ঢাকার আশুলিয়ায় লকডাউনেও থেমে নেই চাঁদাবাজি!নেপথ্যে ইউপি সদস্য বকুল

অপরাধ

সোহেল রানা,সাভার থেকে :
মহামারি করোনায় যখন স্থবির গোটা পৃথিবী, তখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজরা। কেউ দিনের পর দিন জনপ্রতিনিধির আড়ালে বিভিন্ন কৌশলে করছেন চাঁদাবাজি। কেউবা চাঁদাবাজি করছেন অদৃশ্য শক্তির ছায়াতলে থেকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পরিবহন চাঁদাবাজি। তবে বেশিরভাগ চাঁদাবাজ সক্রিয় হয়েছে নিষিদ্ধ ইজিবাইক ঘিরে। সাভারের আশুলিয়াতেও এই ইজিবাইক থেকে নেওয়া হচ্ছে প্রকাশ্যে চাঁদা।

নরসিংহপুর-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়কটির প্রধান পরিবহন হলো ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও ইঞ্জিন চালিত মহেন্দ্র গাড়ি। মহাসড়কে নিষিদ্ধ হওয়ায় এই সড়কে প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক ইজিবাইক চলতো। তবে চাঁদাবাজদের অত্যাচারে তা কমে এখন প্রায় তিন শতাধিক ইজিবাইক চলাচল করছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাভারের আশুলিয়া থেকে গাজীপুরে দ্রুত চলাচলের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে নরসিংহপুর-কাশিমপুর বাইপাস সড়কটি। তবে এই সড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পরিবহন হিসবে বেঁছে নিতে হবে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক। কিন্তু এই সড়কে ইজিবাইক চলতে হলে প্রতিদিন চাঁদা গুণতে হবে ৫০ টাকা। আর প্রথম দিন দিতে হবে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। একজন জনপ্রতিনিধির পক্ষে এই টাকা সংগ্রহ করেন রাসেল ও সাগর নামের দুই যুবক। এছাড়া আলাদা দুই জনকে প্রতিদিন দিতে হয় ১০ টাকা ও ৫ টাকা করে মোট ১৫ টাকা। জিপির নামে ১ দিন ইজিবাইক চললে চাঁদাবাজদের দিতে হয় ৬৫ টাকা। লকডাউনেও ছাড় নেই। প্রতি মাসে শুধু ইজিবাইক থেকেই চাঁদা তোলা হচ্ছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা।

স্থানীয়রা জানান কয়েকটি চা’য়ের দোকানে সাগর আর রাসেল বসে চা পান করে আর চালকের কাছ থেকে চাঁদার টাকা তোলে। প্রতিদিন সকালে এসে এই চাঁদার টাকা উঠায় তারা। সকালে কোন ইজিবাইক থেকে যদি চাঁদা তোলা বাদ পরে সেগুলো আবার বিকেলে উঠায়। সবাই জানে এই চাঁদা বকুল মেম্বর উঠায়। কিন্তু কেউ বলে না।

সড়কে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক বলেন, আমার নাম ও ছবি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে এই সড়কে আর গাড়ি চালাতে পারবো না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমার বাবা ইজিবাইক ভর্তির সময় দেড় হাজার টাকা দিয়েছেন। তখনই তারা বলে দিয়েছে এই রোডে ইজিবাইক চালালে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দিতে হবে। প্রতিদিন সাগর ও রাসেল নামের দুইজন এই চাঁদার টাকা উঠান। কোন দিন মিস করে না তারা। লকডাউনের মধ্যেও চাঁদাবাজি করছে তারা। এসবের ভিডিও বক্তব্য প্রতিবেদকের সংরক্ষণে রয়েছে।

একই অভিযোগ অপর ইজিবাইক চালকের। তার দাবি সারাদিন কোন ভাড়া না পেলেও তাদের চাঁদার টাকা দিতে হয়। বকুল মেম্বর এই ওয়ার্ডের মেম্বর নয় তার পরেও তিনি সাগর আর রাসেলের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করেন। এর আগে অনেক সাংবাদিক এসেছিল শুধু ভিডিও করে নিয়ে যায়। কোন খবর প্রকাশ করেন না। খবর প্রকাশ করলে আমরা অন্তত একটু বাঁচাতাম।

এব্যাপারে কথা হয় চাঁদাবাজ রাসেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, এধরনের কোন কাজ হয় না। কোন ধরনের চাঁদা তোলা হয় না। তাদের চাঁদা তোলার ভিডিও সংরক্ষণে আছে আপনি মিথ্যে বলছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ষড়যন্ত্রের দোহাই দিয়ে পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এই চাঁদাবাজির মুলহোতা আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য বকুল মেম্বর। তিনি নির্বাচিত ইউপি সদস্য। তবে অভিযোগ আছে যখন এই সড়কে তেমন গাড়ি চলত না, সড়কের অবস্থা খারাপ ছিল তখন থেকেই তিনি চাঁদাবাজি করেন। এব্যাপারে ইউপি সদস্য বকুল মেম্বরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টা আমি জানি না। তবে অনেকবার সেখানকার চাঁদাবাজদের ধরে বিতাড়িত করা হয়েছে। আর আমি ওই দিকে যাই না। তিনি বলেন, এই সড়কে দুই থেকে আড়াইশ ইজিবাইক এখন চলে না। অটোরিকশা ওয়ালারা তো অনেক কিছুই বলতে পারে। সাগর আর রাসেলের মাধ্যমে তিনি চাঁদা তোলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাগর তো স্ট্যান্ডেই নাই কয়েক দিন ধরে, আর রাসেল তো গাজিপুর স্ট্যান্ডে। হয়তবা কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলেছে।

তিনি আরও বলেন, এলাকার মধ্যে সব লোকই আমার। আমার কথা বলে একটা কিছু করবে এই কলিজা এখনো হয় নাই। সামনে আমার নির্বাচন অনেক জনই আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে। ওই ওয়ার্ডও আমার না। এই কাজে আমি ওখানে যাবো না। এতো দুর আমার যাওয়ার দরকার নাই। আমি রাস্তাঘাটে একটু মাটিমুটি ফেলাই খাই এটাই আমার যথেষ্ট।

এব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.