পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী শিবুলাল দাসকে অপহরনের রহস‍্য উদঘাটন।

অপরাধ

এস আল-আমিন খাঁন পটুয়াখালী থেকে :
পটুয়াখালীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শিবুলাল দাসকে অপহরন করে মুক্তিপন দাবি করার আসল রহস্য বের করেছেন পটুয়াখালী জেলা পুলিশ। জানা গেছে মুক্তিপনের টাকায় দক্ষিণবঙ্গের বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে চাওয়া ল্যাংড়া মামুন, মুফতি মামুনসহ ৪ অপহরনকারীকে পটুয়াখালী জেলা পুলিশের রিকুইজিশনের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি ডিবি পুলিশ সেই সাথে উদ্ধার করা হয়েছে অপহরনের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার ও মাদক।

মঙ্গলবার (১৯-এপ্রিল-২০২২ ইং) তারিখ দুপুর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিরপুর, ভাটারা এবং গুলিস্তান এলাকায় ডিবি গুলশান বিভাগের একাধিক টিম ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে (১).ল্যাংড়া মামুন @ মুফতি মামুন, (২).পিচ্চি রানা, (৩).জসীমউদ্দীন এবং (৪). আশিকুর রহমান।এসময় তাদের কাছ থেকে মুক্তিপন আদায়ে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, মোবাইল ফোন, গামছা এবং ৪০০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত (১১-এপ্রিল-২০২২ ইং) তারিখ রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে শিবু লাল দাস গলাচিপাস্হ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পাজেরো জীপ যোগে পটুয়াখালী শহরস্থ বাসায় ফেরার পথে ড্রাইভারসহ নিখোঁজ হন। পরে দূরের একটি পেট্রোল পাম্পের কাছাকাছি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাজেরো জীপটিকে উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশ।

অপহরনের পরিকল্পনা: পরিকল্পনা হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের কাছাকাছি ল্যাংড়া মামুনের গার্মেন্টস অফিসে। তাতে অংশ নেয় ল্যাংড়া মামুন, পিচ্চি রানা, পাভেল ও বিআরটিসির ড্রাইভার জসিম।পরে যোগ দেয় জসিম উদ্দিন মৃধার ভাই গাড়ির দালাল আশিক মৃধা। জানাগেছে ঢকা থেকে ১০ হাজার টাকা এডভান্স দিয়ে এক সপ্তাহের জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে আসা হয় সুদূর পটুয়াখালী। অপহরনের পর মুক্তিপণ দাবি, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ইত্যাদি অপারেশনাল কাজে ব্যবহার করার জন্য ঢাকার সাভার থেকে কেনা হয় পাঁচটি বাটন ফোন। বেশি দাম দিয়ে ইতোমধ্যে অন্যজনের নামে নিবন্ধনকৃত সিম কেনা হয় জেলা সদর থেকে। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয় একটি খেলনা পিস্তল, দুইটি সুইচ গিয়ার, তিনটি চাপাতি এবং গরু জবাই করার একটি বড় ছুরি। পরে একাধিক দিন রেকি করে ফিল্মি স্টাইলে রোমহর্ষক অপারেশন চালিয়ে গত (১১-এপ্রিল-২০২২ ইং) তারিখ রাত সাড়ে আটটায়।

অপারেশন যে ভাবে সম্পন্ন হয়-পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১১/০৪/২০২২ ইং তারিখ দুপুরবেলা পটুয়াখালী এয়ারপোর্টের কাছে মিলিত হয় অপহরনকারীরা। কার কোথায় কি দায়িত্ব তা নির্ধারন করে দেয় ল্যাংড়া মামুন এবং পিচ্চি রানা। ভিকটিমদের গতিবিধি মোবাইলে জানানোর জন্য পিচ্চি রানার মোটরসাইকেলে ল্যাংড়া মামুনকে নিয়ে চলে যায় গলাচিপা ঘাটে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ব্যারিকেড দেয়ার জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা হাইওয়ে রোডের শাঁখারিয়ার নির্জন জায়গায় একটা প্রাইভেট কার এবং একটা ট্রলি নিয়ে অবস্থান নেয় ৫ জন। ল্যাংড়া মামুনের নির্দেশে পূর্বেই একটি ট্রাক্টর ভাড়া করে ড্রাইভার বিল্লাল। ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া প্রাইভেটকারটি নিয়ে ড্রাইভার আশিক মৃধা, পাভেল, হাবিব, সোহাগ এই চারজন অবস্থান নেয়। ল্যাংড়া মামুনের সংকেত পাওয়ার পরপরই সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে ড্রাইভার বিল্লাল ট্রলিটি নিয়ে সুকৌশলে ভিকটিম শিবু দাসের প্রাডো জিপের সামনে আড়াআড়ি করে অবস্থান নেয়। পিছন থেকে অনুসরন করতে থাকা ড্রাইভার আশিক তার প্রাইভেট গাড়িটি দিয়ে ভিকটিমের গাড়ির পিছনে অবস্থান নিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলে । ট্রাক্টর এবং প্রাইভেটকার থেকে অপহরণকারীরা হুড়মুড় করে মুহূর্তেই উঠে যায় ভিকটিমের প্রাডো জীপে। আশিক প্রাইভেটকার ছেড়ে শিবু দাসের গাড়ির নিয়ন্ত্রন নেয়। গাড়িতে উঠেই বিল্লাল ,পাভেল, সোহাগ ,আশিক বেঁধে ফেলে ভিকটিমদ্বয়কে। গামছা, টিস্যু পেপার এবং স্কচ টেপ দিয়ে মুখ, হাত-পা বেঁধে চলতে থাকে চড়-থাপ্পড় কিল ঘুষি। সঙ্গে থাকা খেলনা পিস্তল ও ছোরা- চাকু দিয়ে ভয় দেখানো চলতে থাকে। বরগুনার আমতলী এলাকার গাজিপুরায় গিয়ে ভিকটিমের জিপ গাড়ি থেকে তাদেরকে তোলা হয় ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া কারটিতে।‌ সেখানে ভিকটিম দুইজনকে আরো ভালোভাবে বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ঢুকানো হয় । ইতোমধ্যে ভিকটিমের জীপটিকে আমতলীর একটি ফিলিং স্টেশনে ফেলে আসে। রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিকে ল্যাংড়া মামুন ও পিচ্চি রানা পটুয়াখালীর বাঁধঘাট এলাকায় ভিকটিমদের বহনকারী গাড়ি বুঝে নেয়। গাড়ি চালাতে থাকে ল্যাংড়া মামুন নিজেই। ল্যাংড়া মামুন সোজা নিয়ে যায় তার এইচ ডি রোডস্হ নিজস্ব মেশিনঘর কাম টর্চার সেলে। সেখানে সারা রাত রেখে নির্যাতন চালায়।আরো ভালো করে হাত মুখ পা বেধে বস্তায় ভরে অন্যান্য আরো মালামালের বস্তা সহ একটি অটোরিক্সায়উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এসপি কমপ্লেক্স সুপার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডের নিয়ে রেখে দিলে রাত অনুমান ১০.৩০ ঘটিকায় পুলিশ উদ্ধার করে। উল্লেখ্য যে অপহরণের দিন রাত ০১:৪৫ টায় রানার নির্দেশমতো বিল্লাল ভিকটিমের সিম থেকে ভিকটিমের স্ত্রীকে ফোন দিয়ে পরের দিন দুপুর ২ ঘটিকার মধ্যে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিতে বলে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং বিষয়টি পুলিশকে জানালে শিবু লালকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেয় অপহরনকারীরা।

ভিকটিম উদ্ধার: পরের দিন (১২-এপ্রিল-২০২২ ইং) তারিখ আনুমানিক রাত ১০.৩০ মিনিটের সময় ২৬ ঘণ্টা পরে হাত-পা এবং মুখ বাঁধা বস্তাবন্দি মুমূর্ষ অবস্থায় ভিকটিমদেরকে এসপি কমপ্লেক্স শপিং সেন্টারের আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে চোখ- মুখ, হাত-পা খুলে দিয়ে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.