নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদসহ সংগঠনটির অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র-যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ও ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খানের মধ্যে।
বেশ কয়েকবার কর্তৃত্বের বিষয় নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ তৈরী হলেও প্রথমবার প্রকাশ্যে এসেছে এ দ্বন্ধ। শুক্রবার রাতে নুরুল হক একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেনকে বহিষ্কার করেন। তবে নুরের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাখ্যান করে রবিবার ( ৪ জুলাই) নুরের সমন্বয়ক পদকে অস্বীকার করা হয়।
নুরুল হক নূর নিজেকে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ দাবি করে শনিবার মধ্যরাতে ফেসবুকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। শুক্রবার রাতে দেয়া নুরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে’ কমিটি গঠন করতে যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হানিফকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়। এরপর পাল্টা এক বিজ্ঞপ্তিতে মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে নুরুল হক নূরের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার এখতিয়ার নেই। ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের “সমন্বয়ক” পদবি ব্যবহার করায় নুরের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই মর্মে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।’ রাশেদ বলেন, ২ জুলাইয়ের সেই যৌথ সভায় তিনি নিজে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির ‘অনেকে’ উপস্থিত ছিলেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের এক নেতা বলেন, নুর এবং রাশেদের মধ্যে সংগঠনের কর্তৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুযুদ্ধ চলে আসছিলো। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা কমিটি প্রদানের সময় এসব বিষয় নিয়ে দ্বন্ধ তৈরী হতো। তবে এ দ্বন্ধ যতটুকু না অর্থনৈতিক তার চাইতে বেশী কর্তৃত্বের। সাম্প্রতিক ঘটনা কর্তৃত্বের টানা-পোড়নের কারণেই হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে রাশেদ খান বলেন, তেমন কিছু হয়নি, আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। নুর বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলো। বিজ্ঞপ্তির সিদ্ধান্ত সাংগঠনিকভাবে না হওয়ায় ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আজকের আমাদের সভা ছিলো, সেখানে নতুন করে সমন্বয়ক পদ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের কমিটি বহাল থাকবে। এ কমিটি চলতি মাসের মধ্যে নতুন কমিটি দিবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নুর-রাশেদ বললেন, ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল হক বলেন, আমাদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। আজকে আবার সংগঠনের সভা হয়েছে। সভায় আমরা রাশেদ খান এবং সোহরাব হোসেনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়েছি। রাশেদ খানের পাল্টা বিবৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে। আমরা এসব সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
নুর জানান, ছাত্র অধিকার পরিষদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আমরা গণতান্ত্রিকভাবে নতুন কমিটি প্রদান করবো। ওই কমিটির মাধ্যমে একেবারে নতুনভাবে আমরা কাজ শুরু করবো।
দলে ভাঙনের চেষ্টা রাশেদের:
ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদে থেকে রাশেদসহ অন্যরা কীভাবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন জানতে চাইলে নুর বলেন, ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি চ্যাট গ্রুপে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা, বিশেষ করে আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেন কিছু স্পর্শকাতর কথা বলেছে। যেখানে দলে ভাঙন সৃষ্টি ও পারস্পারিক দ্বন্দ্ব তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। সেগুলো আবার সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমরা মনে করছি, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর চ্যাটিংয়ের জন্য কমিটি বিলুপ্ত করা সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাব। নুরের কথায় বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করছি।