মনিরুজ্জামান জুলেট :
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার রাত বারটার দিকে পাঁচ নং পোল্ডারের পশ্চিম দূর্গাবাটি এলাকার সাইক্লোন শেল্টার সংলগ্ন অংশে প্রায় দুইশ ফুট বাঁধ খোলপেটুয়া নদীনে বিলীন হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এদিকে ভাঙন কবলিত অংশ দিয়ে নদীর সাথে সমানতালে লোকালয়ে জোয়ার-ভাটা চালু থাকায় প্রায় সাত হাজার বিঘা জমির চিংড়ি ঘেরসহ শত শত মিষ্টি পানির পুকুর লবন পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ার পাশাপাশি তিন শতাধিক বাড়ি-ঘরে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দারসহ পাউবো’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে টানা কয়েক বছর ধরে দূর্গাবাটিসহ আশপাশের এলাকার বাঁধ ভাঙতে থাকার পরও গত কয়েক মাস ধরে পাশর্^বর্তী নদী থেকে ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলনের কারনে সেখানকার বাঁধ ক্রমাগত ভাঙছে। দু’এক দিনের মধ্যে ভাঙন কবলিত অংশের বাঁধ মেরামত সম্ভব না হলে সামনের বড় জোয়ারে পাশর্^বর্তী গ্রামগুলো তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে হবে বলেও তাদের দাবি।
উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার সকালে আকস্মিকভাবে পশ্চিম দূর্গাবাটি এলাকার বাঁধের প্রায় ষাট ফুট জায়গা পাশের খোলপেটুয়া নদীতে ধসে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে পাউবো কতৃপক্ষ টানা দু’দিন ভাঙন কবলিত অংশে বালু/মাটি দিয়ে ভাঙনের বিস্তার ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বুধবার রাতের জোয়ারে একই অংশ হতে প্রায় দুইশ ফুট বাঁধ নদীতে বিলীন হলে জোয়ারের পানিতে পশ্চিম ও পুর্ব দূর্গাবাটিসহ ভামিয়া, পোড়াকাটলা, আড়পাঙ্গাশিয়া আর মাদিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়।
দূর্গবাটি গ্রামের নীলোৎপল মন্ডল জানায় বুধবার রাতের জোয়ারে সাইক্লোন শেল্টারের পাশর্^স্থ বাঁধ নদীতে ধসে যাওয়ায় তার চিংড়ি ঘের ও মিষ্টি পানির পুকুর ভেসে গেছে। একই গ্রামের নিরঞ্জন মন্ডল ও পোড়াকাটলা গ্রামের নীলকান্ত রপ্তান জানান রাতের জোয়ারের পানিতে শতাধিক চিংড়ি ঘের ভেসে গেলেও বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ারে ছোট বড় হাজারের বেশী চিংড়ি ঘের আর মিষ্টি পানির পুকুর তলিয়ে গেছে। এছাড়া অনেকের বাড়ি এমনকি বসত ঘরে পর্যন্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে বলে জানায় ভামিয়া গ্রামের গৃহবধু অনুরাধা মন্ডল আর সাবিত্রী দেবী।
স্থানীয়রা জানিয়েছে বুধবার রাতের পর বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ারের পানি ভাঙন কবলিত অংশ দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় সমগ্র এলাকা নদীর সাথে একাকার হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভাঙন কবলিত অংশের পাশে নুতন করে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধের বাইরের অংশের চর দেবে যাওয়ার দরুন সেখানে বাঁধ দাড়াচ্ছে না দাবি করে তারা দ্রুত বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি পাশের নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য ও মাদিয়া গ্রামে বসবাসকারী ডালিম কুমার ঘরামী জানান, বুলবুল ও আম্পান এর ক্ষয়ক্ষতি এখনও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এর মধ্যে বুধবারের ভাঙন আমাদের ঘের-ভেড়ী তলিয়ে দিয়ে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত বাঁধ মেরামতের আর্জি জানিয়ে বলেন, নদীর লবন পানিতে গোটা এলাকা তলিয়ে যাওয়াতে বুধবার সকাল থেকে গোটা এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার তীব্র খাবার পানির সংকটে পড়েছে।
সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আাবুল খায়ের জানান, স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ভাঙন কবলিত অংশের ভিতর দিয়ে রিং বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চলছে। সংলগ্ন অংশের নদীর তলদেশে স্কাউরিং এর মাত্রা বেশী বিধায় সেখানকার বাঁধ বার বার ভাঙছে