাজনৈতিক কর্মকৌশলের ওপর।