সুচিএা রায় সখিপুর থেকে ফিরে :
নারী নির্যাতন-ধর্ষণ গর্হিত এবং পৈশাচিক অপরাধ। প্রাক ঐতিহাসিক যুগ থেকে নারী নির্যাতন-ধর্ষণের অপরাধ ঘটছে। বিজ্ঞানের বৈপ্লবিক উন্নতির যুগেও সেই অপরাধ বন্ধ হয়নি। শিশু নির্যাতন-হত্যা-ধর্ষণ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে শুধু নয় উপমহাদেশে এই পৈশাচিকতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রায়ই পত্রিকায় দেখা যায় ভারতের চলন্ত বাসে-ট্রেনে ধর্ষণের লোমহর্ষক ঘটনার খবর। সে ঘটনার প্রতিবাদে ঝড় উঠে। বাংলাদেশও সেই ঘৃন্য অপরাধের ঘটনা থেকে মুক্ত নয়। প্রগতিশীলতার নামে নীতি নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ, সভ্যতা-ভব্যতার শিক্ষা উঠে যাওয়ায় নারী নির্যাতন বেড়েই চলেছে। নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা বন্ধে সরকার নতুন আইন-প্রণয়ন করে কঠোর শাস্তির বিধান করেছে। কিন্তু সেই আইনকে ‘ফাঁদ’ হিসেবে ব্যবহার করছে কিছু নষ্ট মানুষ, অপরাধের মাধ্যমে আয় রোজগার করছে। তারা শত্রুকে ফাঁসানো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এই আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। আর স্বামী-স্ত্রীর বিরোধেও নারী নির্যাতন আইনকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা ঘটছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কেএম রেজাউল ফিরোজ রিন্টু বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় যৌনপীড়ন এবং ৯ (৪) খ ধর্ষণের চেষ্টা করা, এই দু’টি ধারায় আদালত কিংবা থানায় অভিযোগ আনতে কোন ধরনের চিকিৎসক সনদ কিংবা আলামতের প্রয়োজন হয় না। যে কারণে কোন দুষ্টচক্র যে কোন নারীকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে উক্ত ধারা দু’টির অপব্যবহার করার সুযোগ নিতে পারে এবং নিচ্ছে। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৪ এর স্পেশাল পিপি মোঃ ফোরকান মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ধরনের মামলার রায় দেন আদালত। তবে অধিকাংশ মামলায় দেখা যায় আসামিরা খালাস পান। সে ক্ষেত্রে বলা যায় এগুলো মিথ্যা মামলা। অনেক সময় দাম্পত্যকলহে অনেক স্ত্রী-স্বামীর বিরুদ্ধে ১১ (খ) ও ১১ (গ) ধারায় অভিযোগ এনে মামলা করেন। প্রমাণ হিসেবে মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের সাথে হলফনামা দাখিল করেন। কিন্তু এ ধরনের ৯০ শতাংশ মামলাই মিথ্যা বলে প্রমানিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা নিয়ে স্ত্রী-বিচ্ছেদ ঘটান। অনেক সময় যে কোনভাবে আপস করেন।
শত্রু কিংবা প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর এখন মোক্ষম অস্ত্র হয়ে গেছে নারী নির্যাতন কিংবা ধর্ষণ মামলা। এ ধরনের মামলার বাদী হতে দুষ্টু নারীদের একটি সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে। তাদের মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন অনেক নিরাপরাধ ব্যক্তি। ধর্ষণ, কিংবা ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়েরের প্রাক্কালে কোন ধরনের আলামত অথবা চিকিৎসা সনদের দরকার পড়ে না। যে কারণে নারী নির্যাতনের মামলায় ফাঁসিয়ে কেউ কেউ ঘায়েল করেছেন তার শত্রু পক্ষকে। আবার ধর্ষণের শিকার দাবিদার নারী আপোষের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারায় (মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণিত হলে) যথাযথ প্রয়োগ হয় না বলে এ ধরনের মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের মামলায় পুলিশের তদন্তের প্রক্রিয়ার আরো হালনাগাদ জরুরী। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেছেন, ধর্ষণের শিকার নারীর শরীর কিংবা স্পট থেকে আলামত সংরক্ষণের পর তা পরীক্ষা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ টেস্টেই বেরিয়ে আসবে প্রকৃত সত্যি। এতে করে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পাবেন নিরাপরাধ ব্যক্তি।
শরীয়তপুরের সখিপুরের আরশীনগর দক্ষিন ফেজির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি ইমরান হোসেন (২৫) ২৭ রমজানের সময় সেহরি খেয়ে বিদ্যালয়ের কাছে গেলে মানুষের মতো একজনকে দেখতে পান তার বিদ্যালয়ের উপরে দাড়ানো। তখন সে তার পরিচিত লিটন হাওলাদার(২৬) কে দেখতে পেয়ে ডাক দেন। লিটন হাওলাদার কে সাথে নিয়ে ছুটে যান স্কুলের ভবনে। সেখানে গিয়ে তাদের স্কুল পড়ুয়া ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোনিয়া(১৫) কে দেখতে পান। তখন স্কুলটির দপ্তরি স্কুলটির বিভিন্ন জিনিসপত্র ঠিক ঠাক আছে কিনা সেদিকে লক্ষ করেন। পরে চুরি করতে আসা ভোর রাতে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির বিরুদ্ধে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের কাছে নালিশ দিলে মুরব্বিরা তার বিচার করার নামে মেয়ের চুরির নাম ঢাকতে গিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে ইমরান হোসেন কে ফাসিয়ে দেন।
স্থানীয়রা জানান, সোনিয়া ঐ এলাকার আশে পাশে রাত দুপুরে ঘুরে বেড়ায় আর বিভিন্ন বাড়ি সহ নানান স্থানে চুরি করে বেড়ায়। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি চুরির দরবারের কথা ও শুনতে পাওয়া গেছে।
ইমরানের মা বলেন- আমি আওয়ামীলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী।আমার ছেলে স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম।তাছাড়া সে একটি স্কুলের দপ্তরি। আমার ছেলে একেবারে সাদা মনের মানুষ। কারো সাথে কোন ঝগড়া বিবাদে নাই। আমার ছেলের বিরুদ্ধে এই হয়রানিমূলক মামলার ন্যায্য বিচারের জন্য আমরা সখিপুর থানার ওসি,শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করি। প্রশাসন আমার ছেলের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা হয়রানীমূলক মামলার ন্যায্য বিচার করবে।যদি প্রশাসনের কাছে মনে হয় আমার ছেলে দোষী তাহলে আইন আমার ছেলের ব্যবস্থা করবে।নতুবা আমার ছেলের নামে মামলা দিয়ে যারা এই হয়রানি করিয়েছে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনবে।
০৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোকন বেপারী বলেন – ইমরান হোসেনের মতো একটা ছেলে বর্তমান যুগে খুঁজে পাওয়া যায় না। অত্যন্ত ভালো একটি ছেলে। মসজিদের ইমামতি করার পাশাপাশি স্কুলের দপ্তরির চাকুরী ও ঠিক রেখেছে। সংসারের হাল ধরেছে। আমার জানামতে, এই মামলাটি সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা। আমি সহ আমাদের এই গ্রামবাসী এই ঘটনাটি শুনে আশ্চর্য হয়ে গেছে। আমি চাই, ইমরান আইনের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মুক্ত হোক।তাছাড়া যারা এই ইমরানের মতো নিরীহ মানুষদের যারা হয়রানি মূলক মামলা দিয়ে হয়রানি করছে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।
সখিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হক বলেন- ইমরানের বিরুদ্ধে আনীত মামলার প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।