ডেস্ক রিপোর্ট :
বিদেশ গমনে যাত্রীকে ৭২ ঘণ্টা আগের করোনা নমুনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ নিয়ে বিমানে উঠতে হয়। এরই মধ্যে সৌদি আরব, দুবাই ও যুক্তরাজ্যে গমনের সময় যাত্রীর সাথে নেওয়া নেগেটিভ সনদ পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেটি ভুয়া। এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র বিদেশ গমনেচ্ছুক যাত্রীদের করোনা নমুনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দিচ্ছে। যাত্রীরা কিভাবে ভুয়া সনদ সংগ্রহ করে বিমানবন্দর পর্যন্ত গেলেন তা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে নতুন একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনাটি তদন্ত করে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে ১১ জন আর পুলিশের হাতে দুজন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মিলেছে চক্রের আরো অর্ধশতাধিক সদস্যের নাম। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রাঘব বোয়ালও আছেন।
আবার এসব ভুয়া সনদ নিয়ে অনেক যাত্রী হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অতিক্রম করে বিদেশে চলে গেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের যাত্রীদের বেশ কয়েকটি দেশের বিমানবন্দরে নেমে পুনরায় পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। গত এপ্রিল মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়া যাত্রীদের ৩৩ জনের করোনা নমুনার পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এরই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর আগে গত বছর আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকোজি হেলথ কেয়ারের জাল সনদ নিয়ে ইতালি যাওয়ায় পর বেশ কয়েকজন যাত্রীর করোনা নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। ওই ঘটনায় ওই সময় ইটালি বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সারাদেশে করোনার ভুয়া সনদ দিতে ৪০টি চক্র সক্রিয়
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মাঈন বলেন, করোনা সনদ জালিয়াতির অভিযোগে এর আগে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. শাহেদ ওরফে শাহেদ করিম, জেকোজি হেলথ কেয়ারের ডা. সাবরিনাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু তাতেও এ নিয়ে জালিয়াতি থামেনি। নতুন করে আরো অনেক জালিয়াত চক্র গড়ে উঠেছে রাজধানীসহ সারা দেশে। তাদের ধরতে র্যাব তৎপর আছে।
র্যাব জানায়, করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির ঘটনায় সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, আল-জামি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্টিমজ হেলথকেয়ার বিডি লিমিটেড ও মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে (মিরপুর ব্রাঞ্চ) কালো তালিভুক্ত করে বন্ধ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে মহাখালীতে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ পরিচালিত নমুনা সংগ্রহের বুথের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে কেউ যেন আর প্রতারণা করতে না পারে, সেদিকে নজরদারি করছে র্যাব।
সারাদেশে করোনার ভুয়া সনদ দিতে ৪০টি চক্র সক্রিয়
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশে অন্তত ৪০টি জালিয়াত চক্র আছে, যারা করোনা সনদ নিয়ে কারসাজি করে থাকে। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ২২টি। তাদের সঙ্গে অর্ধশতাধিক দালালচক্র কাজ করছে। তারা করোনা নমুনার কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই নেগেটিভ সনদ দিচ্ছে। চক্রের ওই সব সদস্যের পাশাপাশি করোনা টেস্ট রিপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত চারটি প্রতিষ্ঠানসহ এই প্রতারণামূলক কাজে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে করোনা সনদ জালিয়াত চক্রের দুই সদস্য মনির হোসেন (৩৭) ও রফিকুল ইসলাম ওরফে রুবেল (২৪) কে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে একটি মনিটর, একটি প্রিন্টার, একটি সিপিইউ, একটি কি-বোর্ড ও দুটি নকল টেস্ট রিপোর্ট উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের অপারেশনের জন্য করোনার পজিটিভ রিপোর্ট পরিবর্তন করে তারা নেগেটিভ রিপোর্ট তৈরি করতেন। ক্যান্সার আক্রান্ত একজন রোগীর অপারেশন করার জন্য দুই হাজার টাকার বিনিময়ে এর আগে তারা একটি করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট তৈরি করে দেন। পরে ঢামেকের নাক কান গলা বিভাগে রিপোর্টটি নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ রিপোর্টটি ভুয়া বলে শনাক্ত করে।
সারাদেশে করোনার ভুয়া সনদ দিতে ৪০টি চক্র সক্রিয়
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধান করে সত্যতা পেয়ে চারটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে অবহিত করেছি