গাজীপুরের টঙ্গীতে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ,অন্তত ১০ শ্রমিক ও ৫ পুলিশ সদস্য আহত

অন্যান্য

রবিউল আলম গাজীপুর থেকে :
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শর্টগানের গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাহিনীটি। ইট ছুড়ে চারটি কারখানা ভাঙচুর করেছেন শ্রমিকরা। পরে তিনটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ।

আহতদের মধ্যে ৮ শ্রমিকের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- শাহিনুর আক্তার, নুর মোহাম্মদ, মো. তাসলিমা, মো. জিয়া, মো. মনিরুল, সাফিনা আক্তার, মুক্তি আক্তার, মো. কামাল।

তাদের মধ্যে মুক্তি ও কামাল প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকিদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

টিভলি অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিক মুক্তি আক্তার বলেন, কারখানার ফিনিশিং সেকশনের রিপা আক্তারকে গত শনিবার লাঞ্ছিত করেন উৎপাদন ব্যবস্থাপক লুৎফর রহমান। রিপাকে কারখানা থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও দেন তিনি।

বিষয়টি জানাজানি হলে ওইদিনই শ্রমিকরা বিচারের দাবিতে উৎপাদন কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করে। পরে শ্রমিকরা মালিকপক্ষের কাছে ১২টি দাবি তুলে ধরেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, সোমবার শ্রমিকরা উৎপাদন কাজে যোগ না দিয়ে বাসায় চলে যান। কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সকালে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণার নোটিশ ফ্যাক্টরির সামনে টানিয়ে দেয়।

সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে এসে বন্ধের নোটিশ দেখে ক্ষুব্ধ হন। এ সময় তারা পাশের রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দিতে চাপ দিতে থাকেন। শ্রমিকদের বের করতে এক পর্যায়ে ওই কারখানার ইট-পাটকেল ছোড়েন।

পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পরে শ্রমিকরা বিসিক ফকির মার্কেটে জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ৩০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, ১০ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও ৬ রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। শ্রমিকরা যাওয়ার পথে পেট্রিয়ট ইকো লিমিটেড কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালায়।

এ অবস্থায় সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবিএস আর ফ্যাশন লিমিটেড ও রেডিসন অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

টিভলী অ্যাপারেলস লিমিটেডের মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, শ্রমিকের সঙ্গে অসাদাচরণের অভিযোগে ঘটনার দিনই উৎপাদন ব্যবস্থাপককে অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা তা সত্বেও কিছু অযৌক্তিক দাবি তোলেন।

তিনি বলেন, শ্রমিকরা উৎপাদন ব্যবস্থাপকের অপসারণ চেয়েছে আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু বহিরাগত কিছু শ্রমিক নেতা সাধারণ শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তাই বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ জানান, টিভলি অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানাগুলোতে ভাঙচুর চালায়। এতে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপরও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্প পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.