মোঃআরিফুল ইসলাম মুরাদ :
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সাউদপাড়ায় দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার পর এক পক্ষের বিরুদ্ধে গরু, নগদ টাকা ও মালামাল লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উপজেলার সাউদপাড়া গ্রামের মোঃ আব্দুছ সোবাহানের স্ত্রী মোছাঃ জমিলা খাতুন (৬৫) বাদী হয়ে সম্প্রতি ধর্মপাশা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত (২৩অক্টোবর) বুধবার প্রথম দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে (২৪অক্টোবর) বৃহস্পতিবার স্বর্ণালংকার, গরু, নগদ টাকা ও মালামাল লুটের ঘটনা ঘটে।
মামলার অভিযোগে, মোঃ পারভেজ (৪০), মোঃ মতিবুর (৩৬), আতাবুর (২৮), মোঃ লাল মিয়া ওরফে লালতু (৬০), আল আমিন (৩০), নুর আলম (২৫), মাসকু মিয়া (২২), মোঃ ইব্রাহিম (৬০), তারা মিয়া (৩৫), তোতা মিয়া (৩০), মোছাঃ হেলেনা বেগম (২৫), মোছাঃ ময়না (৪০), সাহেদ আলী (৫০), আপ্তর জামান (৪৫) নিজাম (৩০), সফিক (২৭), জয়নাল (২৫), হযরত আলী (২৯) সহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।আদালতের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মামলায় বর্ণিত আসামীগণ পরস্পর গনিষ্ঠ আত্মীয় ও একদল ভূক্ত, উগ্র, দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনিয়া ও ডাকাত প্রকৃতির আইন অমান্যকারী লোক। পক্ষান্তরে অভিযোগকারী একজন সহজ সরল অত্যন্ত নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় আইনমান্যকারী অসহায় মহিলা। আসামীগণ দীর্ঘদিন যাবত এলাকার বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ সংগঠিত করিয়া আসিতেছে। আসামীগণ প্রায় সময়ই অভিযোগকারীদের পারিবারিক কবরস্থানের উপর আসামীদের গরু বাধিয়া রাখিত। এ ব্যাপারে বিচার সালিশ হওয়ায় আসামীগণ অভিযোগকারীদের উপর আক্রোশ্বাদিত ছিল।ঘটনার ১ম তারিখ ও সময়ে আসামীদের গরু অভিযোগকারীদের কবরস্থানে বাধিয়া রাখিতে গেলে ১নং জখমীর স্বামী ও অভিযোগকারীর স্বামী প্রতিবাদ করায় সকল আসামীগণ হাতে দা, লাঠি, লোহার রড ইত্যাদি অস্ত্রাদি নিয়া পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে বেআইনী অনায়ায় মিলিত হইয়া ৩নং আসামী মোঃ লাল মিয়া ওরফে লালতু মিয়া হুকুম দিয়া বলে যে, শালার পুতেরে শেষ করিয়া ফেল। উক্ত হুকুমের সাথে সাথে ১নং আসামী মোঃ পারভেজ তার হাতে থাকা দা দিয়া খুন করার উদ্যেশ্যে ১নং জখমী স্বাক্ষী ও অভিযোগকারীর স্বামী সোবাহানের মাথার মাঝখানে কোপ মারিয়া মারাত্বক কাটা ও রক্তাক্ত জখম করে। এতে অভিযোগকারীর স্বামী মাটিতে পড়িয়া গেলে অন্যান্য সকল আসামীগণ তাদের হাতে থাকা লোহার রড ও লাঠি দ্বারা তাহার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বাইরাইয়া মারাত্বক নীলা ও ফুলা জখম করে। অভিযোগকারীর স্বামীকে বাঁচানোর জন্য ২নং জখমী স্বাক্ষী সেকান্দর আগাইয়া আসিলে ২নং আসামী মোঃ মতিবুর তাহার হাতে থাকা লোহার রড দ্বারা প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে ২নং জখমী স্বাক্ষীর মাথার বাম পার্শ্বে বারি মারিয়া মারাত্বক ফাটা জখম করে। ১নং ও ২নং জখমী স্বাক্ষীর ডাক চিৎকারে অন্যান্য স্বাক্ষীগণসহ অভিযোগকারী ঘটনাস্থলে গেলে সকল আসামীগণ তাদের হাতে থাকা লাঠি ও লোহার রড দ্বারা অভিযোগকারী সর্ব শরীরে বাইরাইয়া নীলা ও ফুলা জখম করে। আসামীগণ চলিয়া গেলে স্বাক্ষীগণের সহযোগিতায় ১ ও ২নং জখমী স্বাক্ষীগণকে কলমাকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়া ভর্তি করিয়া চিকিৎসা করে। জখমীদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় পরের দিন কর্তব্যরত ডাক্তার জখমীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন জখমীদের চিকিৎসা কাজে ব্যস্থ থাকায় ঘটনার ২য় তারিখ ও সময় সকল আসামীগণ আমাদের বসত বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করিয়া অভিযোগকারীর গোয়াল ঘর হইতে ১৪টি গরু জোরপূর্বক অন্যায় লাভের আশায় নিয়া যায়, যার আনুমানিক মূল্য ৯,০০,০০০ (নয় লক্ষ) টাকা। আসামীগণ অভিযোগকারীর বসত বাড়ি হইতে ৩০০ রাজহাঁস নিয়া যায় যার আনুমানিক মূল্য ৬,০০,০০০ (ছয় লক্ষ) টাকা, বিভিন্ন ধরণের ৫টি মেশিন নিয়া যায়, যার আনুমানিক মূল্য ৩,০০,০০০ (তিন লক্ষ) টাকা, ষ্টীলের আলমারী ভাঙ্গিয়া নতুন ঘর তৈরির জন্য রক্ষিত নগদ ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা নিয়া যায় ও আলমারীর ড্রয়ার হইতে তালা ভাঙ্গিয়া ৬ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়া যায়, যায় আনুমানিক মূল্য ৭,২০,০০০ (সাত লক্ষ বিশ হাজার) টাকা, নতুন ঘর তৈরির ২০ বান রঙ্গিন টিন জোরপূর্বক চুরি করিয়া নিয়া যায়, যাহার আনুমানিক মূল্য ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা। আসামীগণ মোট ৩২,২০,০০০ (বত্রিশ লক্ষ বিশ হাজার) টাকার বিভিন্ন মালামাল ও নগদ টাকা অভিযোগকারীর বাড়ি ঘর হইতে লুটপাট করিয়া নিয়া যায়। আসামীগণ যাওয়ার সময় হুমকি দিয়া যায় যে, এ ব্যাপারে কোন মামলা মোকদ্দমা করিলে অভিযোগকারীদেরকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা খুন করিয়া ফেলিবে। ঘটনার কথা এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিগণকে জানাইলে, গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ আপোষের চেষ্টা করায় ও জখমীদের চিকিৎসা কাজে ব্যস্থ থাকায় অভিযোগ করতে দেড়ি হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মধ্যনগর থানার ওসি মো. সজিব রহমান বলেন, আদালতের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ৬ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
আসামী মোঃ পারভেজ বলেন, এ ঘটনায় আহত হয়ে আমার বাবা মোঃ কাচা মিয়া মারা গেছেন। আমি আমার ভাই ও চাচা দের সাথে নিয়ে আমার বাবাকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যদি এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তা আমার জানা নাই। হউক আমি এর দাবী জানাচ্ছি।