Doinik Bangla Khobor

স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের মধ্যে দিয়ে আহসান উল্লাহ মাস্টারের মৃত্যু বার্ষিকী পালন

রবিউল আলম,গাজীপুর থেকে :
গাজীপুরের টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে।১৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দলীয় কার্যালয়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত’ শোক পতাকা জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, দলীয় নেতাকর্মীদের কালো ব্যাচ ধারণ, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ (এমপি), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক গাজীপুর ৫ আসনের সংসদসদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড আজমত উল্লাহ খান,গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ এম জাহিদ আল মামুন,গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল,১নং যুগ্ন আহবায়ক সাইফুল ইসলাম সহ আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্র লীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ শ্রমিক লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা গাজীপুর মহানগরীর ৩৯ নং ওয়ার্ড হায়দ্রাবাদে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শনিবার (০৭ মে)টঙ্গীর নোওগাঁও মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন,আমার বাবার খুনিদের বিচার চাই। যারা আমার বাবাকে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে আমাকে পিতৃহারা করল, তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। যার পিতা-মাতা নেই তারাই শুধু বোঝে পিতা মাতার শূন্যতা। পিতা মাতার অভাব অপূরণীয়।

উল্লেখ্য,দেশবরেণ্য রাজনীতিক আহসান উল্লাহ মাস্টারের জন্ম ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর, গাজীপুর জেলার পূবাইল থানাধীন ৩৯নং ওয়ার্ডের হায়দরাবাদ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। মাতা বেগম রোসমেতুন্নেসা ও বাবা পীর সাহেব শাহ সূফি আবদুল কাদের পাঠান। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের পূবাইলের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষাজীবন শেষ করে টঙ্গী হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন।

১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর আহসান উল্লাহ টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি ওই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব আমৃত্যু যোগ্যতার সঙ্গে পালন করেন। আহসান উল্লাহ মাস্টার টঙ্গী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।

কিশোর বয়সেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা ঘটে আহসান উল্লাহ মাস্টারের। ১৯৬২-এ হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। রাজনীতির লড়াকু সৈনিক হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে উঠতে থাকে। তিনি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে রাজনীতি চালিয়ে যেতে থাকেন। পরবর্তীতে হয়ে উঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের অনুসারী।

দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করতে আহসান উল্লাহ মাস্টার মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ক্যান্টনমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার জন্য জনতাকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ডাক দেন বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘর ছাড়েন আহসান উল্লাহ মাস্টার। তবে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক হন এবং নির্যাতিত হন। আহত অবস্থাতেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পূবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন সংগঠন অন্তপ্রাণ মানুষ। তিনি ১৯৮৩ এবং ১৯৮৮ সালে পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও কার্যকরি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।২০০৪ সালের ৭ মে ঘাতকদের গুলিতে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।